নিউ ইয়র্ক, ২০ জুলাই : জননন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের মরদেহ দ্রুত বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা চলছে। নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় শুক্রবার বাদ জুমা জ্যামাইকার মুসলিম সেন্টারে প্রথম নামাজে জানাযা অনুষ্ঠিত হবে। শুক্রবার রাতের বিমানে তার মরদেহ দেশের উদ্দেশ্যে পাঠানো হবে বলে মরহুমের পরিবার ও জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের কর্তৃপক্ষ সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বাংলাদেশ সময় রাত ৩টা ৩৪ মিনিটে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনের পাঠানো এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়েছে।
এখন নিউ ইয়র্কে আছেন মরহুমের স্ত্রী ও অভিনেত্রী মেহের আফরোজ শাওন, ভাই অধ্যাপক জাফর ইকবাল ও শাশুড়ি তহুরা আলী এমপি। আর ঘনিষ্টজনের মধ্যে আছেন প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম।
হুমায়ূন আহমেদ ক্যান্সার নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে তার।
বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ১১টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।
লেখকের বয়স হয়েছিল ৬৪ বছর।
বৃহদান্ত্রে ক্যান্সার ধরা পড়ার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে চিকিৎসার জন্য নিউ ইয়র্কে যান হুমায়ূন আহমেদ। সেখানে মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটরিং ক্যান্সার সেন্টারে চিকিৎসা নিতে শুরু করেন তিনি।
এরপর দুই পর্বে মোট ১২টি কেমো থেরাপি নেয়ার পর গত মাসে বেলভ্যু হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের প্রধান ডা. জেইন এবং ক্যান্সার সার্জন জজ মিলারের নেতৃত্বে হুমায়ূন আহমেদের দেহে অস্ত্রোপচার হয়।
এর মধ্যে তিনি দেশেও এসেছিলেন। কিছুদিন থেকে তিনি আবার আমেরিকায় যান।
হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যু সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে প্রবাসী বাঙালিদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে আসে। মিডিয়াকর্মী ও প্রবাসী বিশিষ্টজনেরা হাসপাতালে ছুটে যান।
হুমায়ূন আহমদের মৃত্যুতে যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদের গভীরভাবে মর্মাহত এবং শোকাহত। রাষ্ট্রদূত তার শোকবার্তায় বলেন, দেশ তার এই মৃত্যুতে এক বরেণ্য সন্তানকে হারাল যা দেশের অপূরণীয় ক্ষতি। রাষ্ট্রদূত কাদের তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সকল সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন এবং পরম করুণাময়ের কাছে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. দীপু মনি রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরকে তার শোক ও সমবেদনা শোকাহত পরিবারকে জানানোর জন্য অনুরোধ করেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ দূতাবাসের সকল কর্মকর্তা এবং কর্মচারী তাৎক্ষণিকভাবে এক শোকসভার আয়োজন করে। এই শোকসভায় উল্লেখ করা হয়, হুমায়ুন আহমেদের মৃত্যুতে দেশ এক অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হলো। শোকসভায় এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফেরাত কামনা করা হয়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে বলেছেন, এমন বরেণ্য লেখকের অভাব সহজে আর পূরণ হবার নয়। হুমায়ুন আহমেদ তার সাহিত্য কর্মে যুব-পাঠকদের মনযোগ আকর্ষণ করতে পেরে একটি পাঠক শ্রেণী গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন, যে কথা আজ সকলের মুখে ঘুরে-ফিরে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সভাপতি ড. সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক সাজ্জাদুর রহমান সাজ্জাদ এক শোক বার্তায় হুমায়ূন আহমেদের মৃত্যুতে গভীর শোক ও তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছেন। তারা বলেন,বাঙালি জাতি তাকে হারিয়ে আজ শোকাভিভূত।
হুমায়ূন আহমেদ ইন্তেকালে ওয়াশিংটনেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওয়াশিংটন প্রবাসের সর্বত্রই আলোচিত হচ্ছে এই নিয়ে। সবাই বলছেন বাংলা সাহিত্যের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল।
জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ ইন্তেকালে শোক প্রকাশ, দূতাবাসের ডেপুটি চিফ জসীম উদ্দিন, লেখক সাংবাদিক হারুন চৌধুরী, খবর ডট কম সম্পাদক শিব্বীর আহমেদ, ভয়েস অব আমেরিকার রোকেয়া হায়দার, সরকার কবির উদ্দীন, আনিস আহমেদ, দিলারা হাশেম, ফ্রেন্ডস এন্ড ফ্যামেলির আবু রুমি, আক্তার হোসাইন, একতারা’র শেখ মাওলা মিলন, আরিফুর রহমান স্বপন, সুরবিতানের কামরুল ইসলাম কামাল, বুলবুল আক্তার, বিসিসিডিআই সভাপতি মিজানুর রহমান ভুঁইয়া, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা ড. খন্দকার মনসুর, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামীম চৌধুরী, পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন পরিষদের কনভেনার সাদেক এম খান, প্রমুখ। ড. জাফর ইকবাল তার পরিবারের পক্ষ থেকে হুমায়ূন আহমেদের রূহের মাগফেরাত কামনায় সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।