গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগের বিধি পরিবর্তন করে সরকারি নিয়ন্ত্রণ আনতে আইন সংশোধনের বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, মালিকানা প্রয়োগের ক্ষমতা থেকে গরীব মালিকদের বঞ্চিত হতে দেখে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। বৃহস্পতিবার দেয়া এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, এ সিদ্ধান্ত ব্যাংকটিকে ধ্বংস করে দেবে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশ (সংশোধন) ২০১২’ এর খসড়ায় চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়া হয়। সংশোধনী অনুযায়ী এমডি নিয়োগে ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের বিদ্যমান ক্ষমতা আর থাকছে না। এমডিতে নিয়োগের ক্ষমতা পাচ্ছেন ব্যাংকটির বর্তমান সরকার নিযুক্ত চেয়ারম্যান।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদ মাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘‘আমি আগে থেকেই এ শঙ্কা প্রকাশ করে এসেছি। এখন আমার শঙ্কা বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে এই প্রক্রিয়াকে থামানোর ব্যাপারে আমরা সফল হতে পারিনি।’’
তিনি বলেন, ‘‘গরীবের মালিকানায় পরিচালিত গরীবের ব্যাংকটি থেকে মালিকানা এবং মালিকানা প্রয়োগের ক্ষমতা থেকে গরীব মালিকদের বঞ্চিত হতে দেখে আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি। আমি এত মর্মাহত যে আমি আমার ভাবাবেগ প্রকাশে অক্ষম হয়ে পড়েছি। দেশের যারা আমার মত মর্মাহত হবেন তাঁদের অনুরোধ করছি তাঁরা যেন সরকারকে বুঝান যে এটা অত্যন্ত ভুল কাজ হচ্ছে। এটা থেকে তাঁরা যেন বিরত থাকেন।’’
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা বলেন, ‘‘সরকারের এ সিদ্ধান্ত গরীবের ব্যাংকটি, এবং দেশের অত্যন্ত গর্বের ব্যাংকটিকে ধ্বংস করে দেবে। গরীবের সম্পদ এবং দেশের সম্পদ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার জন্য দেশবাসীর প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি। গ্রামীণ ব্যাংকের গরীব মালিকদের প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি তাঁরা যেন তাঁদের মালিকানা প্রয়োগের অধিকারকে খর্ব না করার জন্য সরকারের প্রতি এবং দেশবাসীর প্রতি আবেদন জানান।’’
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিসভা গ্রামীণ ব্যাংক অধ্যাদেশে যে সংশোধনী আনতে অনুমোদ দিয়েছে, তাতে মূল আইনের ১৪ ধারায় ৩টি সংশোধনী আনা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান বোর্ডের পরামর্শ নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য তিনজনের একটি প্যানেল নির্বাচন করবেন। এ প্যানেল থেকে একজনকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের সুপারিশ করবেন তিনি।
এর আগে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের জন্য বোর্ড একটি সিলেকশন কমিটি গঠন করার বিধান ছিল। সংশোধনীতে ওই বিধানটি বাতিল করা হয়েছে।
আগের আইনে ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগের যোগ্যতা হিসাবে ‘রুরাল ইকোনোমি’ এবং ‘গ্রামীণ ব্যাংকিং বিজনেস’ বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকার শর্ত দেওয়া ছিল। সংশোধিত আইনে এ অভিজ্ঞতার শর্ত বাদ দিয়ে ‘মাইক্রো-ফাইন্যান্সিং’ বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকার শর্ত দেওয়া হয়েছে।
সচিব জানান, যেহেতু এখন সংসদ অধিবেশন নেই, তাই মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত এই খসড়া খুব শিগগিরই রাষ্ট্রপতি এই অধ্যাদেশ জারি করবেন। পরে সংসদ অধিবেশনে এই অধ্যাদেশটিকে আইনে পরিণত করা হবে।
এই ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান বিধি অনুসারে ব্যাংকের নির্বাহী প্রধান হিসেবে এমডি পদে নিয়োগের এখতিয়ার পরিচালনা পরিষদের কাছে। ক্ষুদ্রঋণ গ্রহীতা নারীদের প্রাধান্য দিয়েই পরিচালনা পরিষদ গঠন করা হয়েছে। বিধি অনুসারে, এর এমডি নিয়োগ দিতে পরিচালনা পর্ষদ একটি অনুসন্ধান কমিটি করে দেবার কথা। ওই কমিটি এমডি হিসেবে তাদের পছন্দের তালিকা দেবে পরিচালনা পরিষদকে। পরে পরিচালনা পরিষদ এমডি পদে নিয়োগ দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাবে।
কিন্তু বিধিতে বৃহস্পতিবারের প্রস্তাবিত সংশোধনী জারি হলে পরিচালনা পরিষদের এ ক্ষমতা থাকবে না। সেক্ষেত্রে সরকার নিযুক্ত চেয়ারম্যান স্রেফ পরিচালনা পরিষদের সাথে ‘পরামর্শ’ করেই এমডি নিয়োগ দিতে পারবেন।