দেশজুড়ে জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে পুলিশের ব্যাপক গ্রেফতার অভিযানের মধ্যেই সোমবার খোদ রাজধানী ও নারায়ণগঞ্জে শিবির কর্মীরা ঝটিকা মিছিল বের করেছে।
তবে খুব কম সময়ের মধ্যে শিবির কর্মীরা ঢাকার রাজপথ থেকে হারিয়ে গেলেও নারায়ণগঞ্জে শিবিরের ঝটিকা মিছিলটি এক পর্যায়ে জঙ্গী মিছিলে রূপ নেয়।
সোমবার সকালে শহরের চাষাঢ়ায় নূর মসজিদ এলাকায় শিবির পুলিশের উপর হামলা করে। হামলায় নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসিসহ অন্তত ১০জন আহত হয়েছে।
আহতরা হলেন, নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মঞ্জুর কাদের, এএসআই আলমগীর ও কনস্টেবলসহ অন্তত ১০ পুলিশ সদস্য। এদের শহরের ১০০ শয্যা ও ২০০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দি শীর্ষ নেতাদের মুক্তি ও যুদ্ধাপরাধের বিচার বন্ধের দাবিতে ঝটিকা মিছিলটি বের করে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
এদিকে সোমবার সকালে রাজধানীর মহাখালী ও ফকিরাপুলে বের হওয়া এ মিছিলে অল্প সংখ্যক নেতা-কর্মীকে দেখা গেছে। তবে এ সময় পুলিশকে নিরাপদ দূরত্বে অবস্থান নিয়ে নীরব দর্শকের ভূমিকায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মহাখালীর নাবিস্কো মোড় থেকে শিবির একটি ঝটিকা মিছিল বের করে এবং এতে ২০/২৫ জনের একদল যুবক অংশ নেয়। মিছিলে অংশগ্রহনকারীরা জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের মুক্তির দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।
১০ মিনিট স্থায়ী এ ঝটিকা মিছিল শেষ হওয়ার অন্তত ২০ মিনিট পরে ঘটনাস্থলে পুলিশকে অবস্থান নিতে দেখা যায়।
মহাখালির মিছিলের ঠিক আধাঘন্টা পর সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর ফকিরাপুল মোড় থেকে আরামবাগ ট্রাফিক সিগন্যাল মোড় পর্যন্ত শিবিরের কেন্দ্রীয় সেক্রেটারি আব্দুল জব্বারের নেত্বত্বে আরো একটি ঝটিকা মিছিল বের হয়।
এসময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছে, শিবিরের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় ভয়ে তাদের ধারে কাছেও ভীরতে দেখা যায়নি পুলিশকে।
তবে তেজগাঁও ও পল্টন থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে হলে তারা মিছিল হওয়ার কথা জানালেও ভাংচুর, হামলা বা গ্রেফতার কোন ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ।
নারায়ণগঞ্জে ওসিসহ আহত ১০
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানিয়েছে, জামায়াতে ইসলামীর কারাবন্দী শীর্ষ নেতাদের মুক্তি দাবী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে প্রহসনমূলক উল্লেখ করে এ বিচার বন্ধের দাবীতে সকাল সাড়ে ১০টায় শহরের চাষাঢ়ায় নূর মসজিদের সামনে থেকে নারায়ণগঞ্জ মহানগর ছাত্র শিবিরের ব্যানারে একটি মিছিল বের হয়।
প্রায় ৫শ’রও বেশী নেতাকর্মীদের মিছিলটি শহরের ২নং রেল গেট এলাকার পৌঁছলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় শিবিরের মিছিল থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে অতর্কিতভাবে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা হয়।
এক পর্যায়ে কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই শিবির ক্যাডাররা সদর মডেল থানার ওসি মঞ্জুর কাদেরকে বহনকারী পুলিশের গাড়িটি ভাঙচুর শুরু করে ও থান কাপড় বহনকারী একটি ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন পুলিশ পাল্টা অ্যাকশনে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়।
শিবির ক্যাডারা বিচ্ছিন্নভাবে পুলিশের উপর বিভিন্ন দিক থেকে হামলা চালায় ও লাঠিপেটা করতে থাকে। শুরু হয় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ। প্রায় আধাঘণ্টার সংঘর্ষে ২নং রেল গেট ও এর আশপাশ এলাকার রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। বন্ধ হয়ে যায় এলাকার সকল দোকানপাট ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
শিবির ক্যাডাররা ৪-৫টি যানবাহন ভাঙচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার সেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে।
এদিকে ২নং রেল গেটের মাত্র শত গজ দূরে জেলা বিএনপির কার্যালয়ে দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে কেক কাটার আয়োজন করা হয়। কিন্তু সংঘর্ষের কারণে ওই অনুষ্ঠান বিলম্ব হয়।
ওসি মঞ্জুর কাদের জানান, পুলিশ মিছিলে বাধা দেওয়ায় তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়।
গত ১৭ অক্টোবর নারায়ণগঞ্জে ১৮ দলের একটি কর্মসূচীতে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত অর্ধশতাধিক আহত হয়। ওই ঘটনার মূলে ছিল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবির। এ দুটি দলের নেতাকর্মীরা সেদিন উস্কানী দিলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে।
১৭ সেপ্টেম্বর বিকেএমইএ এর নির্বাচনের দিনও শহরে ছাত্র শিবিরের মিছিলে পুলিশ বাধা দিলে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।