চীনের ৫১টি কোম্পানি বাংলাদেশে চামড়াজাত সামগ্রী উৎপাদনে যৌথ উদ্যোগে শিল্প স্থাপনের অফার দিয়েছে। বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় তাদের প্রস্তাব সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করছে। তারা স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত চামড়া ব্যবহার ও শ্রমিকদের কাজে লাগাবেন। চীনে শ্রমিকদের মজুরি অনেক বেশি এবং এই শিল্প পরিবেশবান্ধব নয় বলে চীনা কর্তৃপক্ষ তাদের কারখানা সরিয়ে নিতে বা বন্ধ করে দিতে বলেছে। এ অবস্থায় তারা চীনে স্থাপিত কারখানার সমস্ত কলকব্জা বাংলাদেশে স্থানান্তর করবে। বাংলাদেশ সরকারের অনুমতি পেলে তিন মাসের মধ্যেই তারা এ স্থানান্তর করতে চেয়েছে। এদিকে সরকার ঈদে কোরবানির চামড়া রপ্তানির সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে। ট্যানারি ও ফ্যাক্টরি মালিকদের অনুরোধে সরকার এ পরিকল্পনা পরিহার করেছে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব খবর জানা গেছে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং চামড়াজাত সামগ্রী উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরি মালিক সূত্রে জানা যায়, যৌথ উদ্যোগে চীনের ৫১টি কোম্পানি এখানে ৬০টিরও বেশি কারখানা স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছে। উৎপাদিত চামড়াজাত পণ্য তারা প্রধানত চীনেই রপ্তানি করবে। এতে বাংলাদেশের কয়েক হাজার শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। মজুরিও পাবে তুলনামূলকভাবে বেশি। চীনে শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি এবং বাংলাদেশে অপেক্ষাকৃত অনেক কম বলে চীনা উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগেই অধিকতর আগ্রহী। স্থানীয় কয়েকজন চামড়া ফ্যাক্টরির মালিক এতে আগ্রহী হলেও অন্যরা বিপরীত দিকটাও সরকারকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে বলেছেন। বাংলাদেশের চামড়াজাত পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে ইতালিসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। চাহিদা পূরণের জন্য বছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন বর্গমিটার চামড়া তাদের আমদানি করতে হয়। তাদের মোট চাহিদা ২২ মিলিয়ন বর্গমিটার চামড়া। চীনের কোম্পানিগুলো স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত চামড়াই ব্যবহার করবে। এতে দেশীয় কোম্পানিগুলোকে তাদের চাহিদা পূরণের জন্য আমদানির ওপর নির্ভরতা অনেক বেড়ে যাবে। গত ৫ই নভেম্বর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ট্যানারি মালিক ও ফ্যাক্টরি মালিকদের সঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রীর সভায় এ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অনুরোধ করা হয়। বিষয়টি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ভাবিয়ে রেখেছে। সরকারের উচ্চতর পর্যায়ে আলোচনা করেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এদিকে গত কোরবানির ঈদে জবাই করা পশুর প্রায় ৭০ লাখ পিস ট্যানারি মালিকরা সংগ্রহ করছেন। এ দিয়ে তাদের বার্ষিক চাহিদার ৬০ ভাগ পূরণ হবে। ঢাকাসহ সারা দেশেই মানুষ কোরবানির পশুর চামড়ার ন্যূনতম দামও পাননি। আন্তর্জাতিক বাজারে চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার কথা বলা হলেও প্রকৃত অবস্থা তা নয়। দু’মাস আগে দাম কিছুটা কমেছিল। এখন বাড়ছে। সরকার ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করেনি বলে যে অভিযোগ করা হয় তা-ও ঠিক নয়। ট্যানারি মালিকদের কাছে ৪ কোটি টাকার চামড়া মজুত ছিল বলে তারা বেশি চামড়া কিনতে উৎসাহী হননি। ট্যানারি মালিকরা তাদের প্রতিনিধিদের কম হারে টাকা দিয়েছেন বলেই মধ্যস্বত্বভোগী, মওসুমি ব্যবসায়ী, ফড়িয়ারা সুযোগ পেয়েছে।
চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ায় সরকার নিজেই চামড়া রপ্তানির ঘোষণা দিয়েছিল। ট্যানারি ও ফ্যাক্টরি মালিকদের অনুরোধে সরকার এখন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে।