বার্তা৭১ ডটকমঃ রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণার শেষদিন মঙ্গলবার। আজ মধ্যরাত থেকেই আনুষ্ঠানিক প্রচার বন্ধ হয়ে যাবে।
প্রচারণার শেষ মুহূর্তে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন প্রার্থী-কর্মী ও সমর্থকরা। মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রায় সব প্রার্থীই ঘরে ঘরে যাচ্ছেন শেষবারের মতো ভোট চাইতে। সব প্রার্থীর কণ্ঠেই একটি সুর দলমত ভুলে রংপুরের উন্নয়নের জন্যই তিনি কাজ করতে চান।
মেয়র পদপ্রার্থীদের মধ্যে যে দুজনের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে তারা হলেন জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা শরীফুজ্জামান ঝন্টু ও জেলা জাতীয় পার্টির পদত্যাগী নেতা মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা।
এর মধ্যে মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিলুপ্ত রংপুর পৌরসভার চেয়ারম্যান ঝন্টু। এক সময় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত ছিলেন এই প্রবীণ নেতা। ভোটারদের কাছে তিনি অনেক বেশি পরিচিত হলেও কেউ কেউ মনে করছেন বয়সের কারণেই শরীফুজ্জামান ঝন্টুর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা কম।
অন্যদিকে, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন হাঁস প্রতীক নিয়ে। ভোটারদের কাছে তার ইমেজ অন্যদের তুলনায় ভালো বলেই মনে করছেন মোস্তফার কর্মী-সমর্থকদের কেউ কেউ। তাদের বক্তব্য, জাতীয় পার্টি নমিনেশন দেয়নি, এতে মোস্তফার জন্য কিছুটা ভালোই হয়েছে। অন্যান্য দলের সমর্থকরাও মোস্তফাকে ভোট দেবেন বলেই ধারণা করছেন তারা।
এদিকে, শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুর কর্মীরা বাড়ি বাড়ি ভোট চাচ্ছেন রংপুরের নেতা ঝন্টু এই পরিচয় দিয়ে। বেশিরভাগ ভোটারের সামনেই তারা ঝন্টুর রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার না করে রংপুরে ঝন্টুর অবদানের কথা বলছেন।
এসব বিষয়ে রংপুরের সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরতান কর্মী ও রংপুর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সমন্বয়কারী সৈয়দ আরিফুল ইসলাম জাস্ট নিউজকে বলেন, ‘ভোটাররা যেমন নির্বাচন নিয়ে উদ্দীপিত তেমনি তারা খুঁজছেন পরিষ্কার ইমেজের প্রার্থী। কিন্তু নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের বেশিরভাগেরই ইমেজ পরিচ্ছন্ন না।’ সৈয়দ আরিফের মতে, ‘নির্বাচনে প্রার্থীদের বিপদ ডেকে এনেছে তাদের দলীয় পরিচয়। আওয়ামী লীগের তিনজন, জাতীয় পার্টির বহিষ্কৃত ২ জন এবং সক্রিয় বিএনপিপন্থি ১ জন প্রার্থী মেয়র পদে নির্বাচন করছেন। কিন্তু ভোটারদের মধ্যে জাতীয় পার্টির প্রতি আগের সেই টান অনেকটাই কমেছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন পার্টি হওয়ায় তাদের ওপরও স্বাভাবিক কারণেই ভোটাররা কিছুটা বিমুখ। আর রংপুরে বিএনপির ভোটব্যাংক খুবই ছোট। এসবের মধ্যে আরও জটিলতা তৈরি করেছে সরকারের মেয়াদ আর মাত্র ১ বছর থাকায়। সৈয়দ আরিফ বলেন, কে আগামীবার সরকার গঠন করবে সেটা নিশ্চিত নয়। তাই ক্ষমতাসীন দলের দিকে ভোট যাবে এমনটাও বলা যাচ্ছে না। এসবের কারণেই ভোটাররা খুঁজছেন প্রার্থীর ব্যক্তিগত ইমেজ। আর প্রচারণার সময় প্রার্থীরাও দলীয় পরিচয় ব্যবহার করার থেকে তা ঢাকতেই ব্যস্ত।
অন্যদিকে, এবারের নির্বাচনে এরশাদ ইমেজ কাজ করছে না বলে জানালেন ভোটাররা। শহরের ঠিকাদার পাড়ার বাসিন্দা ও রংপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স বিভাগের ছাত্র রিফাত সিদ্দিক জাস্ট নিউজকে বলেন, এরশাদ প্রার্থী দিয়েও প্রত্যাহার করায় তার ব্যক্তি ইমেজের ক্ষতি হয়েছে অনেকটা। রিফাত বললেন, এর আগে যে কোনো পৌরসভা বা উপজেলা নির্বাচনে কোনো প্রার্থীর পাশে এরশাদ একঘণ্টা থাকলেই তার বিজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। কিন্তু এবার এরশাদ নিজেই রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইমেজ সংকটে পড়েছেন।
ধাপ এলাকার ভোটার আরমিনা নাজনীন জাস্ট নিউজকে বলেন, তিনি এবং তার পরিচিতরা একটি বিষয়ই নিয়ে ভাবছেন, কাকে ভোট দিলে তাদের এলাকায় কাজ হবে।
মেয়র পদে প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও রংপুরের জন্য কে কী করেছেন সেটা বিবেচনা করেই ভোট দেবেন বলে জানালেন এ নারী ভোটাররা।
এদিকে শহর এবং শহরতলীর প্রত্যেকটি স্থানেই মেয়র প্রার্থীরা ছাড়াও কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা সরব রয়েছেন। মাইকে মাইকে চলছে প্রচারণা। পোলিং এজেন্ট নির্বাচন ও ভোটের আগের মুহূর্তে নিজের ভোটব্যাংক আগলে রাখতে প্রস্তুত প্রার্থীরা।
অন্যদিকে, আইনশৃঙক্ষলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও সতর্ক রয়েছেন যে কোনো রকম সহিংসতা ঠেকাতে। শহরের মোড়ে মোড়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা আরও সতর্ক রয়েছে। রংপুর জেলা পুলিশ সুপার সালেহ মোহম্মদ তানভীর জানিয়েছেন, প্রায় প্রতিটি স্থানেই কাজ করছে পুলিশের স্ট্রাইকিং ফোর্স, বিভিন্ন্ পয়েন্টে থাকছে তল্লাশি চৌকি।
এদিকে রিটার্নিং অফিসার মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মোট ১৭৮টি ভোট কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ হবে। এরমধ্যে শতাধিক কেন্দ্রকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চিহ্নিত করেছে প্রশাসন। এগুলোর চারপাশেই সবসময় সতর্ক নজর থাকবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। এছাড়াও প্রতিটি কেন্দ্রেই ৭ জন অস্ত্রধারী পুলিশ ও আরও ২৪ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করবে। নির্বাচনী এলাকাজুড়ে পুলিশের পাশাপাশি থাকবে র্যাব ও বিজিবি সদস্যরাও। নির্বাচনের দিন ভোর থেকেই মোট ৫১ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।