চট্টগ্রাম, ১১ নভেম্বর : বিএনপি চেয়ারপারসন ও বিরোধী দলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলে। কিন্তু কোনো ধর্মের প্রতিই তাদের আস্থা নেই।
বেগম জিয়া রবিবার রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রামের সার্কিট হাউজে পটিয়া উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধবিহারের ধর্মীয়গুরুদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ সব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় গেলেই প্রত্যেকটা ধর্মের ওপর আঘাত হানে। মুসলমানদের তারা মৌলবাদী ও সামপ্রদায়িক গোষ্ঠী আখ্যা দেয়। সংখ্যালঘুদের জায়গা দখল, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা চালায়। তাদের হাতে কোনো ধর্মের লোক নিরাপদ নয়।
বেগম জিয়া বলেন, পেপার পত্রিকায় মাধ্যমে জানতে পেরেছি মন্দির উপসনালয়ে হামলা লুটপাটের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফর করেন। এটা ভাবতে আমাদের কষ্ট হয়। যারা হামলাকারী প্রকৃত আপরাধী তাদের ধরে দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দেয়া হোক যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ কোনো ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে হামলা করতে সাহস না পায়।
বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, পটিয়া, উখিয়া এবং রামু’র বৌদ্ধ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দির এবং উপসনালয়ে হামলার সঙ্গে সরকার দলীয় লোকজন জড়িত তাই পুলিশ প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করতে ভয় পাচ্ছে। দেশবাসীর সামনে জড়িত দলীয় নেতাকর্মীদের পরিচয় প্রকাশ হয়ে যাবার ভয়ে বার বার দাবি করা সত্ত্বেও সরকার এ ব্যাপারে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করছে না। আমরা ক্ষমতা আসলে এসব দুষ্কৃতকারীদের বিচার করবো।
মতবিনিময় সভায় পটিয়ার রত্নাংকুর বৌদ্ধবিহার ও লাখোড়া অভয় বৌদ্ধবিহার এবং পোলাগাঁও নবায়ন সংঘ সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বেগম জিয়া আরো বলেন, এ সরকার সর্বক্ষেত্রে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তাই তাদের অধীনের আর কোনো নির্বাচন হবে না। আমরা বার বার বলছি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন। কিন্তু এরা নির্দলীয় নির্বাচনকে ভয় পায়।
বিরোধী দলীয় নেত্রী বলেন, এ সরকারের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছে। তাদের অব্যাহত দুর্নীতি আর লুটপাটের কারণে বর্হিবিশ্বে আজ দেশের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।
বৌদ্ধ ধর্মের লোকজন অত্যান্ত শান্তপ্রিয় ও নিরীহ সম্প্রদায়ের লোক উল্লেখ করে বেগম জিয়া বলেন, সরকার এমনিতে আমাদের ওপর জুলুম নির্যাতন চালাচ্ছে। তারপরও আমাদের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো। সকল ধর্মের লোকজনের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্ক অতীতেও ছিল ভবিষ্যতেও থাকবে।
মতবিনিময় সভায় বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের পক্ষে ধর্মানন্দ থেরো, দিবানন্দ ভিক্ষু বক্তব্য দেন। অন্যদের মধ্যে তিপিঅং, প্রমতোষ বড়ুয়া, উপানন্দ ভিক্ষু, ধর্মপাল মহাথেরো, সুশীল বড়ুয়া, তিলকা বংশ ভিক্ষু, পোলাগাঁও মন্দিরের সভাপতি মিন্টু সরকার ও সাধারণ সম্পাদক বিপ্লব চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন।
অপরদিকে সার্কিট হাউজে এ সময় বেগম জিয়ার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন সিটি মেয়র এম মনজুর আলম, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আকবর খন্দকার, বেগম জিয়ার উপদেষ্টা এম মোর্শেন খান, নগর বিএনপি সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক ডা. শাহাদত হোসেন, দক্ষিণ জেলা বিএনপি সভাপতি জাফরুল ইসলাম এমপি, উত্তর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আসলাম চৌধুরী, রাঙ্গুনিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান আবু মো. হাসনাত। পরে বিরোধী দলীয় নেতার ব্যক্তিগত তহবিল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত বৌদ্ধ বিহারের নেতৃবৃন্দের কাছে ১২ লাখ টাকা অনুদান দেন।
বেগম জিয়া দুদিনের কঙবাজার সফর শেষে রাত সাড়ে ৮টায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এসে পৌঁছেন। মতবিনিময় সভাশেষে বেগম জিয়া রাত সাড়ে ৯টায় ঢাকার উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন।