প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাট গবেষণায় নিয়োজিত সব বিজ্ঞানীকে তার সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, তারা এই অর্থকরী ফসলের সারাবছর ধরে উৎপাদন উপযোগী খরা, লবণাক্ততা ও শীতসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হবেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের বিজ্ঞানীরা পাটের বংশগতির বিন্যাস (জেনোমসিকোয়েন্স) উদ্ভাবন করায় আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, তারা উচ্চ ফলনশীল ও বালাই প্রতিরোধক এবং সারাবছর ধরে উৎপাদন উপযোগী পাটের জাত উদ্ভাবনে সক্ষম হবেন। তিনি মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘উচ্চ ফলনশীল পাট ও পাট বীজ এবং আধুনিক পাট জাগ (পচন) পদ্ধতি’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী এক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণে এসব কথা বলেন। শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার পাট ও পাটজাত পণ্যকে দেশের সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাতে পরিণত করতে পাটের বহুমুখী ব্যবহার ও আধুনিক পাট শিল্প স্থাপনে উৎসাহ দিচ্ছে। বিশ্বব্যাপী দৈনন্দিন জীবনে পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক তন্তুর ব্যবহার ব্যাপক বেড়ে যাওয়ার উল্ল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা আমাদের জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, পাট ও বস্ত্রমন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পাট ও বস্ত্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব এম আশরাফুল মকবুল। পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. এম কামালউদ্দিন সেমিনারের কারিগরি অধিবেশনে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এছাড়া পাট অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এম নাসির উদ্দিন ও ‘উচ্চ ফলনশীল পাট ও পাট বীজ এবং আধুনিক পাট জাগ (পচন) পদ্ধতি’-এর প্রকল্প পরিচালক ড. মঙ্গল সি চন্দ অন্যান্যের মধ্যে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলো ১৯৮২ সাল থেকে ৩০ বছর পর ২০১০-২০১১ অর্থবছরে এই প্রথমবারের মতো ২০ কোটি টাকা মুনাফা করেছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের দায়িত্ব গ্রহণকালে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব মিলগুলোর উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৩৫৭ টন, কিন্তু বর্তমানে তা ৭শ’ টনে উন্নীত হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ঐতিহাসিকভাবে বাংলাদেশ উন্নতমানের পাট উৎপাদনে উর্বর জমি ও অনুকূল আবহাওয়ায় সমৃদ্ধ হওয়ায় এ তন্তু আমাদের জাতীয় ঐতিহ্যে পরিণত হয়েছে। এ ঐতিহ্যকে টেকসই করতে এবং এই অর্থকরী ফসলের উন্নয়নে বর্তমান সরকার ১৬৯ কোটি টাকার প্রকল্প নিয়েছে উল্ল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় কৃষকদের বিনামূল্যে সার, কীটনাশক ও অন্যান্য কৃষি উপকরণ ছাড়াও উন্নতজাতের পাটের বীজ দেয়া হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ ফলনশীল পাট ও পাট বীজ উৎপাদন এবং পাট জাগ (রিবন রেটিং) পদ্ধতিসহ উচ্চ প্রযুক্তির পাট জাগ সম্পর্কিত পঞ্চবার্ষিকী প্রকল্পের আওতায় নির্বাচিত প্রায় ২০ হাজার কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দেশের পাটখাতের উন্নয়নে আওয়ামী লীগের সংশ্ল্লিষ্টতার কথা উল্ল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাটখাতের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে পৃথক পাট মন্ত্রণালয় স্থাপন ও পাটকলগুলোকে জাতীয়করণ করেন। বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর মাধ্যমে আমাদের সোনালী আঁশ হিসেবে পরিচিত পাটের উন্নয়নে অনেক কর্মসূচি নেয়া হয়।