ঢাকা, ১১ ডিসেম্বর : একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একজন বিচারকের স্কাইপির মাধ্যমে কথোপকথনের তথ্য ফাঁস হওয়ার পর বিচারের গ্রহণযোগ্যতা ও বিচার শেষ করা নিয়ে দেশি বিদেশি চাপে পড়েছে সরকার। এ ঘটনায় সরকার বিব্রতবোধ করছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।
ট্রাইব্যুনাল-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক ও বেলজিয়াম-প্রবাসী আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন বিশেষজ্ঞ ড. আহমেদ জিয়াউদ্দিনের স্কাইপির মাধ্যমে কথোপকথন সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক প্রকাশ করে। এ ধরনের তথ্য প্রকাশ হওয়ার পর দেশে বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এবং সুপ্রীম কোর্ট বার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন মহল থেকে ওই বিচারপতির পদত্যাগের দাবি ওঠে। এ ঘটনায় সরকারের ভিতরে-বাইরে আলোচনা সমালোচনা চলছে। এ অবস্থায় বিচার কার্যক্রমের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
জানা যায়, পত্রিকায় এ ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশের পর কোন ধরনের প্রতিবাদও জানায়নি ট্রাইব্যুনাল। এবং অনেকটা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে মঙ্গলবার দুপুরে ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি নিজামুল হক পদত্যাগ করেন। তাঁর পদত্যাগের মাধ্যমে বিষয়টির সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করছেন। সোমবার সুপ্রীম কোর্ট আইনজীবী সমিতি নিজামুল হকের পদত্যাগের দাবিতে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছিলেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর আন্তর্জাতিকভাবে বিচার কার্যক্রম নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তারা বলেন, যেখানে বিচারের রায় আগেই ঠিক করা হয় সেখানে কিভাবে বিচারের স্বচ্ছতা ঠিক রাখা সম্ভব ?
এ বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সরকার পক্ষের একজন বিজ্ঞ আইনজীবী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বার্তা ৭১ কে বলেন, যুদ্ধাপরাধের মতো সংবেদনশীল ও স্পর্শকাতর বিচারপ্রক্রিয়া নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল। যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার জন্য শুরু থেকেই দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন একটা স্পর্শকাতর বিষয়ে অগ্রসর হতে গেলে বাধা-বিপত্তি আসাটাই স্বাভাবিক। এটা অন্যান্য মামলার মতো নয়। এখানে সতর্কতার কোনো বিকল্প নেই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারের একজন মন্ত্রী বলেন, ঘটনাটি সরকার ও বিচার বিভাগের জন্য বিব্রতকর। প্রতিটি পদক্ষেপে সতর্ক থাকা উচিত। তবে এটি সম্পূর্ণ ট্রাইব্যুনালের বিষয়।
এ ব্যাপারে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে মঙ্গলবার আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, সরকার এ ব্যাপারে বিব্রত নয়। কথোপকথন নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনকে তিনি ভিত্তিহীন ও বানোয়াট বলেও মন্তব্য করেছেন।
বিচারপতি নিজামুল হক ও আহমেদ জিয়াউদ্দিনের কথোপকথন হ্যাক করে তাঁদের প্রায় ১৭ ঘণ্টার আলাপচারিতার রেকর্ড লন্ডনভিত্তিক সাময়িকী ইকনোমিস্ট সংগ্রহ করে। রবিবার থেকে দৈনিক আমার দেশ পত্রিকা এটি ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ করছে।