ভোর ৬টা থেকে ১৮দলীয় জোট এবং মহাজোট পরস্পরকে প্রতিহত করার প্রত্যয় নিয়ে মাঠে নামছে। রাজনৈতিক উত্তেজনায় উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় সাধারণ মানুষ।
নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮দলীয় জোট এর আগে মহাজোট সরকারের বিরুদ্ধে হরতালসহ বিভিন্ন কর্মসূচি দিলেও এই প্রথমবারের মতো রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
বিরোধী জোটের শীর্ষ নেতারা বলেছেন, বিজয়ের মাস আন্দোলনের উপযোগী। জনগণ তাদের অধিকার আদায় করবে। শান্তিপূর্ণ অবরোধ কর্মসূচিতে বাধা দিলে পাল্টা আরো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে। কর্মসূচি সফল করতে তারা সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ অভিযোগ করেন, রাজপথ অবরোধ কর্মসূচি বানচালের পরিকল্পনা করছে সরকার। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গণ গ্রেফতার চলছে। সাধারণ মানুষকে ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। জনগণ এসব উপেক্ষা করে রাজপথ যানবাহন শূণ্য রাখবে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আশা করি সরকার সংঘাতের উস্কানি দেয়া থেকে বিরত থাকবে।
জামায়াত-পুলিশ সহিসংতার প্রসঙ্গ টেনে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের নেতারা বলছে, যুদ্ধাপরাধীদের বাঁচাতে ডিসেম্বরে ১৮দল কর্মসূচি দিয়েছে। বিরোধীদের প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
জনগণের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো রয়েছে সতর্ক অবস্থায়। আইন অমান্যকারীদের তাৎক্ষণিকভাবে সাজা দেওয়ার জন্য ঢাকা মহানগরীতে ১০টি ভ্রাম্যমাণ আদালত থাকবে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, রবিবার ৮ ঘণ্টার অবরোধ কর্মসূচিতে রাজধানীর সঙ্গে সারা দেশের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করতে সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে বিএনপি ও জামায়াত ইসলামী।
বিরোধী জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া গুলশানের নিজ বাসভবন থেকে এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর নয়াপল্টনে দলের কার্যালয় থেকে কর্মসূচি মনিটরিং করবেন।
রাজধানীর অন্তত ৮টি জায়গায় অবস্থান নিয়ে জোটের জ্যেষ্ঠ নেতারা সমাবেশের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ছাত্রদল ১১ এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা থাকবেন ৩৮টি স্পটে। ভোর ৬টায় থেকে মিছিল করারও পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।
কর্মসূচি পালন করতে ইতোমধ্যে পরিবহন মালিক-শ্রমিকসহ সংশ্লিষ্ট নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গাড়ি বের না করার আহবান জানিয়েছে ১৮ দল। অবরোধে দোকান-পাট, অফিস-আদালতসহ সরকারি- বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান খোলা রাখতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই বলে তাদের প্রচার পত্রে জানানো হয়েছে।
অবরোধ চলাকালে জনস্বার্থে জরুরি সেবাদানকারী যানবাহন যথাক্রমে এম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি, লাশ বহনকারী গাড়ি, গণমাধ্যমের গাড়ি, শীতকালীন সামরিক মহড়ায় নিয়োজিত যানবাহন ও কূটনৈতিক মিশন সমূহের দায়িত্বে নিয়োজিত যানবাহন অবরোধ কর্মসূচির আওতার বাইরে থাকবে বলে বিএনপির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানা গেছে।
বিএনপির ঢাকা মহানগর সূত্র জানায়, পোস্তগোলা, যাত্রাবাড়ী ও সায়দাবাদ পয়েন্টে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক সালাউদ্দিন আহমেদ, নয়াবাজারসহ পুরান ঢাকার প্রধান স্পটে নগর বিএনপির আহবায়ক সাদেক হোসেন খোকা, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুরে যুবদল সভাপতি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, আমিনবাজার, গাবতলীয় সড়কে স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম ও যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, উত্তরায় রাজধানীর প্রবেশ মুখে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাজাহান ওমর ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি আজিজুল বারী হেলাল, গুলশানে ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, নগর বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক এম এ কাইউম, মৌচাক মালিবাগে যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এবং মতিঝিলে স্থায়ী কমিটির মির্জা আব্বাস নেতৃত্ব দেবেন।
পাশাপাশি রাজপথে মিছিল-সমাবেশ করবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনগুলো। বঙ্গবন্ধু এভিনিউ দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ঘিরে কর্মসূচি থাকলেও রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মিছিল করার ঘোষণা দিয়েছে তারা।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহাবুব-উল-আলম হানিফ বলেছেন, কোনো রাজনৈতিক দলের গণতান্ত্রিক কর্মসূচিতে বাধা দেওয়ার মানসিকতা আওয়ামী লীগের নেই। তবে কর্র্মসূচিতে জামায়াতের মতো নৈরাজ্য সৃষ্টির চক্রান্ত প্রতিহত করা হবে।
জামায়াতে ইসলামীও সামর্থ অনুযায়ী মাঠে থাকবে বলে দলটির ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ জানিয়েছেন।
অবরোধ কর্মসূচিতে জামায়াত-বিএনপি বোঝাপোড়া আরো স্পষ্ট হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
শনিবার দুপুর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বেশ কয়েকটি গাড়িতে অংগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। এতে পুলিশসহ অন্যরা আহত হয়েছে।