ঢাকা: সরকার বিরোধী আন্দোলনের নতুন কৌশল নিয়ে চাঙ্গা হচ্ছে বিএনপি। বিরোধী দমনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের বৈরি আচরণের বিরুদ্ধে সর্বাত্বক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে আন্দোলনের নতুন গতিপথ নির্ধারণের এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলটি।
বিএনপি বলছে, বিরোধী দলকে দমন করে, ব্যর্থতা ঢেকে ক্ষমতা পোক্ত করতে সরকার দেশে ‘অরাজক’ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। দেশ একদলীয় শাসনের পথে এগোচ্ছে। সরকার একতরফাভাবে অন্যায় করে যাচ্ছে। আর এ কারণেই সরকার পতনের লক্ষ্যে কঠোর থেকে কঠোরতর আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়েছে তারা।
এমনকি সংসদে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের বিল না তুললে বিএনপি অধিবেশনে ফিরবে না বরবরই এমন কথা বলে আসলেও আন্দোলনের ‘কৌশল’ পরিবর্তনের অংশ হিসেবে সংসদে ফেরারও ইঙ্গিত দিয়েছে প্রধান এই বিরোধী দল।
শুক্রবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ বলেন,‘সরকার সংসদকে অকার্যকর করে রেখেছে। আমরা আন্দোলনের কৌশলের অংশ হিসেবে সংসদে ফিরে যাওয়ার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে চিন্তাভাবনা করছি। দলীয় পর্যায়ে আলাপ-আলোচনাও হচ্ছে।’
ওই আলোচনা সভায় মওদুদ অভিযোগ করেন,সরকার পরিকল্পিতভাবে ‘ঘটনা ঘটিয়ে’ দেশকে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সরকার যেভাবে বিরোধী দলের আন্দোলন ‘দমন করছে’, তাতে দেশে গণতন্ত্র থাকবে কিনা- তা নিয়েই জনমনে ‘দুশ্চিন্তা’ তৈরি হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন মওদুদ।
বিএনপি বলছে,গণতন্ত্র রক্ষার প্রয়োজনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে এ সরকারের পতন ঘটানো হবে। আগামী ২৮ নভেম্বর ঢাকার জনসভা থেকে ১৮ দলীয় জোট নেত্রী খালেদা জিয়া সে কর্মসূচিই ঘোষণা করবেন। এ প্রসঙ্গে মওদুদ আহমদ বলেন,‘আগামী তিন মাসের মধ্যে সরকারকে দাবি মানতে বাধ্য করতে আমরা সর্বশক্তি নিয়ে কর্মসূচি দেব। এই কর্মসূচি পর্যায়ক্রমে কঠিন থেকে কঠিন হবে।’
অপরদিকে শুক্রবার রাজধানীতে আরেক আলোচনা সভায় সরকারের অরাজকতার বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অভিযোগ করে বলেন, ক্ষমতাকে পোক্ত করতে সরকার দেশে ‘অরাজক’ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। জাতি এক দুঃসময় অতিক্রম করছে। দেশ একদলীয় শাসনের পথে এগোচ্ছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তোরণে জনগণকে সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। এ সময় খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চলমান আন্দোলনের মাধ্যমে নির্দলীয় সরকারের দাবি মানতে সরকারকে বাধ্য করা হবে বলেও জানান তিনি।
ফখরুল বলেন, দেশে আজ পরিকল্পিতভাবে সঙ্কট সৃষ্টি করা হচ্ছে। গণতন্ত্র বিপন্ন। দেশের অর্থনীতি ধ্বংসের পথে। ক্ষমতাসীনদের লুটপাটের কারণে পদ্মাসেতু নির্মাণ বন্ধ হয়ে গেছে। সর্বত্র দুর্নীতির বিস্তার ঘটানো হয়েছে। এভাবে সরকার দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টির পায়তারা করছে।’
ওই আলোচনা সভায় আধিপত্যবাদ ও আগ্রাসী শক্তির হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে কঠোর আšেদালনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম।
একই দিনে ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে হয়রানি করলে এখন থেকে প্রতিরোধ করার ঘোষণা দিয়ে মহানগর বিএনপির আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা বলেন, জামায়াত শিবিরকে প্রতিহত করার অজুহাতে দাড়ি টুপি পড়া সাধারণ মানুষকে হয়রানী করা হলে বিএনপি নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবেনা। সরকারকে অবিলম্বে এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে, অন্যথায় বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ ধরনের অন্যায় কর্মকাণ্ড প্রতিহত করবে বলে হুশিয়ারি দেন তিনি। বিএনপির এই নেতা বলেন, অজুহাত ধরে বিএনপি ও বিরোধী দলীয় নেতা কর্মীদের হয়রানি করা হলে বিএনপি তা প্রতিহত করবে।