ঢাকা, ২৯ এপ্রিল: বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এম ইলিয়াস আলীকে ফিরিয়ে দেয়ার দাবিতে সারা দেশে চতুর্থ দিনের হরতাল শেষ হয়েছে রোববার। একই দাবিতে সোমবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। হরতাল শেষে বিকেলে নতুন কর্মসূচি ঘোষিত হবে, যদি এই সময়ের মধ্যেও ইলিয়াস আলীকে না পাওয়া যায়।
প্রথম দিনের হরতাল গাড়ি ভাঙচুর, গাড়িতে আগুন, ককটেল বিস্ফোরণ, ধাওয়া, পাল্টা-ধাওয়া ও গ্রেফতারের মধ্যে শেষ হয়েছে। আগামীকালের হরতাল সামনে রেখে রাত নয়টার পর এখন পর্যন্ত কোথাও আগুন বা ভাঙচুরের খবর পাওয়া যায়নি।
দলের নেতা ইলিয়াস আলী নিখোঁজ হন গত ১৭ এপ্রিল। এরি মধ্যে পার হয়ে গেছে ১১ দিন। বিএনপি প্রথম থেকেই অভিযোগ করছে ইলিয়াস আলীকে সরকারের এজেন্সির লোকেরাই ধরে নিয়ে গেছে। তাই তারা বার বার সরকারের কাছে দাবি করছে ইলিয়াস আলীকে জীবিত তাদের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার। অন্যদিকে সরকারের মন্ত্রী ও দায়িত্বশীলেরা বলছেন ইলিয়াস আলী কোথায় আছে তা এখনো তাদের কাছে স্পষ্ট নয়। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ইলিয়াস আলী তার নেত্রীর নির্দেশে কোথাও লুকিয়ে থাকতে পারেন। অন্যদিকে দলের মন্ত্রীরা বলছেন, ইলিয়াস আলীকে জীবিত খুঁজে বের করা হবে।
সরকার ও বিরোধী দলের এই কথা চালাচালির ফাঁকে ইতিমধ্যে হরতাল পালন হয়েছে জাতীয়ভাবে চার দিন। আর সিলেটে হয়েছে একদিন। মারা গেছে অন্তত ছয় জন। এর মধ্যে বিএনপির দলীয় কর্মি রয়েছে চারজন আর সাধারণ মানুষ দু’জন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন হরতালে তাদের হাজার হাজার কোটি টাকা লোকসান যাচ্ছে। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় ব্যাঘাত ঘটছে। খেটে খাওয়া মানুষের রুটি রুজি বন্ধ হয়ে আছে। অনেকের চিকিৎসা ব্যাহত হচ্ছে। কেউ বা বিদেশে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়ছেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিরোধী দলের নেতারা যারা হরতাল ডাকেন তাদের দু’চারজন ছাড়া বাকিরা বাসায় টেলিভিশন দেখেই হরতালের দিনটি আমেজে কাটিয়ে দেন। তৃণমূলের কিছু কর্মি রাস্তায় নেমে পুলিশের পিটুনি আর ধর-পাকড়ের শিকার হচ্ছেন। ১৮ দলীয় জোটের নেতারা গুলশানে গিয়ে খালেদা জিয়ার কাছে বার বার ওয়াদা দিচ্ছেন তারা হরতালে মাঠে থাকবেন। কিন্তু গত চারদিনের হরতালে তাদের কাউকে মাঠে পাওয়া যায়নি। একমাত্র লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান রোববার সকালে বিএনপি কার্যালয়ে প্রবেশের সময় গ্রেফতার হন। আর এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্তুজা সকালে বিএনপি অফিসে প্রবেশ করে সারাদিন সেখানেই অবস্থান করেন। এসবই হরতালের খণ্ড চিত্র।
আগামীকাল ঘোষিত হরতালের শেষ দিন। নতুন কি কর্মসূচি দেয়া হবে তা এখনো খোলাসা করেননি বিএনপি’র মুখপাত্র ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। কাল বিকেলে হরতাল শেষে ঘোষণা দেয়া হবে জানিয়েছেন তিনি।
তবে গত মঙ্গলবার স্থায়ী কমিটির মিটিং আর বুধবার ১৮ দলীয় জোট’র মিটিং-এ পুরো সপ্তাহ লাগাতার হরতালের সিদ্ধান্ত হলেও তা দেয়া হয়নি মে দিবসের কারণে। পহেলা মে শ্রমিক দিবস সরকারি ছুটি। এই দিনে হরতাল দেয়নি বিরোধী দল। এরপর ২ ও ৩ মে হরতাল দেয়ারও একটা সিদ্ধান্ত হয়েছিল। কিন্তু আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারী ক্লিনটন ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রণব মুখার্জি একই দিন ৫ মে ঢাকায় আসছেন। যদিও মির্জা ফখরুল উদাহরণ দিয়ে বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঢাকা সফরের দিন হরতাল দিয়েছিল বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। তবে বিএনপি কি করবে তা দেখার বিষয়। জানা যাবে আগামীকাল বিকাল পাঁচটার পরেই।