বার্তা৭১ডটকমঃ নিভু নিভু সূর্য। এনটি ওয়ান স্টুডিও-র ‘দিওয়ানা’ সেটে একটা আলসেমি ভাব। তখন লম্বা টি-ব্রেক চলছে। সবাই আড্ডার মুডে। আজ না কি বেশ রাত অবধি শ্যুটিং চলবে। তাই সকলেই একটু জিরিয়ে নিচ্ছে। একদিকে যীশু-জিৎ চায়ের কাপ নিয়ে দেদার গল্প জুড়েছে। অন্য দিকে ছবির পরিচালক রবি কিনাগি নিজের মতো করে পরের সিনগুলো ঝালিয়ে নিচ্ছেন। কিন্তু শ্রাবন্তী কোথায়? খোঁজ করতেই একজন দেখিয়ে দিল ওঁর মেক-আপ রুম। দরজা ঠেলে ঢুকতেই দেখলাম একটা ছোটখাটো গোল টেবিল বসিয়েছে শ্রাবন্তী। নিজে একটা পর-চুলা পরে কাকে বেশ যেন নকল করছে। তারপর কী হল,?
প্রশ্ন : আপনার তো দেখছি এখন বৃহস্পতি তুঙ্গে! কাঊকে হাত-টাত দেখালেন না কি…
শ্রাবন্তী : (হাসতে হাসতে) আমার তো বৃহস্পতি বার-ই জন্ম। তাই একটু পারশিয়্যালিটি করছে বোধহয়… হা হা হা… না গো, দু’ বছর আমি হাত-টাত কাউকে দেখাইনি। (তারপর আঙুলের রুবিটাকে দেখিয়ে)… বছর দুয়েক আগে একজনকে দেখিয়েছিলাম, উনি আমাকে এই রুবিটা দিয়েছিলেন। তখন থেকে এটাই পড়ি।
প্রশ্ন : আপনি এসবে বিশ্বাস করেন বুঝি!
শ্রাবন্তী : ওরে বাবা! ভীষণ। আমি খুব ঠাকুর-ভক্ত। আমাদের বাড়িতে মাঝে-মাঝেই কীর্তন হয়। মায়াপুরের ইস্কনে আমি তো প্রায়ই যাই। কী যে ভাল লাগে আমার…
প্রশ্ন : আপনি কি কৃষ্ণ-ভক্ত না কি?
শ্রাবন্তী : আমি তো কৃষ্ণের প্রেমে পাগল। সব কিছু ওঁর সঙ্গে শেয়ার করি। আমাদের নিজেদের ভেতর কত কথা হয়, কোথাও কোনও প্রবলেম হলে ওঁকে জিজ্ঞেস করি… এক এক সময় তো মনে হয়, সব কিছু ভুলে গিয়ে শুধু কৃষ্ণনাম জপ করি…
প্রশ্ন : আমার তো ভয় করছে! শেষমেশ বৈষ্ণবী হয়ে যাবেন না তো?
শ্রাবন্তী : (খুব জোরে হাসতে হাসতে) আরে না না, এখনই ওসব নয়। কোনও চান্স নেই। আগে সব কিছু একটু গুছিয়ে নিই, তারপর ভাবা যাবে। আসলে আমার রাধাকৃষ্ণর প্রেমটা না দারুণ লাগে। কী মিষ্টি প্রেম বল! আমার প্রেম ব্যাপারটাই খুব ভাল লাগে। ওই জন্য তো আমি সব সময় রোম্যান্টিক ছবি করতে চাই…
প্রশ্ন : তাহলে আপনার পার্থিব কেষ্ট ঠাকুর, মানে রাজীবের সঙ্গে নিশ্চয়ই চুটিয়ে প্রেম করেছেন?
শ্রাবন্তী : ধুস! কোথায় আর প্রেম করলাম! বিয়েই তো করে ফেললাম…
প্রশ্ন : …তারপর বাচ্চা, কেরিয়ারের চাপ… প্রেমটা আর করাই হল না! আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো, দুঃখ হয় না এখন?
শ্রাবন্তী : সত্যি বলব, ভাবার সময়ই পাই না। ঘরে-বাইরে এত চাপ… আর তাছাড়া যা পেলাম- সেটাই বা ক’জনের ভাগ্যে জোটে বল তো?
প্রশ্ন : আপনার জন্য একটা সুখবর আছে…
শ্রাবন্তী : কী? আরে ওটাই তো আগে বলবে…
প্রশ্ন : বিয়ের পর কোয়েল বলেছেন, খুব বেছে বেছে ছবি করবেন। আপনার মাঠ তো তাহলে অনেকটা ফাঁকা…
শ্রাবন্তী : ধুস, আমি ওসব নিয়ে ভাবি না। আমি আমার মতো কাজ করে যাই। আমার সঙ্গে কারও কোনও কম্পিটিশন নেই। আর তাছাড়া শুভশ্রী-পায়েল ওরাও তো আছে। শুভ আমার খুব ভাল বন্ধুও। আমরা সবাই যে যার মতো কাজ করছি। এখানে গোল দেওয়ার কোনও ব্যাপার নেই।
প্রশ্ন: আচ্ছা এই যে একদিকে অপর্ণা সেন, অন্যদিকে রবি কিনাগি, রাজ চক্রবর্তীদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজ করছেন…
শ্রাবন্তী : (প্রায় থামিয়ে) এরকমটাই তো চেয়েছিলাম। আসলে আমি অভিনয়টাকেই খুব ভালবাসি। সব রকমের অভিনয় করতে চাই। সব ধরনের ছবি করতে চাই, তা না হলে তো আমার অভিনয়টা একপেশে হয়ে যাবে। জানো তো, ছোটবেলায় আমি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে নিজেই অভিনয় করতাম। সবাইকে ডিটো নকল করতাম। আমার মা-বাবা লুকিয়ে লুকিয়ে দেখত আর হাসত। আসলে আমি ছোটবেলা থেকেই অভিনয়টাকে খুব ভালবাসি। মাঝে যখন বাচ্চা-টাচ্চার জন্য সিনেমা করছিলাম না, কী মন খারাপ লাগত আমার। খালি ভাবতাম, আর কি পারব? কিন্তু দেখো, পারলাম তো! ওটা আমার ভেতরের ইচ্ছে।
প্রশ্ন : আচ্ছা, এই যে আপনি সকলকে নকল-টকল করেন, অপর্ণা সেনকে নকল করেছেন?
শ্রাবন্তী : ওরে বাবা, না না। ওঁকে সব সময় একটা অন্য জায়গা থেকে দেখে এসেছি। তবে এই যে বললে, আমার মাথায় ঢুকে গেল… (দুষ্টু হাসি)
প্রশ্ন : অপর্ণা সেনের হাত ধরে অনেক দিন পর আবার ভেঙ্কটেশের সঙ্গে ছবি করছেন…
শ্রাবন্তী : এর আগে ওঁরা আমায় একটা ছবি করার জন্য ডেকেছিলেন, কিন্তু আমি তখন ‘ইডিয়ট’ করছিলাম বলে করতে পারিনি…
প্রশ্ন : কিন্তু বাজারে খবর অশোক ধানুকার ব্যানারে পর পর ছবি করার জন্যই না কি ভেঙ্কটেশের সঙ্গে আপনার একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে?
শ্রাবন্তী : আমার কারও সঙ্গে কোনও গ্যাপ তৈরি হয়নি। আরে মণিদা-শ্রীকান্তদা আমায় সিনেমায় আনল, আমার সঙ্গে ওঁদের কখনও গ্যাপ তৈরি হতে পারে! আর আমার সেকেন্ড ইনিংস অশোক ধানুকার হাত ধরে, তাই ওঁকেও আমি কোনও দিন ভুলতে পারব না। এইসব বাজে রটনা!
প্রশ্ন : আচ্ছা,রাজ চক্রবর্তীর ‘কাঠমান্ডু’ কি আপনি করছেন? আবীর-পরমও তো আছে…
শ্রাবন্তী : হ্যাঁ, রাজদা তো আমায় বলেছে। এপ্রিলে শুরু করবে হয়তো। কিন্তু ছবিটার বিষয়ে আমি বিশেষ কিছুই জানি না। রাজদার সঙ্গে বসতে হবে।
প্রশ্ন : একটা কথা বলুন তো, এত ছবি করছেন… আপনার থেকে পরে এসেও অনেকে বিএমডব্লু, মার্সিডিজ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে কিন্তু আপনি একটা মামুলি আই-টেন চেপে বেড়ান কেন বলুন তো?
শ্রাবন্তী : আমার একটা সুইফট-ও আছে। আসলে আমি সিম্পল ভাবে থাকতেই ভালবাসি। আমার অত তাড়া নেই। কে বলতে পারে কালকের কথা! কালের ঘরে শনি ঢুকলে তখন কে সামলাবে! তার চেয়ে বরং স্টেপ বাই স্টেপ এগোনই ভাল। অবশ্য এবছর বাবা-মাকে বেহালায় একটা ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি। আমি ‘ধীরে চলো’ নীতিতে বিশ্বাসী বাবা!
প্রশ্ন : সেই কবে থেকে সিনেমার নায়িকা হয়েছেন অথচ স্টারডমটা এখনও রপ্ত করতে পারলেন না দেখছি…
শ্রাবন্তী : ওটা আমার একদম আসে না। শ্যুটিং-এর ফাঁকে গম্ভীর গম্ভীর মুখ করে বইয়ের পাতা ওল্টানো… ওরে বাবা, আমার দম বন্ধ হয়ে যাবে। আমি সব সময় লোকের সঙ্গে হইচই, মজা করতেই ভালবাসি। আসলে আমি জয়েন্ট ফ্যামিলিতে মানুষ তো, আমার বড় হওয়াটাই ওইভাবে হয়েছে।
প্রশ্ন : যতই হোক, রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকাটা তো খেতে পারেন না…
শ্রাবন্তী : কে বলেছে! আমি সেটাও খাই। ঢাকা-চাপা দিয়ে গাড়ি থেকে নেমে কতবার ফুচকা খেয়েছি। তবে কেউ চিনতে পারলেই পালাই।
প্রশ্ন : আপনার কৃষ্ণ ঠাকুরের কাছে নতুন বছরের জন্য কী প্রার্থনা করলেন?
শ্রাবন্তী : আরও যেন ভাল ভাল ছবি করি, সবাই যেন ভাল থাকে। আমার বই পড়ার ধৈর্যটা যেন বাড়ে। প্রচুর বই পড়তে হবে জানো!
প্রশ্ন : এ তো সবাই চায়। স্পেশ্যাল কী চাইলেন?
শ্রাবন্তী : (হাসি) বলব?
প্রশ্ন : বলুন…
শ্রাবন্তী : ইশশ…শহিদ কপূরের সঙ্গে যদি একটা ছবি করতে পারি!
প্রশ্ন : ও বাবা! আপনার ‘কলির কেষ্ট’ তাহলে শহিদ কপূর?
শ্রাবন্তী : একদম। আমি পুরো ফিদা (হাসিতে ফেটে পড়লেন, তারপর দম নিয়ে)… আরও একটা জিনিস সব সময় চাই…
প্রশ্ন : কী?
শ্রাবন্তী : পরের জন্মে যেন ছেলে হয়ে জন্মাই…