ঢাকা : আজ বুধবার বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের ৮২তম জন্মবার্ষিকী। ১৯৩০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। দিবসটি উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার প্রদত্ত এক বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, ইতিহাসে বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব কেবল একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রনায়কের সহধর্মিনীই নন, বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে অন্যতম এক নেপথ্য অনুপ্রেরণাদাত্রীও।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এক বিবৃতিতে আজ বুধবার দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করার জন্য বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সকল স্তরের নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
বেগম শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বাঙালি জাতির সুদীর্ঘ স্বাধীকার আন্দোলনের প্রতিটি পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধুকে সক্রিয় সহযোগিতা করেছেন। ছায়ার মত অনুসরণ করেছেন প্রাণপ্রিয় স্বামী বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে। জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করেছেন, এজন্য অনেক কষ্ট-দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে তাকে। তার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলির সদস্য এবং সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেন, তার স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত প্রখর ছিল। মনেপ্রাণে তিনি একজন আদর্শ বাঙালি নারী ছিলেন। অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তা, শান্তভাব, অসীম ধৈর্য্য ও সাহস নিয়ে জীবনে যে কোন পরিস্থিতি তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবেলা করতেন। জীবনে কোন বৈষয়িক চাহিদা ও মোহ তার ছিল না।
সংসদ উপনেতা বলেন, বঙ্গবন্ধু জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ সময় কাটিয়েছেন কারাগারে। তার অবর্তমানে মামলা পরিচালনার ব্যবস্থা করা, দলকে সংগঠিত করতে সহায়তা করা, আন্দোলন পরিচালনায় পরামর্শ দেয়াসহ প্রতিটি কাজে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। শুধু তাই নয় তিনি পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিতেন। সংগঠনের জন্য তিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। তিনি অনুপ্রেরণা, শক্তি, সাহস, মনোবল ও প্রেরণা যুগিয়েছেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে। বেগম শেখ ফলিজাতুন্নেছাকে নিতান্তই একজন সাদাসিধে নারী উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, কোন লোভ-লালসা তাকে স্পর্শ করতে পারেনি। তিনি স্কুল কলেজ থেকে শিক্ষা নেননি, তারপরেও তার মধ্যে ছিল শিক্ষার সব মৌলিক উপাদান।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আওয়ামী লীগসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে আজ সকাল ১০টায় বনানী কবরস্থানে শহীদ ফজিলাতুন্নেছার সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ শেষে কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল। বাংলাদেশ মহিলা আওয়ামী লীগ বাদজোহর ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় প্রাঙ্গণে মিলাদ দোয়া ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। যুবলীগ অনুরূপ কর্মসূচি এবং ছাত্রলীগ বনানী কবরস্থানে ফজিলাতুন্নেছার কবরে শ্রদ্ধা জানানো শেষে আজ সকাল ১১টায় টিএসসি মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এ উপলক্ষে আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ আজ সকাল ১১টায় বঙ্গবন্ধু ভবনে আলোচনা সভার মাধ্যমে বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে স্মরণ করবে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনটি উপলক্ষে বিস্তারিত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, ফজিলাতুন্নেছা মাত্র তিনবছর বয়সেই পিতা ও পাঁচবছর বয়সে মাতাকে হারান। তার ডাক নাম ছিল ‘রেনু’। পিতার নাম শেখ জহুরুল হক ও মাতার নাম হোসনে আরা বেগম। দাদা শেখ কাসেম চাচাত ভাই শেখ লুৎফর রহমানের ছেলে শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বেগম ফজিলাতুন্নেছার বিবাহ দেন। তখন থেকেই বেগম ফজিলাতুন্নেছাকে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুর মাতা সাহেরা খাতুন নিজের সন্তানদের সঙ্গে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করেন। গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন। অতপর সামাজিক রীতি-নীতির কারণে গ্রামে গৃহ শিক্ষকের কাছে লেখাপড়া করেন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে জাতির জনকের হত্যাকারীদের হাতে তিনিও নির্মমভাবে মৃত্যুবরণ করেন।