ঢাকা, ৩১ জুলাই: গ্রামীণ ব্যাংক তাদের ক্ষুদ্র ঋণের বিপরীতে ঋণ গ্রহীতাদের কাছ থেকে ৩০, ৪০ বা ৪৫ শতাংশ সুদ নেয় বলে সম্প্রতি যে বক্তব্য দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, তা সত্য নয় বলে জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ব্যাংকটির মহাব্যবস্থাপক (তথ্য ও গণমাধ্যম সমন্বয়) জান্নাত-ই-কাওনাইন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মঙ্গলবার বিকেলে বলা হয়েছে, ‘‘এ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রকৃত তথ্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ।’’
গ্রামীণ ব্যাংক জানায়, ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানগুলোর নিয়ন্ত্রক রাষ্ট্রীয় সংস্থা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ সুদের হার ঠিক করেছে ২৭%। আর গ্রামীণ ব্যাংকের সর্বোচ্চ সুদের হার উৎপাদনশীল খাতে ২০%, অন্য খাতগুলোতে যথাক্রমে ৫%, ৮% ও ১০%।
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই সম্প্রচারিত বিবিসি টেলিভিশনের ‘হার্ডটক’ টকশোতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী বলছেন গ্রামীণ ব্যাংক গরীব মানুষের কাছ থেকে ৩০, ৪০ বা ৪৫ শতাংশ সুদ নেয়।
গ্রামীণ ব্যাংকের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘‘সম্প্রতি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা বিবিসি’র সাথে এক সাক্ষাৎকারে গ্রামীণ ব্যাংক গরীব মানুষের কাছ থেকে ৩০, ৪০ বা ৪৫ শতাংশ সুদ নেয় বলে উল্লেখ করেছেন। তার এই সাক্ষাৎকারটি ৩১ জুলাই ২০১২ তারিখে দেশের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াসমূহে প্রকাশিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রকৃত তথ্যের সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ হওয়ায় প্রকৃত তথ্য সবার অবগতির জন্য উল্লেখ করা হলো।’’
জানানো হয়, ‘‘গ্রামীণ ব্যাংকে ৫ ধরনের ঋণ কার্যক্রমের জন্য ৫ ধরনের সুদের হার প্রচলিত রয়েছে। এই ঋণ কার্যক্রমগুলোর সুদের হার নিম্নরূপ:
(১) উপার্জনশীল খাতে ঋণের সর্বোচ্চ সুদ ২০%। ১০০০ টাকা ঋণ নিলে এক বছরে সাপ্তাহিক কিস্তিতে এ ঋণ পরিশোধ করলে মোট পরিশোধ করতে হয় ১১০০ টাকা। অর্থাৎ এক হাজার টাকার ঋণের ওপর বছরে মোট ১০০ টাকা সুদ। মূল টাকার ওপর ফ্ল্যাট রেটে মাত্র ১০% সুদ দিতে হয়। সাপ্তাহিক কিস্তিতে পরিশোধ করা হয় বলে এ ঋণের কার্যকর সুদ ২০%। (২) গৃহ নির্মাণের জন্য ঋণ নিলে সুদ দিতে হয় ৮% হারে। (৩) সদস্যের ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষার জন্য ঋণ নিলে শিক্ষা চলাকালীন কোনো সুদ চার্জ করা হয় না। শিক্ষা সমাপ্তির পর ৫% হারে সুদ চার্জ করা হয়। (৪) গ্রামীণ ব্যাংক ভিক্ষুকদেরও ঋণ দেয়। এ ঋণ সুদবিহীন। (৫) সদস্যদের কেন্দ্রঘর নির্মাণের জন্য যে ঋণ দেয়া হয় সেটাও সুদবিহীন।
গ্রামীণ ব্যাংক জানায়, ‘‘উল্লেখ্য যে, মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (এমআরআই) আইন, ২০০৬ এর আওতায় প্রণীতব্য বিধিমালার খসড়া বিষয়ে ৪ এপ্রিল, ২০০৯ তারিখে মাননীয় অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভার কার্যবিবরণীর ৫ অনুচ্ছেদে এই মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে যে, গ্রামীণ ব্যাংকের সাধারণ ক্ষুদ্রঋণের বর্তমান কার্যকর বার্ষিক সুদের হার ২০% (যা ফ্ল্যাট পদ্ধতিতে ১০%)। ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানসমূহের জন্য এমআরআই কর্তৃক নির্ধারিত সর্বোচ্চ সুদের হার ধার্য করা হয়েছে ২৭%। গ্রামীণ ব্যাংকের সুদের হার সরকার নির্ধারিত সর্বোচ্চ সুদের হারের চাইতে ৭% কম।’’
প্রতিষ্ঠানটি জানায়, ‘‘এছাড়া ইতঃপূর্বে গ্রামীণ ব্যাংকের সার্বিক কর্মকান্ড মূল্যায়নে গঠিত রিভিয়্যু কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর এর উদ্ধৃতি দিয়ে মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছিলেন যে, গ্রামীণ ব্যাংকের ক্ষুদ্রঋণের সুদের হার ক্ষুদ্রঋণদানকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের চেয়ে কম।’’
গ্রামীণ ব্যাংক জানায়, ‘‘আরো উল্লেখ্য যে, গ্রামীণ ব্যাংক জন্ম থেকেই তার গ্রাহকদের ঋণের ক্ষেত্রে ডিক্লাইন ব্যালেন্সের ওপরই সুদ ধার্য করে আসছে। অর্থাৎ গ্রামীণ ব্যাংক কখনই পরিশোধিত ঋণের ওপর সুদ ধার্য করে না। অধিকন্তু ঋণের ক্ষেত্রে গ্রামীণ ব্যাংক সব সময় সরল সুদ হিসাব করে; অর্থাৎ চক্রবৃদ্ধি সুদ হিসাব করে না। গ্রামীণ ব্যাংকের হিসাব পদ্ধতিতে মূল ঋণ এবং আদায়যোগ্য সুদের হিসাব পৃথক খাতে সংরক্ষণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কখনই সুদকে মূল ঋণের সাথে একীভূত করা হয় না। তাছাড়া গ্রামীণ ব্যাংকের সুদ কোন অবস্থাতেই মূল টাকার বেশি হতে পারে না। ঋণগ্রহীতা দীর্ঘদিন ঋণ পরিশোধ না-করলে মোট সুদের পরিমাণ মূল টাকার বেশি হতে পারে না। এছাড়া সালতামামিতে নীট মুনাফা অর্জিত হলে গ্রামীণ ব্যাংকের মালিক হিসেবে শেয়ার হোল্ডার সদস্যদেরকে ডিভিডেন্ড প্রদান করা হয়।’’