বার্তা৭১ডটকমঃ বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) নির্বাচনে জয়ের দাবি করেছে সরকার সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)।
অন্যদিকে ভোট গণনা শেষ হওয়ার আগেই কারচুপির অভিযোগ এনে ফল প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশ (ড্যাব)।
দিনভর ভোটগ্রহণের পর তোপখানা রোডে বিএমএ ভবনে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত গণনা চলছিল। শুক্রবার ফলাফল ঘোষণা হবে বলে বিএমএ নির্বাচন পরিচালনা কমিটি জানিয়েছে।
গণনা চলার মধ্যে এগিয়ে থাকা স্বাচিপ নেতারা দাবি করেছেন, তাদের প্যানেল জয়ী হয়েছে। অন্যদিকে রাত সোয়া ১টার দিকে ড্যাবের সব এজেন্ট বেরিয়ে এসে কারচুপির অভিযোগ তোলেন।
এই নির্বাচনে সভাপতি পদে স্বাচিপের প্রার্থী মাহমুদ হাসান এবং মহাসচিব পদে প্রার্থী ইকবাল আর্সলান। বিএনপি সমর্থক চিকিৎসকদের সংগঠন ড্যাবের প্যানেল থেকে সভাপতি পদে এ কে এম আজিজুল হক ও মহাসচিব পদে এ জেড এম জাহিদ হোসেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
সংগঠনের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে সারাদেশে মোট ৬৭টি কেন্দ্রে ভোট দেন ৩৩ হাজার ৮৯২ জন ভোটার। এর মধ্যে কুষ্টিয়া কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়েছে। ব্যালট পেপার ছিনতাই হওয়ায় চট্টগ্রামেও ফলাফল ঘোষণা করা হয়নি।
রাত সোয়া ১টা পর্যন্ত ঢাকাসহ ৫৯টি কেন্দ্রের ফলাফলে দেখা যায়, মাহমুদ হাসান-ইকবাল আর্সলান প্যানেল জয়ী হয়েছে।
বাকি ৬টি কেন্দ্রেও নিজেদের এগিয়ে থাকার তথ্য জানিয়ে ইকবাল আর্সলান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের পক্ষেই ভোটারদের রায় মিলেছে, তারাই জিততে চলেছেন।
এই নির্বাচনে সর্বাধিক ভোটার ঢাকা কেন্দ্রে। এখানে ১৩ হাজার ৩৩২ ভোটারের মধ্যে ৮ হাজার ১২০ জন ভোট দিয়েছেন।
এই কেন্দ্রে সভাপতি পদে মাহমুদ হাসান পেয়েছেন ৪ হাজার ৬৬৯ ভোট, তার প্রতিদ্বন্দ্বী আজিজুল হক পেয়েছেন ৩ হাজার ৪৯৯ ভোট।
মহাসচিব পদে ইকবাল আর্সলান ঢাকায় পেয়েছেন ৪ হাজার ৩৭০ ভোট, তার প্রতিদ্বন্দ্বী জাহিদ হোসেন পেয়েছেন ৩ হাজার ৬৩৩ ভোট।
ভোট গণনার মধ্যে গভীর রাতেও দুই পক্ষের চিকিৎসকদের ব্যাপক উপস্থিতি ছিল বিএমএ ভবনে। দুই পাশে দাঁড়িয়ে স্লোগানও দিচ্ছিল তারা। তাদের মাঝখানে পুলিশ অবস্থান নেয়।
ভোটগণনাস্থলে থাকা ড্যাবের সব এজেন্ট রাত সোয়া ১টার দিকে জাহিদ হোসেনের নেতৃত্বে বেরিয়ে আসেন। মহাসচিব প্রার্থী জাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, “এখানে ভোট চুরি নয়, ডাকাতি হয়েছে।”
একটি কেন্দ্রে ব্যালট বাক্সে মোট ভোটের চেয়ে ৩০১টি ব্যালট পেপার বেশি পাওয়া গেছে দাবি করে তিনি বলেন, “আমরা এই নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করছি। নতুন করে নির্বাচন দিতে হবে।”
ড্যাবের এই দাবির প্রতিক্রিয়ায় স্বাচিপের মহাসচিব প্রার্থী ইকবাল আর্সলান সাংবাদিকদের বলেন, “তাদের এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ সারাদিন ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সবাই আমরা একসঙ্গে ছিলাম, গণনার সময়ও ছিলাম, ফলাফল যখন প্রায় চূড়ান্ত তখন তাদের এই বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।”
বিএমএ’র ৪১ সদস্যের কার্যকরি পরিষদে সভাপতি ও মহাসচিবের পর গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদে স্বাচিপের প্রার্থীরা হলেন উত্তম কুমার বড়–য়া ও এহসানুল কবীর জগলুল।
সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোষাধ্যক্ষ পদে সরকারবিরোধী প্যানেলের প্রার্থীরা হলেন- আব্দুল ওয়াহাব ও মোস্তাক রহিম স্বপন।
বিচ্ছিন্ন গোলযোগের অভিযোগের মধ্যে ভোটগ্রহণ হলেও বিএমএ নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি আবদুর রহমান খান দাবি করেছেন, সার্বিকভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে।
তিনি বার্তা৭১ডটকমকে বলেন, “কয়েকটি জায়গা থেকে গোলযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবেই ভোটগ্রহণ শেষ হয়েছে।”
নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সভাপতি জানান, শুক্রবার বিকালে আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হবে।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সমর্থক চিকিৎসকরা। শরীয়তপুরেও তারা কারচুপির অভিযোগ তোলেন। ব্যালটে ত্রুটির কারণে কুষ্টিয়া কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।
সুত্রে জানা যায় ব্যালট পেপার ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ায় বিএমএ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের ফল ঘোষণা করা যায়নি।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে গভীর রাতে নগরীর জিইসি’র মোড়ে বিএমএ কার্যালয়ের সামনে স্বাচিপ প্যানেল এবং একই সংগঠনের বিদ্রোহী সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে দেখা যায়, স্বাচিপের চট্টগ্রাম ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী মো. শরিফ ও বিদ্রোহী প্রার্থী মিনহাজুর রহমানের ভোট সমান।
পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শেষ ব্যালট গণনার সময় বিএমএ’র গণনা কক্ষে গিয়ে স্বাচিপ চট্টগ্রাম জেলা শাখার সহ-সভাপতি প্রার্থী মাহবুবুল আলমের নেতৃত্বে একদল চিকিৎসক ব্যালট পেপার ছিড়ে ফেলেন এবং একটি বুথের সব ব্যালট পেপার নিয়ে যান। তখন দুই পক্ষের সংঘর্ষ বাঁধে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক কাজী শফিকুল আলম বার্তা৭১ডটকমকে বলেন, “ভোট গণনার শেষ পর্যায়ে কে বা কারা এসে ব্যালট ছিনতাই করে নিয়ে গেছে। কারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে আমরা তা জানি না। বিষয়টি আমরা দেখছি।”
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. শহিদুল¬াহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে পুলিশ গিয়ে উভয়পক্ষকে সরিয়ে দেয়।
সাধারণ সম্পাদক পদে স্বাচিপের বিদ্রোহী প্রার্থী মিনহাজুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, “আমার বিজয় নিশ্চিত জানতে পেরে তারা ব্যালট পেপার ছিনতাই করেছে। আমি এর বিচার চাই।”