ঢাকা, ২৮ এপ্রিল: বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষক সমিতির জেদাজেদির কারণে ২০ দিন ধরে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) চলছে অচলাবস্থা। উভয় পক্ষকে সংকট নিরসনে আলোচনায় বসার অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তবে এর বাইরে মন্ত্রণালয়ের কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।
শিক্ষক সমিতির দাবি, উপাচার্য ও সহ-উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে হবে। আর উপাচার্য ও সহ-উপাচার্য বলছেন, তারা পদত্যাগ করবেন না। অন্যদিকে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে যেতে চান, এ জন্য মানববন্ধন করছেন। ৭ এপ্রিল থেকে টানা কর্মবিরতির কারণে শিক্ষার্থীরা অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন।
বুয়েট সূত্রে জানা গেছে, বুয়েটের শিক্ষক সমিতি ও ভিসি প্রত্যেকেই নিজ নিজ দাবিতে অনড় রয়েছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে চাচ্ছেন না। আর দু’পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে যুক্তি দেখাচ্ছেন। এতে অচল হয়ে পড়েছে বুয়েট। তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, বুয়েট প্রশাসন এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করবেন।
ভিসি ও শিক্ষক সমিতি দুই পক্ষই ইতিমধ্যে পাল্টাপাল্টি সংবাদ সম্মেলন করেছেন। ১৫ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ভিসি ও প্রো-ভিসি পদত্যাগ না করলে কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। অপরদিকে ভিসি ১৭ এপ্রিল শিক্ষক সমিতির দাবিকে অযৌক্তিক আজ্ঞা দিয়ে তা প্রত্যাহার করার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।
শিক্ষামন্ত্রী শিক্ষকদের ক্লাসে ফেরার আহবান জানিয়েছেন দু’বার। ১২ এপ্রিল শিক্ষক সমিতি সচিবালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তিনি শিক্ষকদের আলোচনার মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানের জন্য বলেন। এই আহবান জানানোর ১০ দিন পর পুনরায় তিনি বুয়েট শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের স্বার্থে ক্লাসে ফেরার জন্য আহবান জানান। এছাড়াও ১১ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় শিক্ষকদের কাজে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে। ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীকে ভিসি প্রো-ভিসির পদত্যাগের দাবিতে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম বলেন, “আমার পদত্যাগ কোনো সমাধান নয়। এর আগেও অনেকেই পদত্যাগ করেছেন যার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয়নি। যেহেতু শিক্ষকদের দাবিগুলো যৌক্তিক নয় তাই আমার পদত্যাগের প্রশ্নই উঠে না।”
অপরদিকে শিক্ষক সমিতি এক সংবাদ সম্মেলনে ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। এতে শিক্ষার্থীদের সেশনজটের আশঙ্কা প্রবল হয়েছে। ১৫ এপ্রিল বুয়েটের ক্লাস শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শিক্ষকরা ১৬ টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ এনে ৭ এপ্রিল থেকেই কর্মবিরতি শুরু করেন। এতে অচল হয়ে পড়েছে দেশের অন্যতম প্রধান বিদ্যাপিঠ বুয়েট।
অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে মানববন্ধন হয়েছে কয়েকবার। শিক্ষক সমিতির অভিযোগ যেসব শিক্ষার্থী মানববন্ধন করেন তারা সাধারণ শিক্ষার্থী নয় তারা ছাত্রলীগে নেতাকর্মী। শিক্ষকদের দাবি, বুয়েট প্রশাসনের অনিয়মের বিরুদ্ধে আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা তাদের পাশেই আছেন।
তবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তারা শিক্ষকদের এই আন্দোলনে শিক্ষকদের পক্ষেই আছেন। তা না হলে কেন তারা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন না।
বুয়েটের এক শিক্ষার্থী বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের পক্ষেই আছে। শিক্ষকরা আলোচনার মাধ্যমে তাদের সমস্যা যতদ্রুত সমাধান করতে পারবেন আমাদের জন্য তত বেশি ভালো।”
শিক্ষার্থী তুষার বলেন, “ভিসি ও শিক্ষক সমিতির জন্য আমরা বিপাকে পড়েছি। ১৫ তারিখ থেকে আমাদের ক্লাস শুরুর কথা থাকলেও তা হয়নি। আমার মনে হচ্ছে আমরা সেশনজটে পড়ে গেছি।”
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. এম মজিবুর রহমান বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “ভিসি ও প্রো-ভিসির পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের কর্মবিরতি চলবেই। ভিসি সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন। শিক্ষক সমিতির ২১ তারিখের সাধারণ সভায় শিক্ষকরা কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।”
তিনি আরো বলেন, “ভিসি শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করেন তবে নিজের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন চান না। শিক্ষকদের বিরুদ্ধে প্রশাসন বিভিন্ন ধরনের প্রচারণা চালাচ্ছে যা শিক্ষকদের ভাবমূর্তি নষ্ট করছে।”
বুয়েটের ভিসি অধ্যাপক ড. এস এম নজরুল ইসলাম বার্তা২৪ ডটনেটকে বলেন, “শিক্ষকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করার জন্য সিন্ডিকেট সভায় ও সংবাদ সম্মেলনে আহবান জানানো হয়েছে। শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনা করছি। আশা করি সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।”
এদিকে, সাবেক দুই উপাচার্য, বুয়েট অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের দুই প্রতিনিধি ও সমিতির নেতারা গত রাতে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা করেছেন। পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে শনিবার সমিতির সাধারণ সভা ডাকা হয়েছে।