লাশ তোলা হতে পারে হুমায়ূনের। রহস্য-উন্মোচনের প্রয়োজনে ২০০৪ সালে মৃত আরাফাতের লাশ যদি আট বছর পর কবর থেকে তোলা যায়, তাহলে হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা ও মৃত্যুর ক্ষেত্রে পুরো ব্যাপারটি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা এবং বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করায় বাধা কোথায়? বরং এ ক্ষেত্রে মুখোশ উন্মোচন হতে পারে কুচক্রীদের। নোবেলজয়ী লাতিন ঔপন্যাসিক পঁচাশি বছর বয়সী গাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেস ১৯৯৯ সাল থেকে ক্যানসারে আক্রান্ত। এক যুগেরও বেশি সময় ক্যানসারকে ঠেকিয়ে রেখে তিনি দিব্যি সুস্থভাবে বেঁচে আছেন।
তার হাত দিয়েই বের হয়েছে ‘ওয়ান হান্ড্রেড ইয়ার্স অব সলিটিউড’ এবং ‘লাভ ইন দ্য টাইম অব কলেরা’-এর মতো কালজয়ী উপন্যাস।হুমায়ূন আহমেদের হাত দিয়েও বাংলা সাহিত্যের কোটি কোটি পাঠক আরো অসংখ্য মহৎ গল্প, উপন্যাস, নাটক ও চলচ্চিত্র পেতে পারত। তার অকাল মৃত্যু মানুষ মেনে নিতে পারছে না। তার মৃত্যুকে ঘিরে রহস্য বা সন্দেহ বা উদাসীনতাও মেনে নিতে পারবে না।
বিশেষত মৃত্যু-রহস্য মানুষ কখনোই মেনে নেয় না। বিখ্যাতদের মৃত্যু-রহস্য তো মানতেই পারে না। চোখের সামনে থেকে উদাহরণও দেয়া যায়।হুমায়ূনভক্তরা বলেছেন, পুরো ব্যাপারটি তদন্ত করে খতিয়ে দেখা ও বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করায় বাধা কোথায়? তারা বলেছেন, নিউইয়র্কের খবরগুলো আমাদের বিচলিত করেছে। হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা ও মৃত্যু ঘিরে ঘনীভূত হয়েছে রহস্য।
তার অকাল মৃত্যুর হিমালয়তুল্য দুঃখ-বেদনার সঙ্গে এসে এখন মানুষের মধ্যে যুক্ত হচ্ছে তীব্র উদ্বেগ আর নানা সন্দেহ এবং আশঙ্কা। মার্কিন চিকিৎসকরা বলেছেন, তিন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে। কারণগুলোর মধ্যে তার প্রধান ব্যাধি ক্যানসার নেই।
তাহলে কী মার্কিন চিকিৎসা ব্যবস্থায় ত্রুটি ছিল? সেটা বলা যাবে না। কেননা তারা ক্যানসারের চিকিৎসা সঠিকভাবেই দিয়েছেন। তবে যে তিন কারণে তার মৃত্যু হয়েছে, সে ব্যাপারে তারা চিকিৎসা দিলেন না কেন? ক্যানসার ঠেকিয়েও হুমায়ূন যেসব কারণে মারা গেলেন, সতর্ক থাকলে সেগুলো মৃত্যুর উপাদানে পরিণত হতো না।
এ কথা কী মার্কিন চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টরা জানতেন না? হুমায়ূনের সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা জরুরি মুহূর্তে কোথায় ছিলেন, কী করছিলেন? তার কী যথাযথ চিকিৎসা হয়েছিল?
এখানে কী অবহেলা মতো কিছু ঘটেছিল? তাই আমেরিকায় হুমায়ূনের চিকিৎসা সংক্রান্ত উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা নিয়েও স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে। হুমায়ূনের চিকিৎসায় সহায়তাকারীদের আচরণ ও গতিবিধির সঙ্গে চিকিৎসা কার্যক্রমের যোগসূত্রও খতিয়ে দেখা দরকার।
শিল্পী ফেরদৌস আরা নিউইয়র্কে হুমায়ূনকে সুস্থ-স্বাভাবিক দেখে এলেন আর সেই স্বাভাবিক মানুষটিই একেবারে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন! রহস্য বৈকি। হুমায়ূনের মরদেহ একদিন পর ঢাকা এলো কেন? এভাবে তার মৃতদেহ পরে থাকাটাও কম রহস্যজনক নয়। উত্তর আমেরিকার বাংলা সংবাদপত্র এবং অসংখ্য ওয়েবসাইটে প্রতিনিয়ত আরো যেসব খবর প্রকাশ পাচ্ছে তাতে হুমায়ূনের মৃত্যু স্বাভাবিক না রহস্যজনকÑ সেটাই এক বিরাট জিজ্ঞাসা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এ জিজ্ঞাসার উত্তর সবাই জানতে চায়। এ রহস্যের মীমাংসা হওয়া দরকার।
সাধারণত বিখ্যাতদের চিকিৎসা নিয়ে আমরা নিয়মিত আপডেট দেখি। চিকিৎসার ধারাবাহিক বিবরণও মিডিয়ায় প্রকাশ হয়ে থাকে। আমেরিকায় হুমায়ূনের সঙ্গে যারা ছিলেন, তারা কেউই এখন পর্যন্ত পুরো বিষয়টি জাতির সামনে উপস্থাপিত করেননি; চিকিৎসার ভালো-মন্দ দিক, তাদের কার্যক্রম ইত্যাদি সম্পর্কেও তারা কিছুই খুলে বলেননি।
নিঃসন্দেহে সেটা তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এ ব্যাপারে তারা উদাসীন থাকলে তাদের দায়িত্ব পালনের বিষয়েই সন্দেহ উত্থাপিত হবে।
অতএব সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে পুরো চিকিৎসা কার্যক্রমের দিন-ক্ষণ অনুযায়ী একটি ধারাবাহিক ও স্বচ্ছ ঘটনাপঞ্জি অতিদ্রুত প্রকাশ করার দাবি জানাই।
প্রয়োজনে সরকার বা অন্য কোনো সংস্থার পক্ষেও একটি নিরপেক্ষ তদন্ত করার দাবি জানাই। কারণ হুমায়ূন আহমেদ বাঁচার জন্য আমেরিকা গিয়েছিলেন। সরকারও সার্বিক সহযোগিতা দিয়েছিল। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও যথাসাধ্য সাহায্য করেছেন। মরণব্যাধি ক্যানসারকেও কাবু করে এনেছিলেন তিনি। তারপরও তাকে মৃত্যুমুখে পতিত হতে হয়েছে। কেন? এটা সমগ্র জাতিই জানতে চায়।
লাখ লাখ হুমায়ূনভক্ত মানুষও বিষয়টির একটি সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও তথ্যভিত্তিক তদন্ত চায়। যত দ্রুত তদন্ত হবে, তত দ্রুতই রহস্য, সন্দেহ ও উদ্বেগের অবসান হবে। আমরা আশা করি, সরকার ও সংশ্লিষ্ট মহল এ ব্যাপারে জরুরি পদক্ষেপ নিয়ে বিচলিত এবং উদ্বিগ্ন মানুষের শান্ত করবে। নয়তো হুমায়ূনের লেখার জগতের মতোই তার মৃত্যুও বিরাট রহস্য ও প্রশ্নবোধক চিহ্ন হয়ে থেকে যাবে।
ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাতকে তেজস্ক্রিয় পোলেনিয়মের সাহায্যে খুন করা হয়েছিল মর্মে জর্ডানের এক চিকিৎসকের তোলা অভিযোগের উত্তর খুঁজতে আরাফাতের দেহ কবর থেকে তুলে আনার ভাবনা-চিন্তা করা হচ্ছে। ফিলিস্তিন সরকার ও আরাফাতের স্ত্রী-পরিবারের পক্ষ থেকেও এ পরীক্ষায় কোনো আপত্তি নেই। হুমায়ূন আহমেদের চিকিৎসা ও মৃত্যু নিয়ে সব তথ্য প্রকাশিত হলেও কারো আপত্তি থাকার কথা নয়।