ঢাকা, ৫ ডিসেম্বর: আর একটি জয়, তবেই সিরিজ জয়ের স্বপ্ন পূরণ হবে স্বাগতিক বাংলাদেশের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বুধবার তৃতীয় ওয়ানডেতে সেই লক্ষ্য নিয়েই খেলতে নামছে উজ্জীবিত বাংলাদেশ। দিবা-রাত্রির এই ম্যাচটি মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ সময় দুপুর আড়াইটায়। খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে প্রথম দুই ম্যাচ জিতে ইতোমধ্যে পাঁচ ম্যাচ সিরিজে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে আছে মুশফিকুরের দল।
অতীত হয়ে গেলে সবকিছুরই জায়গা হয় স্মৃতির পাতায়। তাই স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ ক্রিকেট দলেরও বেশ কিছু অর্জন রয়েছে স্মৃতির পাতায়। ঠিক তেমনি একটি আলোকিত অর্জন জলজল করছে স্মৃতির পাতায়। ২০০৯ সালের জুলাই মাসের কথা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে বাংলাদেশ দল। দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ২-০ ব্যবধানে জয়ের পর ওয়ানডেতেও উজ্জলতা ছড়ায় বাংলাদেশ।
তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ৩-০ ব্যবধানে জিতে নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করে টাইগাররা। ঐ স্মৃতিটির বয়স এখন প্রায় সাড়ে তিন বছর হয়ে গেছে। তাই স্বাভাবিকভাবেই ধুলো বাসা বেধেঁছে সেখানে। কিন্তু নতুন ভাবে তেমনই একটি স্মৃতির২ জন্ম দেয়ার সুর্বন সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে।
কারণ পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ দাপটের সাথে জিতে ইতোমধ্যে ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে বাংলাদেশ। শুধু ফল দিয়েই চালকের আসনে নয়, পারফরমেন্সের দিক দিয়েও প্রতিপক্ষ ওয়েস্ট ইন্ডিজের চাইতে বহুগুনে এগিয়ে মুশফিকুরের দল। সর্বশেষ টুয়েন্টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপের শিরোপা জয় করা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে একরকম মাটিতেই নামিয়ে এনেছে বাংলাদেশ।
প্রথম দুই ম্যাচের স্কোর কার্ড, ফল বা পারফরমেন্সের দিকে তাকালে তা স্পষ্টভাবেই অনুমেয়। প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ দলের জয়ের পথ তৈরি করে বোলাররাই। অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অফ-স্পিনার সোহাগ গাজীর ৪ ও অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাকের ৩ উইকেট শিকারের ফলে ৪৬ দশমিক ৫ বলে মাত্র ১৯৯ রানেই অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ফলে জয়ের স্বপ্ন তৈরি হয় টাইগারদের।
কিন্তু তারপরও দলের ব্যাটসম্যানদের বর্তমান ফর্ম তৈরি করে সংশয়। কিন্তু না, পুরনো পথে না হেঁটে ব্যাট হাতে ক্যারিবীয় বোলারদের উপর ছড়ি ঘুরান তামিম ইকবাল-আনামুল হক-নাইম ইসলাম-নাসির হোসেন। আর তাতেই ৫৮ বল অবশিষ্ট রেখে ৭ উইকেটর জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে বাংলাদেশ।
প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশের জয়টা অনেকের কাছেই মনে হয়েছিল অঘটনের। হয়তো প্রথম ম্যাচ বলে নিজেদের পুরোপুরিভাবে মেলে ধরতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। পরের ম্যাচ থেকে ভংকর দলে রুপ নিবে ক্যারিবীয়রা- এমনটা ভাবনা ছিল সবারই। আর দ্বিতীয় ওয়ানডের আগে ক্যারিবীয় অধিনায়ক ড্যারেন সামির কথা আরো স্পষ্ট করে তোলে বিষয়টিকে। তবে বাংলাদেশ দলের চিন্তা ভাবনায় ছিল জয়ের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখে সব আলোচনাকে কবর দেয়া। শেষপর্যন্ত তাই করেছে স্বাগতিকরা।
তবে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শুরুতে ব্যাট হাতে নেমেই বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয় বাংলাদেশ। ২১ রানের মধ্যে তামিম ও নাইম ফিরে গেলেও অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে দলকে রানের পাহাড়ে তুলে দেন ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা আনামুল হক বিজয়। শুধু দলকেই উচ্চতায় তুলেননি তিনি। নিজেকেও নিয়ে গেছেন অনন্য উচ্চতায়। স্বাদ পেয়ে যান ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরির। শেষপর্যন্ত আনামুলের ১২০ ও মুশফিকুরের ৭৯ রানের উপর ভর করে ২৯২ রানের বড় সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ।
এরপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটসম্যানদের নিয়ে একরকম ছেলে-খেলাই করেন স্বাগতিক দুই স্পিনার সোহাগ ও রাজ্জাক। প্রথম ম্যাচের মত এ ম্যাচেও সাকিবের অনুপস্থিতি বুঝতেই দেননি তারা। তাদের ঘূর্নি বিষে পড়ে ৩১ দশমিক ১ বলে মাত্র ১৩২ রানে অলআউট হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর ১৬০ রানের বিশাল জয়ের স্বাদ নিয়ে নতুন রেকর্ডের জন্ম দেয় টাইগাররা। যা ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বোচ্চ রানে জয়ের রেকর্ড বাংলাদেশের।
তাই আরও একটি সিরিজ জয় করার স্বপ্ন নিয়ে খেলতে নামবে বাংলাদেশ। ফর্ম যা বলছে তাতে এ ম্যাচেও ফেভারিট টাইগাররা। কিন্তু দেয়ালে যে পিঠ ঠেকে গেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজের। সিরিজ জয়ের আশা ধরে রাখতে হলে তৃতীয় ওয়ানডেতে জয় ছাড়া কোন বিকল্প পথ নেই ক্যারিবীয়দের। মানসিকভাবে যে হতাশ সফরকারীরা তা বলাই যায়।
তবে ঢাকায় খেলার সুবিধা কাজে লাগিয়ে সিরিজে ফিরতে মরিয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ। খুলনায় দ্বিতীয় ওয়ানডের পর তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন দলপতি ড্যারেন সামি। ঢাকার ম্যাচ দিয়েই নতুনভাবে শুরু করতে চান তিনি। তাই বিশ্বমানের দল হিসেবে পরিচিত ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঘুরে দাড়ালে সিরিজ জয়ের স্বপ্ন আরো দীর্ঘায়িত হবে বাংলাদেশের। এই সিরিজের আগে মোট পাঁচটি সিরিজে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। এরমধ্যে চারটিতে ক্যারিবীয়রা ও একটিতে জয় পায় টাইগাররা। আর এখন পর্যন্ত ১৩বার ওয়ানডে সিরিজ জয়ের স্বাদ পেয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ দল (সম্ভাব্য): মুশফিকুর রহিম (অধিনায়ক), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (সহ-অধিনায়ক), আব্দুর রাজ্জাক, জিয়াউর রহমান, আনামুল হক, জহিরুল ইসলাম, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মমিনুল হক, নাইম ইসলাম, নাসির হোসেন, রুবেল হোসেন, শফিউল ইসলাম, সোহাগ গাজী ও তামিম ইকবাল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ দল (সম্ভাব্য): ড্যারেন সামি (অধিনায়ক), কাইরন পোলার্ড (সহ-অধিনায়ক), ড্যারেন ব্রাভো, ক্রিস গেইল, জেসন হোল্ডার, সুনীল নারাইন, ভিরাসামি পেরমল, কাইরন পাওয়েল, রবি রামপল, কেমার রোচ, আন্দ্রে রাসেল, মারলন স্যামুয়েলস, লেন্ডল সিমন্স, ডোয়াইন স্মিথ, ডেভন থমাস ও টিনো বেষ্ট।