বার্তা৭১ডটকমঃ দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতি তদন্ত পর্যবেক্ষণে বিশ্বব্যাংকের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের আলোচনা কোন মীমাংসা ছাড়াই শেষ হলো।
আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের সন্তোষজনক কোনো তথ্যই জানাতে পারেননি প্যানেল ও দুদক প্রধান। অথচ আজই সিদ্ধান্ত জানানোর কথা ছিল।
দুদক ও বিশ্বব্যাংক প্যানেলের আলোচনা ব্যর্থ হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান গোলাম রহমান। পাশাপাশি পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী কয়েকজনের বিরুদ্ধে দু’একদিনের মধ্যেই ব্যবস্থা নেয়ার চেষ্টা করবো বলেও তিনি জানান।
বুধবার সন্ধ্যা ৭টার সময় বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের সঙ্গে সর্বশেষ আলোচনা শেষে তিনি উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন।
দুদক চেয়ারম্যান জানান, প্যানেলের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। এ আলোচনা থেকে উভয় কমিটি তথ্য আদান-প্রদান করেছি। তাদের বিষয়গুলো আমরা পর্যালোচনা করবো। তবে অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদন আবারো পর্যালোচনা করা হবে। দেশের আইন অনুযায়ীই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সন্ধ্যা ৬টা ৫০ মিনিটে বিশ্বব্যাংক বিশেষজ্ঞ প্যানেল প্রধান (আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান কৌঁসুলি) লুইস মরেনো অকাম্পো সাংবাদিকদের জানান, দুদকের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। এতে আমরা সন্তুষ্ট। আর কিছুই বলা যাবে না। আমরা বিমানবন্দরে যাচ্ছি।
আগে বিশ্বব্যাংকের প্যানেল মিন্টু রোডে অর্থমন্ত্রীর বাসায় এক ঘণ্টা আলোচনা করেন। আলোচনা শেষে বিশেষজ্ঞ প্যানেল দুদকে সাড়ে ৬টায় ফিরে আসলেও আসেননি বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইন।
বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি সাংবাদিকদের জানান, তারা অভ্যন্তরীণ বৈঠকের জন্য দুদক থেকে ৪টা ২০ মিনিটে দুদক ছাড়েন। সম্ভবত তারা আবার দুদকে ফিরে আসবেন।
বিশ্বব্যাংক প্যানেলের দুদকে আসার কথা বুধবার বিকাল ৩টার সময় থাকলেও আসতে বিকেল ৩টা ৩২ মিনিট লেগে যায়। ৩০ মিনিট আলোচনা করে আবার ফিরে যান।
সূত্র জানায়, দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তারা অনুসন্ধান শেষে খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী ১০ জনকে অভিযুক্ত করে ৮৬ পৃষ্ঠার একটি খসড়া জমা দিলেন। এ প্রতিবেদন থেকে ২ জনের নাম বাদ দেয়া নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের সঙ্গে কমিশন ৩টা ৪০ মিনিটে বৈঠকে বসে।
বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রতিনিধি অ্যালেন গোল্ডস্টেইনসহ অন্যরা হলেন প্যানেল প্রধান আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সাবেক প্রধান কৌঁসুলি লুইস মরেনো অকাম্পো, চীনের হংকং বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চলের স্বাধীন দুর্নীতিবিরোধী কমিশনের সাবেক কমিশনার টিমোথি তং এবং যুক্তরাজ্যের গুরুতর প্রতারণা প্রতিরোধ বিষয়ক অফিসের সাবেক পরিচালক রিচার্ড অলডারম্যান।
মূল অনুসন্ধান প্রতিবেদনে ১০ অভিযুক্তরা হলেন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরী, সংসদের হুইপ নূরে আলম চৌধুরীর ভাই নিঙন চৌধুরী, সাবেক সেতু সচিব মোশাররফ হোসেন ভুঁইয়া, সেতুর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগে দরপত্র মূল্যায়নে গঠিত কমিটির সদস্য সচিব কাজী ফেরদৌস, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) নির্বাহী প্রকৌশলী রিয়াজ আহমেদ জাবের, এসএনসি-লাভালিনের স্থানীয় এজেন্ট মো. মোস্তফা এবং এর তিন কর্মকর্তা সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট কেভিন ওয়ালেস, আন্তর্জাতিক প্রকল্প বিভাগের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট রমেশ সাহা ও সাবেক পরিচালক মোহাম্মদ ইসমাইল।
প্রায় একবছর ধরে দুদকের জ্যেষ্ঠ উপপরিচালক এএসএম আবদুল্লাহ-আল-জাহিদ, মীর মো. জয়নুল আবেদীন শিবলী, উপপরিচালক গোলাম শাহরিয়ার চৌধুরী ও মির্জা জাহিদুল আলমসহ পঞ্চাশের বেশি কর্মকর্তা ও পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রাথমিকভাবে ১০ জনকে অভিযুক্ত করে ৮৬ পৃষ্ঠার একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন দাখিল করেন।
গত মঙ্গলবার দাখিল করা এ প্রতিবেদন নিয়েই পর্যায়ক্রমে কমিশন বিশ্বব্যাংকের প্যানেলের সঙ্গে বৈঠক করে।
সূত্র আরো জানায়, দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে পদ্মা সেতু প্রকল্পে ঋণচুক্তি স্থগিত করে বিশ্বব্যাংক।
ঋণ পাওয়ার জন্য চারটি শর্ত জুড়ে দেয় দাতা সংস্থাটি। সেই শর্ত চারটি পালন না করায় ২৯ জুন ঋণচুক্তি বাতিল করে বিশ্বব্যাংক।
এরপর দুর্নীতিতে প্রধান সন্দেহভাজন সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের পদত্যাগ ও ড. মসিউর রহমানকে ছুটিতে পাঠানোর পর চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতু প্রকল্পে ফের সম্পৃক্ত হওয়ার ঘোষণা দেয় বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের দেয়া শর্ত অনুসারে ইতোমধ্যেই পদ্মা সেতুতে পরামর্শক নিয়োগের আর বিশ্বব্যাংকের গঠিত আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেল গত ১৪ অক্টোবর প্রথম দফায় ঢাকায় আসে। দ্বিতীয় বারের মতো প্যানেলটি দেশে আসে ১ ডিসেম্বর।