প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রমিকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার আহ্বান জানিয়ে কলকারখানায় নাশকতামূলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ করতে জনগণকে সজাগ থাকতে ও এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতের চেয়ে কলকারখানায় পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এরপরও কেউ যাতে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের মাধ্যমে কলকারখানায় উৎপাদন ব্যাহত করতে না পারে সে ব্যাপারে আপনাদের সজাগ থাকতে হবে।
মঙ্গলবার তিন দিনের বস্ত্র মেলা-টেঙবাংলা-২০১২ উদ্বোধনকালে যে কোনো দুর্ঘটনায় শ্রমিকদের নিরাপদ নির্গমন নিশ্চিত করতে কলকারখানার মালিকদের প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, যে কোনো দুর্ঘটনায় শ্রমিকরা যাতে তাদের কর্মস্থল থেকে নিরাপদে বেরিয়ে আসতে পারে এ জন্য আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে।
তিনি যে কোনো শিল্প-কারখানা স্থাপনের সময় পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণের জন্য মালিকদের পরামর্শ দিয়ে বলেন, পানির অভাবে অনেক সময় দ্রুত আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যায় না।
বাংলাদেশ টেঙটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) দেশের বিকাশমান তৈরি পোশাক খাতে স্থানীয় বস্ত্রের ব্যবহার আরো বাড়াতে হোটেল রূপসী বাংলায় পঞ্চমবারের মতো এ দ্বিবার্ষিক প্রদর্শনীর আয়োজন করে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন। এতে এফবিসিসিআই সভাপতি এ কে আজাদ চৌধুরী ও বিটিএমএ সভাপতি জাহাঙ্গীর আল আমিন বক্তৃতা করেন। বিটিএমএ উপদেষ্টা জিকেএম তৌফিক হাসান দেশের বস্ত্র খাতের ওপর মাল্টিমিডিয়া প্রদর্শন উপস্থাপন করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে গত শনিবার তাজরিন গার্মেন্টসে অগ্নিকান্ডে নিহত ১০৯ এবং চট্টগ্রামে ওভারপাসের গার্ডার ভেঙ্গে নিহত ১৩ জনের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, তাজরিন গার্মেন্টসে দুর্ঘটনার ব্যাপারে তদন্ত চলছে। তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
অগ্নিকান্ডকে দুঃখজনক ও অনাকাঙিক্ষত উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকার নিহত ও ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মেধা, দক্ষতা ও সামর্থ্য কাজে লাগিয়ে দেশকে বস্ত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে তাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, আপনাদের পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি এবং গবেষণা ও উন্নয়নের পাশাপাশি উৎপাদনশীলতা এবং নতুন বাজার সমপ্রসারিত করতে হবে।
কলকারখানায় গ্যাসের অপর্যাপ্ততা সম্পর্কে তিনি বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্রসীমা বিরোধে বিজয়ের পর বঙ্গোপসাগরে গ্যাস ও তেল উত্তোলনে ব্লক নির্ধারণ করা হয়েছে।
শিগগিরই আমরা এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করবো।
শেখ হাসিনা বলেন, আশির দশকে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাজার সৃষ্টি হওয়ায় রপ্তানিমুখী টেঙটাইল শিল্প স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আপনারা এগিয়ে আসেন। ধীরে ধীরে টেঙটাইল খাতে বিনিয়োগ বাড়ে।
তিনি বলেন, ১৯৯৯ সালে একটি বিদেশি সংস্থা টেঙটাইল খাতে বাংলাদেশের সম্ভাবনার ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, বাংলাদেশে টেঙটাইল শিল্পে বিনিয়োগ লাভজনক হবে না। এর পরিবর্তে প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সুতা ও বস্ত্র আমদানি করে তৈরি পোশাক প্রস্তুত করাই যুক্তিযুক্ত হবে। কিন্তু আমরা তা মানিনি। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএকে এক টেবিলে আনি। একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করার ব্যবস্থা করি। টেঙটাইল শিল্প স্থাপনে উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেই। মূলধন জোগাড় করি। তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে নগদ সহায়তাও বাড়িয়ে দেই।