বার্তা৭১ডটকমঃ ১৮ দলীয় জোটের ডাকে রবিবার দেশব্যাপী দুপুর ২টা পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়েছে ব্যাপক সংঘর্ষ, বোমবাজি ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে অবরোধকারীদের সঙ্গে সরকারদলীয় সমর্থক ও পুলিশের ব্যাপক সংঘর্ষ ও ককটেল বিষ্ফোরণ ঘটেছে। হরতাল সমর্থক ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষের সময় রাজধানীর ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে এক যুবক ও সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে একজন নিহত হয়েছে। অবরোধ চলাকালে সারাদেশে কোথাও দূরপাল্লার বাস চলাচল করেনি।
সকাল ৯ টার দিকে রাজধানীর পুরান ঢাকায় জজকোর্ট এলাকায় বিএনপি ও জামায়াতপন্থী আইনজীবীরা অবরোধের সমর্থনে মিছিল বের করে। সে সময় ছাত্রলীগ অবরোধ বিরোধী মিছিল নিয়ে ওই এলাকা প্রদিক্ষণ করছিল। দুই পক্ষের মধ্যে হঠাৎ করে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হলে কয়েকটি ককটেল বিষ্ফোরিত হয় আশেপাশের এলাকায়। সংঘর্ষের সময় বিশ্বজিত নামে এক যুবকের মৃত্যু হয় গণপিটুনিতে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কেউ কেউ বলেছেন, অজ্ঞাত ২০/২৫ জন যুবক সেসময় বিশ্বজিতকে একটি ভবনের নিচে নিয়ে পিটাতে থাকে, গণপিটুনিতেই তার মৃত্যু হয়। বিশ্বজিত শাখারি বাজারে দর্জির কাজ করতো বলে জানা গেছে।
সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুরে সকাল ১১টার পর অবরোধ সমর্থকদের ওপর ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালালে ওয়ারেস আলী নামে এক বৃদ্ধ নিহত হন। নিহত ব্যক্তিকে নিজেদের কর্মী বলে দাবী করেছে জামায়াতে ইসলামী।
সাভারের আমীনাবাজারে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম। রবিবার সকাল থেকে ওই এলাকা দখলে রাখার পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে আওয়ামী লীগ ও পুলিশের হামলায় অবরোধকারীরা পিছু হটতে শুরু করে। এ সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত হন সাবেক এমপি নাজিম উদ্দিন আলম।
এর আগে সকাল ছয়টায় অবরোধের শুরু থেকেই গাবতলী স্ট্যান্ড ও রাজপথ দখলে রাখা অবরোধকারীদের সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ আন্ডারপাসের ওপাশে আমিনবাজারের দিকে হটিয়ে দেয় সরকার দলের সমর্থকরা। এরপর গাবতলী ও আমিন বাজার এলাকায় দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ কর্মীরা দোকান ভাঙচুর ও বিএনপি নেতাকর্মীদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে শুরু করলে অবরোধকারীরা পাল্টা ককটেল ছুঁড়ে। ফলে পরিস্থিতির ওপর ফের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে পুলিশ। সকাল আটটার মধ্যে অন্তত ৫টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনাও ঘটে।
যাত্রাবাড়ীতে সকালের দিকেই রাজপথ দখলে নেয় অবরোধকারীরা। একটি বাসে জামায়াত কর্মীরা বাসে আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করার সময় পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। হজুরাইনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় পিকেটারদের। সকালে পোস্তাগোলা সেতুর পাশে একটি বাসে আগুন দেয় পিকেটাররা।
রাজধানীর শ্যামপুর নতুল আলীবহরে সকাল ৭টা ৩০ মিনিটে একটি তেলবাহি ট্রাক পুড়িয়ে দিয়েছে অবরোধকারীরা। এছাড়া সকাল ৮টার সময় একটি যাত্রীবাহি বাসে আগুন লাগিয়েছে অবরোধকারীরা।
পোস্তগোলার জুরাইন থেকে শ্যামপুরের আলীবহর পর্যন্ত রাস্তায় ফেলে রাখে জলন্ত বাস, সিএনজি ও খাম্বা। এই সব এলাকা দখলে নেয় অবরোধকারীরা। এছাড়া পোস্তগোলা থেকে শ্যামপুর পর্যন্ত রাস্তায় দুইপাশে পার্কিং করা অবস্থায় অন্তত ২৫টি গাড়ি ভাংচুর ও দুটি গাড়িতে আগুন দিয়েছে।
সকাল ৭টার দিকে রাজধানীর শাহাবাগে সকালে ছাত্রদল একটি মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। শিশুপার্কের সামনে একটি সিএনজি অটোরিকশায় আগুন দেয়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে ১০ জনকে আটক করা হয়।
এছাড়া, রাজধানীর পান্থপথ, উত্তরা, জুরাইন, মিরপুর, কাজীপাড়, শেওড়াপাড়ায় পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের সংঘর্ষ হয়েছে। ধোলাইরপাড়ে পুলিশ মিছিলে ধাওয়া দিলে আতঙ্ক সৃস্টির জন্য অন্তত ১০টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে, সেখানে পুলিশের সঙ্গে দীর্ঘ সময় তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে।
রাজধানীর পুরান ঢাকার বংশালে সকালে পুলিশের সঙ্গে পিকেটারদের সংঘর্ষ হয়েছে এবং সেখানেও বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে সেখানে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ভোর থেকেই রাজধানীর মোড়ে মোড়ে পুলিশ মোতায়েন থাকলেও যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটাতে অবরোধকারীদের তৎপর দেখা যায়। খিলগাওঁয়ে বিআরটিসির একটি দোতলা বাসে পিকেটাররা আগুন ধরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে, তবে বাসটি অল্পের জন্য রক্ষা পায়। বিমানবন্দর এলাকা থেকে এক পিকেটারকে আটক করা হয়।
ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে মিরপুর ১ নম্বর মোড়ে গার্মেন্টস কর্মীদের বহনকারী একটি বাসে আগুন দেয়া হয়। সাড়ে ৬টার দিকে মিরপুর-২ নম্বরের সনি সিনেমা হলের সামনে পুড়িয়ে দেয়া হয় আরেকটি বাস।
ভোর ৬টার পর পর রাজধানীর পান্থপথে স্কয়ার হাসপাতালের কাছে পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া শুরু হয়। এ সময় পিকেটাররা পুলিশের একটি ভ্যানে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়লে অবরোধকারীরা বিভিন্ন গলিতে চলে যায়।
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার কাঁচপুরে পুলিশের সাথে জামায়াত শিবির কর্মীদের সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। শিবিরকর্মীর বেশ কয়েকটি গাড়ি ভাংচুর করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে ও কয়েক রাউন্ড রাবার বুলেট ছুড়ে। এসময় কাঁচপুর এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের শিবতলা এলাকায় অবরোধকারী ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৭ জন আহত হয়েছেন। অবরোধকারীরা পুলিশ ভ্যানে অগ্নিসংযোগ করে। রবিবার বেলা ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ হয়।
এদিকে, দুপুর ২টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। জনগণ স্বতস্ফূর্তভাবে অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে বলে দাবি করেন তিনি। সরকার দলীয় লোকজন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উস্কানিতেই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।