হঠাৎ গোটা স্টেডিয়াম নীরব, নিস্তব্ধ। সাকিবের সকালের আনন্দ, বিকালে দেখা দেয় দুঃখে। অথচ একটু সাবধানী হলেই সাকিব হতে পারতো ১০০-তে ১০০। টেস্ট ক্যারিয়ারে গতকালই সকালে ১০০ উইকেট শিকারীর খাতায় নাম লিখিয়েছেন সাকিব। আর বিকালে সেঞ্চুরি থেকে মাত্র তিন রান দূরে পারমলের বলে সজোরে শট হাঁকালেন। মিডঅফে বল উড়ে গেল আকাশে। সেখানে ফিল্ডার টিনো বেস্ট ভুল করলেন না। ক্যাচ লুফে নিয়ে সাকিবকে দেখালেন সাজঘরের পথ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ চতুর্থদিন মাঠ ছাড়লো ৩৫ রানে পিছিয়ে থেকে। এর আগে দুপুরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ক্রিকেটার হিসেবে টেস্টে একশ’ উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব নিজের দখলে নেন সাকিব। ৩৩ ম্যাচে ৪০.৭৬ গড়ে ১০০ উইকেট নিয়ে এতোদিন সবার উপরে ছিলেন রফিক। আর তার সেরা ৬/৭৭। নিজের ২৮তম টেস্টেই রফিককে পেছনে ফেলে এগিয়ে গেছেন সাকিব। সাকিব রফিকের এই রেকর্ড ভেঙে এগিয়ে যাওয়ায় অনেক খুশি।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন। দিনের নায়ক হয়ে উঠলেন সাকিব আল হাসান। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের ৪টি উইকেট নিয়ে ছুঁয়ে ফেললেন টেস্ট ক্যারিয়ারের ১০০টি উইকেট দখলের ল্যান্ডমার্ক। এর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চতুর্থদিন ব্যাট করতে নেমে ভারতকে ছাড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে এক ইনিংসে দলগত সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড এতদিন ছিল ভারতের। ২০০৭ সালে ঢাকায় ভারত ৩ উইকেটে ৬১০ রান করে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করেছিল। গতকাল খুলনা টেস্টের চতুর্থ দিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৯ উইকেটে ৬৪৮ রান তুলে প্রথম ইনিংস ঘোষণা করে। এই রান স্কোর আরও বড় হতে পারতো। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খুলনায় দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ দিন এক ওভারে দীনেশ রামদিন ও ড্যারেন স্যামিকে সাজঘরে ফেরত পাঠিয়ে রফিকের পাশে দাঁড়ান সাকিব। পরে পরপর দুই বলে বীরাসামি পারমল ও সুনীল নারাইনকে বিদায় করা এই অলরাউন্ডার টেস্ট উইকেট এখন ১০২টি। দ্বিতীয় টেস্টের মধ্যাহ্ন-বিরতি পর্যন্ত ৩২.৫১ গড়ে এই উইকেট নিয়েছেন তিনি। এর আগে তার ম্যাচ সেরা শিকার ৯/১১৫ উইকেট। এই নিয়ে সাকিব ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৯টি উইকেট। তার ১০২টি উইকেটের মধ্যে বাংলাদেশের মাটিতে নিয়েছেন ৬৩টি উইকেট।
অন্যদিকে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৬১ রানের লিড তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশ দল টপ অপর্ডার ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় পড়ে চরম ব্যাটিং বিপর্য়য়ে। মাত্র ৬২ রানেই হারায় ৫ উইকেট। সেখান থেকে ৫ম উইকেটে দলের হাল ধরেন সাকিব ও নাসির হোসেন। গড়ে তোলেন ১৪৪ রানের জুটি। দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে নিয়ে যান এই দু’জন। শেষ বিকালে এক প্রান্ত আগলে রেখে সাকিব তার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১ তম টেস্ট ফিফটি তুলে নেন। এর পর তিনি সেঞ্চুরি থেকে ৩ রান থেকে আউট হন। এর আগে তিনি টেস্টে আরও চারবার ৯০-এর ঘর পার করেছেন। কিন্ত ভাগ্য তাকে সেঞ্চুরি উপহার দেয়নি। ২০০৮ সালে ঢাকাতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৯৬ রান করেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে দ্বিতীয় বার ৯৬ রানে অপরাজিত থাকেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই। আর ২০১০ সালে ঢাকাতেই তিনি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ৯৬ রান। আর গতকাল তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০টি চার ও একটি ছয়ের মারে ১১৭ বল খেলে ৯৭ রান করে আউট হন। তিনি বাংলাদেশের দলের ক্রিকেটার যিনি সর্বোচ্চ ৪ বার নার্ভাস নাইনটিজের শিকার। তার আগে ছিলেন হাবিবুল বাসার ২ বার। তার আউটের পর ৬৪ রান নিয়ে আপরাজিত আছেন নাসির হোসেন।
সাকিব আল হাসানের এই শেষ মুহূর্তে আউট হওয়া প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক স্পিনার মো. রফিক বলেন, ‘আসলে এমন সময় ওর আউট হওয়াটা কারো জন্যই সুখকর হয়নি। নিজের জন্যও না, দলের জন্যও না। ওর শেষ মুহূর্তে আরও সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। তাহলে কাল (আজ) দল আরও ভাল অবস্থানে থাকতো। এই ১০০ উইকেটের চেয়ে এই ১০০ রান ওকে নিয়ে যেতো আরও উচ্চতায়।