ঢাকা, ডিসেম্বর ০৫: বাণিজ্যের পথ ধরে বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৯১ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্যের কথাও জানিয়েছেন তিনি।
বিদেশে বাংলাদেশের ব্যবসা সম্ভাবনাকে আরো প্রসারিত করতে বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে পরিচিতিমূলক আন্তর্জাতিক সেমিনারের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “বাংলাদেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তিকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার মতো অনেক সম্পদই আমাদের আছে। তবে ব্যবসা-বাণিজ্য খাতের উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং আমার মতে সবচেয়ে কার্যকর উদ্যোগ।”
একটি দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য ইতিবাচক ভাবমূর্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, এটি নির্ভর করে পারস্পরিক সম্পর্ক, ব্যবসা-বাণিজ্য এবং অন্যান্য কর্মকাণ্ডের ওপর।
“চীনসহ বিশ্বের অনেক দেশে কিছু কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের জন্য নতুন এক সম্ভাবনার সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এখন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার জন্য আগ্রহী’, যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক অর্থনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে বলেও মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তার মতে, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে বহুপাক্ষিক সংযোগ রক্ষা করা গেলে এ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে আরো গতিশীলতা আসবে।
এজন্য বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
বক্তব্যের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ চার জাতীয় নেতা, মুক্তিযুদ্ধের ৩০ লাখ শহীদ এবং নির্যাতিত ২ লাখ মা-বোনকে স্মরণ করেন।
তিনি বলেন, “আমাদের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। আজকের যে পশ্চাৎপদতা তার অন্যতম কারণ দেশে দীর্ঘদিন গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অনুপস্থিতি এবং অতীতের সরকারগুলোর অদূরদর্শিতা বা ভুল পদক্ষেপ।”
এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন বলেও উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী রূপকল্প ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্য অর্জনে বেসরকারি খাতের ভূমিকার ওপরও গুরুত্ব দেন।
তিনি বলেন, “আমি মনে করি, শিল্পায়ন এবং ব্যবসা-বাণিজ্য প্রসারের মাধ্যমে বেসরকারি খাতকে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে।”
ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় আরো নতুন ৬০ লাখ কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তা অর্জনে প্রায় এক লাখ ২০ হাজার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থাপন করতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “এজন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ।”
তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশ বিশ্বে দ্বিতীয় অবস্থানে থাকার পাশাপাশি এ দেশের ফার্মাসিউটিক্যালসও আন্তর্জাতিক মান অর্জন করেছে বলে শেখ হাসিনা উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে পৃথিবীর প্রায় ৯২টি দেশে বাংলাদেশি ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। এ দেশের প্রায় আট মিলিয়ন জনশক্তি বিভিন্ন দেশে কর্মরত আছে।
বিনিয়োগকারীদের সুরক্ষা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ব ব্যাংকের তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ২০তম উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, “ভারত, চীন ও ভিয়েতনামের অবস্থান বাংলাদেশের পেছনে।”
যোগাযোগ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন উদ্যোগের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
‘ব্র্যান্ডিং ফর বিজনেস’ শীর্ষক এই আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন করায় ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্ট, ক্যাটালিস্ট ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।
ঢাকা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের (ডিসিসিআই) সভাপতি আসিফ ইব্রাহিম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন।
অন্যদের মধ্যে সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত উরস হেরেন, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী ফারুক খান, বাণিজ্য মন্ত্রী জি এম কাদের, শিল্পমন্ত্রী দিলীপ বড়–য়া এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।