বার্তা৭১ ডটকমঃ ২১.১২.১২ তারিখটিতে সংখ্যাগুলোর কি চমৎকার মিল! কালকের দিন বাদেই শুক্রবার তারিখটি আমাদের সবার সামনে হাজির হবে। কি হবে সেদিন? মায়া সভ্যতার ক্যালেন্ডারে বিশ্বাসীদের কাছে দিনটি হলো সৃষ্টি জগতের শেষদিন। তারা বিশ্বাস করে যে, সেদিন মহাপ্রলয় হবে। একটি বিরাট ঝড়ে পৃথিবী ওলট পালট হয়ে যাবে। সার্বিয়ার একজন ভবিষ্যৎবক্তা বলেছেন, শুক্রবার রাতে পিরামিড আকৃতির রাতাজ পর্বত জ্বলে উঠবে।
সত্যিই কি সেদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে? এ প্রশ্নের সামনে অনেকেই অসহায় বোধ করছেন। একটা অজানা আশঙ্কা লাখ লাখ মানুষকে গ্রাস করছে। আশ্রয় নেয়ার জন্য অনেকে কংক্রিটের বাংকার খুঁড়েছেন। মহাপ্রলয় থেকে রক্ষা পেতে মায়া ক্যালেন্ডারে বর্ণিত ভবিষ্যদ্বাণীতে বিশ্বাসীরা পবিত্রস্থানগুলোতে ভিড় করছে। ব্রাজিলের একদল লোক আল্টো পারাইসা নামে একটি গ্রামের দিকে ছুটছে। বিশ্বাস করা হয় যে, এ গ্রামে অতি প্রাকৃত শক্তি আছে। এ শক্তি তাদেরকে মহাপ্রলয় থেকে রক্ষা করবে। বলিভিয়ায় পৃথিবীর সর্বোচ্চ স্থান টিটিকাকার মাঝামাঝি সূর্য দ্বীপে অমঙ্গল থেকে রক্ষা পেতে প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে। তুরস্কের সিরিনসি নামে একটি গ্রামের পাশের ৪ শ’ হোটেল ইতিমধ্যে বুক করা হয়ে গেছে। অনেকের ধারণা কুমারী মেরী এখান থেকে স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন। একজন ভারতীয় গুরু দক্ষিণ ইতালির কিসটারনিনো নামে একটি গ্রামকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসাবে শনাক্ত করায় সেখানে লোকজন ছুটে যাচ্ছে। ফ্রান্সের পিরেনিস পর্বতের পাদদেশে পিক দ্য বুকার্ককে নিরাপদ বলে ঘোষণা করা হয়েছে। ফ্রান্সের দুর্ভেদ্য প্রতিরক্ষা ব্যুহ ম্যাজিনো লাইনে শোয়েনেনবার্গ দুর্গের ভূ-গর্ভস্থ গ্যালারি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেয়া হবে। মস্কোতে স্টালিন আমলে নির্মিত ৬৫ মিটার দীর্ঘ ভূ-গর্ভস্থ একটি বাংকারে ৩০০ লোককে আশ্রয় দেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এজন্য জনপ্রতি দিতে হবে ৩০ হাজার রুবল।
যে সভ্যতার ক্যালেন্ডারের ভবিষ্যদ্বাণী নিয়ে এত হৈ চৈ চলছে সে মায়া সভ্যতা কি তা আগে জানা জরুরি। ২৫০ থেকে ৯ শতাব্দী পর্যন্ত মায়া সভ্যতা স্থায়ী হয়েছিল। মধ্য আমেরিকা ছিল এ সভ্যতার প্রাণকেন্দ্র। মেঙিকো, বেলিজ, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস ও এল সালভাদর হলো এ সভ্যতার স্নায়ুকেন্দ্র। মায়া ক্যালেন্ডারের সময় হলো ৫ হাজার ১২৫ বছর। অর্থাৎ তারপরে আর কোনো সময় নেই। সেখানে গিয়ে পৃথিবী থেমে যাবে। ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর হবে সর্বশেষ বাকতুনের সমাপ্তি। বাকতুন হলো মায়া সভ্যতার সুদীর্ঘ একটি যুগ। এ সভ্যতায় এমন ১৩ টি যুগ আছে। তারপর আর কিছু নেই। এক লাখ ৪৪ হাজার দিনের সমষ্টিকে বলা হয় এক বাকতুন। ইউরোপীয়দের পদার্পণের আগে মধ্য আমেরিকায় এ ক্যালেন্ডার ব্যবহার করা হতো। মায়া ক্যালেন্ডার অনুযায়ী মহান স্রষ্টা তিনটি নিষ্ফল বিশ্ব সৃষ্টি করেছিলেন। চতুর্থ বিশ্ব সৃষ্টিতে তিনি সফল হন। মানবজাতি এ চতুর্থ বিশ্বে বসবাস করছে। গ্রেগরীয় ক্যালেন্ডারের হিসাবে ২০১২ সালের ২১ ডিসেম্বর হলো চতুর্থ বিশ্বের শেষদিন। সেদিন মায়া ক্যালেন্ডারের ৫ হাজার ১২৫ বছর পূর্ণ হবে। ক্যালেন্ডার এখানেই শেষ এবং মহাবিশ্বেরও এখানেই ইতি!
‘২১-১২-১২ তারিখে পৃথিবী ধ্বংস হবে না’:
মায়া ক্যালেন্ডারের শেষ যে তারিখে (২১ ডিসেম্বর’২০১২) সে দিনই পৃথিবী ধ্বংস হবে- এই আশংকাকে স্রেফ গুজব হিসাবে উড়িয়ে দিয়েছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা ‘নাসা’। ২১ ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হবে না।
সংস্থাটি বলেছে, এ নিয়ে গুজব যে দিন দিন ডালপালা মেলতে শুরু করেছে তা বেশ টের পাওয়া যাচ্ছে। কেননা এর আগে সচরাচর সাধারণ মানুষের কাছ থেকে দিনে গড়ে ৯০ টির মত প্রশ্ন আসতো নাসার কাছে। কিন্তু পৃথিবী ধ্বংসের গুজবের পর নাসার কাছে উদ্বিগ্ন মানুষের প্রশ্নের সংখ্যা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে।
নাসা বলছে, কেবল পৃথিবী ধ্বংসের বিষয়ে জানতে বা এ ব্যাপারে খোঁজ খবর নিতে নাসাকে এখন দিনে তিন শতাধিক মানুষের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে।
আগে দিনে যে ৯০ টির মতো প্রশ্ন পাওয়া যেত সেখানে মানুষের জানার ভিন্নতা ছিল, একেক জন একের ধরণের প্রশ্ন করতো। কিন্তু এখন প্রায় সব প্রশ্নের ধরণ এক, সবার জিজ্ঞাসার মুলে থাকছে পৃথিবীর ধ্বংস নিয়ে।
এর আগে ‘১২.১২.১২’ নিয়ে সর্বত্র নানা গুঞ্জন, নানা উন্মাদনা তৈরি হয়েছিল। কারও মত ছিল ওই দিন পৃথিবী ওলট পালট হযে যাবে। গুজব রটেছিল ঐদিন পৃথিবী ধ্বংস হবে। তবে কিছু যুক্তিবাদীর কথা ছিল, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর অন্য সব দিনের মতো স্বাভাবিকভাবেই পৃথিবী চলবে।
কেউ কেউ এ ব্যাপারে সংশয় প্রকাশ করে বলেন, এ দিন নতুন এক বিশ্বের সূচনা ঘটবে। তবে কীভাবে, কেন ঘটবে এসব প্রশ্নের পক্ষে কোনো যুক্তি দেখাতে পারেননি তাঁরা।