ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির নির্বাচনে কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদের নেতৃত্বাধীন প্যানেল জয়লাভ করেছে।
শনিবার এফবিসিসিআই পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে ৩০টি পরিচালক পদের মধ্যে ২০টিতে জয় পেয়েছে আকরামের প্যানেল। এর মধ্যে চেম্বার গ্রুপের ১৫টি পদের মধ্যে ১১টি এবং অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১৫টির মধ্যে ৯টিতে জয়ী হয়েছে এই প্যানেল।
বিকাল সাড়ে পাঁচটায় ভোটগ্রহণ শেষে রাতভর ভোট গণনা চলে। গণনা শেষে সর্বশেষ রোববার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের পরিচালক নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করেন নির্বাচনী বোর্ডের প্রধান সংসদ সদস্য আলী আশরাফ।
এর আগে রাত সাড়ে ১০টার দিকে চেম্বার গ্রুপের পরিচালক নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়।
নির্বাচনে চেম্বার গ্রুপে প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল আনিসুল হক সমর্থিত গণতান্ত্রিক পরিষদ থেকে চার পরিচালক নির্বাচিত হন। আর অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে এই প্যানেল থেকে ৬ জন নির্বাচিত হয়েছেন।
রাজধানীর মতিঝিলে ফেডারেশন ভবনে শনিবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ চলে। ভোটগ্রহণ শুরুতে ২৬ মিনিট দেরি হওয়ায় নির্ধারিত সময় ৪টার পরও ভোট নেয়া হয়।
চেম্বার গ্রুপ থেকে নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্যে আকরামের প্যানেলের আমিনুল হক শামীম সর্বোচ্চ ভোট (২৬২) পেয়েছেন। এ প্যানেল থেকে নির্বাচিত বাকি ১০ পরিচালক হলেন- রেজাউল করিম রেজনু, বজলুর রহমান, মনোয়ারা হাকিম আলী, মমতাজ উদ্দিন, প্রবীর কুমার সাহা, এ কে এম সাইদ রেজা, আব্দুল ওয়াহেদ, জালাল উদ্দিন আহমেদ ইয়ামিন, সিরাজুল হক ও বিজয় কুমার কেজরীওয়াল।
এই প্যানেল থেকে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের নির্বাচিত পরিচালকরা হলেন- মীর নিজামুদ্দিন আহমেদ, আব্দুর রাজ্জাক, কে এম আক্তারুজ্জামান, হারুনুর রশীদ, এম এ মোমেন, শফিকুল ইসলাম ভরসা, সাইদুল ইসলাম হেলাল, আবু মোতালেব ও হেলাল উদ্দিন।
চেম্বার গ্রুপে আনিসুল হক সমর্থিত প্যানেল থেকে নির্বাচিত হয়েছেন আনোয়ার সাদাত, তাবারাকুল তোসাদ্দেক হোসেন, কহিনূর ইসলাম ও গোলাম মোস্তফা তালুকদার।
এই প্যানেল থেকে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের নির্বাচিত পরিচালকরা হলেন- ওবায়দুর রহমান, জালাল উদ্দিন, শাফকাত হায়দার, আবু আলম চৌধুরী, আব্দুল হক ও আনোয়ার হোসেন।
অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে সর্বোচ্চ ভোট পেয়েছেন গণতান্ত্রিক পরিষদের আব্দুল হক (৮৫২)।
সকাল থেকে চলা নির্বাচনে এফবিসিসিআইয়ের মোট ২০০১ সাধারণ সদস্যের মধ্যে ১৮২২ জন ভোট দিয়েছেন। এর মধ্যে চেম্বার গ্রুপের ৩৯০ ভোটারের মধ্যে ভোট দিয়েছেন ৩৮৩ জন। অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ১৬১১ জনের মধ্যে ১৪৩৯ জন ভোট দিয়েছেন।
এবারের নির্বাচনে ৩০টি পরিচালক পদের বিপরীতে দুটি প্যানেল থেকে প্রার্থী ছিলেন ৬৩ জন। এর মধ্যে চেম্বার গ্রুপে ৩০ জন ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপে ৩৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। উভয় গ্রুপের প্রত্যেক সদস্য স্ব স্ব গ্রুপের সর্বোচ্চ ১৫ জন প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন।
নির্বাচিত এই ৩০ জন পরিচালক ও ইতিমধ্যে মনোনীত ১৮ জন পরিচালক আগামী ২৬ নভেম্বর পরিচালকদের মধ্য থেকে সংগঠনের নতুন সভাপতি নির্বাচিত করবেন।
জয়ী প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ ইতোমধ্যে নিজেকে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের পক্ষ থেকে পরিচালক হিসেবে মনোনীত ছিলেন।
অন্য প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা আনিসুল হক ব্যবসায়ীদের এই শীর্ষ সংগঠনের সাবেক সভাপতি ছিলেন। তবে তিনি নিজে এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না।
চেম্বার গ্রুপে মনোনীত পরিচালকরা হলেন- বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির মহব্বত উল্লাহ, বরিশাল চেম্বারের শওকত হোসেন হিরণ, চট্টগ্রাম চেম্বারের এম এ সালাম, ঢাকা চেম্বারের আসিফ ইব্রাহিম, খুলনা চেম্বারের কাজী আমিনূল হক, মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্সের (এমসিসিআই) গোলাম মাঈনুদ্দিন, রংপুর চেম্বারের মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, সিলেট চেম্বারের সালাহ উদ্দিন আলী আহমেদ ও রাজশাহী চেম্বারের মোহাম্মাদ আলী সরকার।
আর অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে মনোনীত পরিচালকরা হলেন- বিএবির কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সীসের (বায়রা) শাহজালাল মজুমদার, বাংলাদেশ ওষুধ শিল্প সমিতির আব্দুল মুক্তাদির, বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের কাজী শাহনেওয়াজ, বাংলাদেশ ইন্সুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের নিজাম উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) কে এম জামান রোমেল, বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিজেএমএ) নাজমুল হক, বাংলাদেশ নীটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) এ কে এম সেলিম ওসমান এবং বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস এসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) জাহাঙ্গীর আলামীন।
৭৩টি ব্যবসায়ী চেম্বার ও ৩২৬টি অ্যাসোসিয়েশন এফবিসিসিআইয়ের সদস্য। এর মধ্যে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৫০টি চেম্বার থেকে ৬ জন করে এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির ২৩টি চেম্বার থেকে ৪ জন করে ভোটার রয়েছেন।
এর বাইরে ‘এ’ ক্যাটাগরির ৩১৮টি অ্যাসোসিয়েশন থেকে ৫ জন করে এবং ‘বি’ ক্যাটাগরির আটটি অ্যাসোসিয়েশন থেকে ৪ জন করে ভোট দেয়ার সুযোগ পেয়েছেন।
তবে নির্বাচনে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন পক্ষে কারা ভোটার হবেন, তা সংশ্লিষ্ট সংঠনের পরিচালনা পর্ষদই নির্ধারণ করে।
নির্বাচনে দিনভর উত্তেজনা
দিনভর উত্তেজনার মধ্যে চলা নির্বাচনে দুপুর ১টার দিকে অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে আনিসুল হক সমর্থিত প্যানেলের ভোটার হাজী আমিরুদ্দীন বিপু তাকে মারধরের অভিযোগ করেন।
গণতান্ত্রিক পরিষদের এই সমর্থক দাবি করেন, কাজী আকরাম উদ্দিন আহমদ নেতৃত্বাধীন প্যানেলের সমর্থকরা তাকে মারধর করেছে।
আমিরুদ্দীন পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি, তার ভোটার নম্বর ৯৪৩।
সকালে আনিসুল হকও ফেডারেশন ভবনে গিয়ে প্রতিপক্ষের বাধার মুখে পড়েন। ভোটার কিংবা প্রার্থী না হওয়ার পরও তার সেখানে যাওয়া নিয়ে আপত্তি তোলা হয়।
পরে আনিসুল হক ঢাকা চেম্বার ভবনে অবস্থান নেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, তিনি আইনি সীমা লঙ্ঘন না করলেও তাকে বাধা দেয়া হয়।
এদিকে ব্যালট বাক্স এবং প্রার্থীদের এজেন্টদের বসার স্থান নিয়ে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি সালমান এফ রহমান এবং নির্বাচনী বোর্ডের কর্মকর্তাদের বদানুবাদের কারণে ভোটগ্রহণ শুরুতে ২৬ মিনিট দেরি হয়।
ভোটগ্রহণ শেষে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু হয়েছে।
চেম্বার গ্রুপ থেকে পরিচালক পদে নির্বাচিত একমাত্র নারী মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, “নির্বাচনের ফলাফলে আমি খুশি ও আনন্দিত। গত মেয়াদেও আমি নির্বাচিত হয়েছিলাম। তখন যে সমস্ত কাজ করতে পারিনি এবার তা করব।
“আমি জেলা জেলায় ঘুরেছি। সেখানে শুধু সমস্যাই নেই, সম্ভাবনাও আছে। সমস্যাগুলো সমাধানের পাশাপাশি সম্ভাবনাগুলো কাজে লাগানোর চেষ্টা করব।”
নির্বাচন পদ্ধতি
প্রতি দুই বছর পরপর এফবিসিসিআইর পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচন হয়। পর্যায়ক্রমে চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে প্রতি দুই বছর পরপর সভাপতি নির্বাচন করা হয়।
এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পরিষদের মোট ৪৮ সদস্যের মধ্যে ১৮ জন পরিচালক মনোনীত হন নির্ধারিত নয়টি সদস্য চেম্বার ও নয়টি অ্যাসোসিয়েশনের মধ্য থেকে। প্রত্যেকটি থেকে একজন করে সদস্য নেয়া হয়, যাদের সাধারণ সদস্যদের সমর্থন বা ভোটের দরকার হয় না।
এ ছাড়া বাকি ৩০ জন পরিচালককে সাধারণ সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত হতে হয়। এই ৩০ জনের মধ্যে ১৫ জন চেম্বার গ্রুপ থেকে এবং ১৫ জন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপ থেকে নির্বাচিত করা হয়।
নির্বাচিত ও মনোনীত পরিচালকরা আগামী ২৬ নভেম্বর সভাপতি, প্রথম সহ-সভাপতি ও সহ-সভাপতি নির্বাচিত করবেন। ২৯ নভেম্বর নির্বাচিত পর্ষদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবে বর্তমান কমিটি।