‘রিটায়ার্ড সিভিল অফিসার্স ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তুলে বিপদে পড়েছেন অর্ধশতাধিক সাবেক সিনিয়র আমলা। দেশের প্রশাসনের কেন্দ্রস্থল সচিবালয়েই শুধু নয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও গণভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সরকারি স্থাপনায় (কেপিআই) তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ফাউন্ডেশনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের গতিবিধি অনুসরণ করছেন বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য। ফলে সাবেক এসব আমলা মাঝেমধ্যেই বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ছেন। এ নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা। এসব শীর্ষ সাবেক কর্মকর্তা বলছেন, এ সংগঠন এখনও সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলেনি বা কোন কাজ করেনি। একটি মাত্র অনুষ্ঠান করে আত্মপ্রকাশ জানান দিয়েছে। পেশাদার আমলাতন্ত্র, দলীয়করণ ছাড়া পদোন্নতি, নানা ধরনের হয়রানি রোধ করার বিভিন্ন উপায় নিয়ে কথা বলেছে। সরকার এসব কাজ করেছে বলে আমাদের সংগঠনের ওপর তারা শুরুতেই রুষ্ট। সাবেক আমলারা আরও বলছেন, সেনাবাহিনী, পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীতে অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের নিয়ে সংগঠন রয়েছে। তাই সাবেক কর্মকর্তাদের নিয়ে সংগঠন করা অপরাধের কোন বিষয় নয়। এটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের নাগরিক মাত্রই অধিকার। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক পর্যায়ে সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এএসএম আবদুল হালিম ও সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব এসএম জহুরুল ইসলামসহ অবসরে যাওয়া ৩১ শীর্ষ কর্মকর্তার সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, গণভবন ও কেপিআইভুক্ত সব এলাকায় প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা জারির তালিকায় ৩১ কর্মকর্তার মধ্যে মন্ত্রিপরিষদ সচিব ছাড়াও রয়েছেন সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা ২৩ জন, অতিরিক্ত সচিব ৪ জন এবং যুগ্ম সচিব ৪ জন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নিরাপত্তা শাখার আদেশে ১৫ জন কর্মকর্তার নাম, পদবি ও প্রবেশ পাস নম্বর এবং অন্যদের নাম, সর্বশেষ পদবি উল্লেখ করা হয়েছে। এরা হলেন- বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়কার মন্ত্রিপরিষদ সচিব এএসএম আবদুল হালিম, সাবেক সচিব এনাম আহমেদ চৌধুরী, ইসমাইল জবিউল্লাহ (সাবেক যোগাযোগ সচিব), এসএম জহুরুল ইসলাম (সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব), ব্যারিস্টার মুহাম্মদ হায়দার আলী (সাবেক তথ্য সচিব), খন্দকার শহীদুল ইসলাম (প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব), খন্দকার ফজলুর রহমান, আবু মো. মনিরুজ্জামান খান, মো. আবদুল মতিন চৌধুরী, নাসিরউদ্দিন আহমেদ, এম মতিউর রহমান, সুজাউদ্দিন আহমেদ, শেখ এনায়েত উল্লাহ, খান এম ইব্রাহিম হোসেন, মো. আলাউদ্দিন সর্দার, এটিএম আতাউর রহমান, কাজী আবুল কাশেম, আবদুর রশিদ সরকার, জাফর আহমেদ চৌধুরী, ইলিয়াস আহমেদ, আ. ত. ম ফজলুল করিম, লতিফুর রহমান, মুশফিকুর রহমান, সাবেক অতিরিক্ত সচিব নুরুজ্জামান মিয়া, গোলাম মর্তুজা, মোখলেসুর রহমান, সাবেক যুগ্ম সচিব ড. আবদুস সবুর, এসএম হারুনুর রশীদ, শেখ আবদুল গাফফার ও এনামুল হক। এদের মধ্যে দুয়েক জন কর্মকর্তা বর্তমান সরকারের আমলে সচিবের দায়িত্বও পালন করেছেন। বাকিরা সবাই সাবেক চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সচিব বা সচিব পদমর্যাদায় কর্মরত ছিলেন। সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এএসএম আবদুল হালিম বার্তা৭১ ডটকমকে জানিয়েছেন, অবসরের পর রিটায়ার্ড অফিসারদের নিয়ে সংগঠন করা দেশের প্রতিটি সাধারণ নাগরিকের অধিকার। আমাদের নবগঠিত সংগঠনের উদ্দেশ্যে মেডিকেয়ার সেন্টার স্থাপন ও বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমসহ নানা ধরনের মানবসেবামূলক কাজ করা। দেশের আমলাতন্ত্রে বিভক্তি সৃষ্টি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তাই এ নিয়ে সরকার কেন ভীত এর কারণ আমিসহ অন্য অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তারা বুঝতে পারছেন না। সাবেক তথ্য সচিব ব্যারিস্টার মুহাম্মদ হায়দার আলী মানবজমিনকে বলেন, রিটায়ার্ড সিভিল অফিসার্স ফাউন্ডেশন একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। এ ধরনের পেশাভিত্তিক ও সামাজিক সংগঠন করার অধিকার দেশের প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। আমরা আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে কোন খারাপ কাজ করিনি। তাহলে কেন নানা পদক্ষেপ নেয়া হবে? এর আগে সাবেক সচিবদের নিয়ে নবগঠিত সংগঠন রিটায়ার্ড সিভিল অফিসার্স ফাউন্ডেশনের এক সেমিনার ১৪ই জুলাই শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে হোটেল অরচার্ড প্লাজায় অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম শ্রেণীর সাবেক ক্যাডার কর্মকর্তাদের নিয়ে এ সংগঠনটি গঠিত হয়েছে। বর্তমানে এর বেশির ভাগ সদস্য বিগত চারদলীয় জোট সরকার আমলের সচিবসহ শীর্ষ পর্যায়ের সাবেক কর্মকর্তা। এ কারণেই সরকার হার্ড লাইনে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সরকারের শীর্ষ পর্যায় মনে করছে, তাদের সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দিলে আগামী নির্বাচনে এর প্রভাব পড়তে পারে। তাই যতটা সম্ভব তাদের সংগঠিত হতে না দেয়ার পক্ষে সরকার।