ঢাকা, ১৭ নভেম্বর : মিরপুর টেস্টে জয়ের অনেক কাছাকাছি গিয়েও হেরে গেছে বাংলাদেশ। তবে ক্রিকেটীয় স্বর্ণযুগে ফেরার স্বপ্ন দেখা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী ওয়েস্ট ইন্ডিজকে যে ধাক্কাটা বাংলাদেশ দিয়েছে, সেটার ওজন খুব কম নয়। আর ঠিক সে কারণেই মিরপুর টেস্টের জয়টাকে ‘কষ্টার্জিত’ বলে উল্লেখ করলেন ক্যারিবিয় অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি।
ম্যাচ শেষে স্যামি প্রেস ব্রিফিংয়ে এলেন হাসিমুখে। হাতের আইফোনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা অভিনন্দনের জবাব দিতে দিতে। প্রেস ব্রিফিংয়ের জন্য রাখা নির্দিষ্ট চেয়ারটিতে বসেও ফোন থেকে হাত সরছিল না অধিনায়ক ড্যারেন স্যামির। অপেক্ষমান সাংবাদিকদের কাছে হাসতে হাসতে সেই কৈফিয়তও দিলেন ক্যারিবিয় দলের মিডিয়া ম্যানেজার অ্যাড্রিয়েল রিচার্ড। ‘কল্পনা করতে পারেন, আমাদের কাছে কত বেশি অভিনন্দন জানিয়ে মেসেজ এসেছে!’
ক্যারিবিয় দলের মিডিয়া ম্যানেজার ও অধিনায়কের হাবভাবে মনে হলো বাংলাদেশের বিপক্ষে এক টেস্ট ম্যাচ জিতে অসাধারণ কোনো কৃতিত্ব অর্জন করে ফেলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অনেকেই ভাববেন, এটা আর এমন কী, ওয়েস্ট ইন্ডিজই যে এই ম্যাচ জিতবে, সেটাই তো স্বাভাবিক ছিল।
হ্যাঁ, মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন ব্যাপারটা স্বাভাবিকই ছিল। কিন্তু তৃতীয় দিনেই পরিস্কার হয়ে গিয়েছিল যে ম্যাচটা পঞ্চম দিনে গড়াচ্ছে এবং সম্ভাব্য ফলাফল হতে যাচ্ছে ড্র। চতুর্থ দিনের শেষে সেই ভাবনাও পাল্টে গেল পুরোপুরি। বাংলাদেশের সমর্থকদের মনে তখন জয়ের সম্ভাবনা উঁকি-ঝুঁকি মারছে। সম্ভাব্য ফলাফল হিসেবে উঠে আসছে, জয়, পরাজয়, ড্র এমনকি টাইয়েরও নাম।
কিন্তু পঞ্চম দিনের সকালটায় বাকি তিনটে সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়ে ক্রীড়াপ্রেমিদের মনে একটা সম্ভাবনাই জেঁকে বসেছিল। সেটা হলো বাংলাদেশের জয়। কারণ পঞ্চম দিনে জয়ের জন্য বাংলাদেশের লক্ষ্য ছিল ২৪৫ রান। হাতে পুরো ১০ উইকেট। দিনের খেলা বাকি ছিল আরও প্রায় ৭৮ ওভার।
এমন পরিস্থিতিতে বিপক্ষ দলের অধিনায়কের মনে আশঙ্কার কালো মেঘ জমাই স্বাভাবিক। সেটার কারণও আছে। টেস্ট র্যাংকিংয়ে উভয় দলের অবস্থান খুব দূরের নয়। তাছাড়া ঘরের মাঠে বাঘের গর্জন যে কতটা ভয়ংকর, সেটা ভালোই জানা আছে স্যামিদের। যে কারণে বাংলাদেশকে মোটেও ছোট করে দেখেন নি বলে জানান স্যামি।
‘বাংলাদেশকে হাল্কাভাবে না নেওয়ার কথা ম্যাচ শুরুর আগেই আমরা বলেছিলাম। আমরা বাংলাদেশকে কখনোই হাল্কাভাবে নেই নি। যদি আমরা বাংলাদেশকে হাল্কাভাবে নিতাম, তবে তাদের প্রথম ইনিংসের পর ড্রেসিংরুমে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তো।’
ওয়েস্ট ইন্ডিজের ড্রেসিংরুমে আতঙ্ক ছড়ানোর মতোই কান্ড করে দেখিয়েছেন নাঈম, নাসির, সাকিব, তামিমরা। কারণ প্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান টপকে নিজেদের সেরা টেস্ট ইনিংসের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের কাছ থেকে এমন পাল্টা আক্রমণে হতচকিত ওয়েস্ট ইন্ডিজের আশঙ্কা আরও বেড়ে যায় দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৭৩ রানে অলআউট হওয়ায়। দিনের প্রায় পুরোটা সময় হাতে রেখে ২৪৫ রানের পুঁজি নিয়ে নিশ্চয়ই স্বস্তিতে ছিলেন না ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক।
‘আমাদের একটাই লক্ষ্য ছিল ১০ উইকেট নেওয়া। চতুর্থ দিনের শেষে ও পঞ্চম দিনের শুরুতে পিচের আচরণ পাল্টে যাচ্ছিল। স্পিনাররা বলে টার্ন পাচ্ছিল। এমনকি এই সময়ে আমাদের ফাস্ট বোলাররা রুবেলের বোলিং দেখে উৎসাহিত হয়েছে। আমি বোলারদের বলেছি ধের্য ধরে সঠিক জায়গায় বল করতে। আমরা সেটা করতে পেরেছি।’ বাংলাদেশ যখন দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৫ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নামে, তখনকার পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেন স্যামি।
প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রতিপক্ষের অধিনায়ক বাংলাদেশের প্রশংসা করলেন অকুণ্ঠচিত্তে। তারপর তৃপ্তির হাসি হেসে বললেন, ‘ম্যাচের বাকি সময়টায় যা-ই হোক না কেন, এতে কিছু যায়-আসে না। কারণ শেষ পর্যন্ত আমরাই জয়ী হয়েছি।’