বার্তা৭১ ডটকমঃ দিল্লিতে চলন্ত বাসে এক যুবতীকে গণধর্ষণের পর ভারতে যখন ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে ঠিক তখনই প্রায় একই রকম ঘটনা ঘটেছে উত্তর প্রদেশে। সেখানে মাও জেলায় একটি বাসস্ট্যান্ডে ৩৮ বছর বয়সী এক নারীকে ধর্ষণ করেছে তিন নরপিশাচ। মিডিয়ায় লেখালেখির কারণে দিল্লির ঘটনায় পুলিশ ত্বরিত পদক্ষেপ নিলেও উত্তর প্রদেশের ঘটনায় পুলিশ ধর্ষণের মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। উল্টো তারা একটি যৌন নির্যাতন, ইভটিজিং ও চুরির অভিযোগ নিবন্ধিত করেছে। ওদিকে দিল্লিতে যে প্যারামেডিকেল ছাত্রীকে চলন্ত বাসে গণধর্ষণ করা হয়েছে তার অবস্থা স্থিতিশীল বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। তার ওপর নির্যাতনের ঘটনায় ভারতের পার্লামেন্টে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। একপর্যায়ে অধিবেশন স্থগিত করা হয়। নারী অধিকারবিষয়ক সংস্থাগুলো প্রতিবাদে রাজপথ উত্তপ্ত করে তুলেছে। মানবাধিকারবিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলো মুখ খুলেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে তীব্র প্রতিক্রিয়া। ওই যুবতীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় পাঁচ দিন আগে ভর্তি করা হয় সফদারগঞ্জ হাসপাতালে। গতকাল সেখানকার সিনিয়র চিকিৎসক বলেছেন, তার অবস্থা এখন স্থিতিশীল। তার চেতনা আছে। সাড়া দিচ্ছেন। যন্ত্রের সাহায্য ছাড়াই তিনি নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। বুধবার এক রিপোর্টে জানানো হয়েছিল- ওই ধর্ষিতার প্রজনন তন্ত্রে মারাত্মক ক্ষত হয়েছে। এ জন্য তার পাঁচ বার অপারেশন করাতে হতে পারে। রোববার রাতে তাকে ভর্তি করার পর এরই মধ্যে দু’বার তার অপারেশন করা হয়েছে। তার ওপর নির্যাতন চালানোর জন্য পুলিশ ৬ জনকে সন্দেহ করছে। তার মধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে দু’জন তাদের দোষ স্বীকার করেছে। তারা বলেছে- যে অপরাধ করেছে তাতে তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত। দিল্লির এ ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে উত্তর প্রদেশের মাও জেলায় ঘটে গেছে আরেক ধর্ষণের ঘটনা। ওই রাতে ৩৮ বছর বয়সী এক নারী তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সঙ্গে আজমগড় জেলা থেকে বিন্দ্যাচল যাচ্ছিলেন। কিন্তু পথে প্রতিবেশী ঝংকু রাম, প্রেম চাঁদ ও তিলাকধারী তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। ওই ধর্ষিতার সঙ্গে তারাও মাওগামী একই বাসে উঠে। মাও থেকে তাদের বিন্দাচলের ট্রেন ধরার কথা ছিল। সেখানে পৌঁছার পর পরই ওই নারীর পরিবারের লোকেরা রেলস্টেশনে যায় টিকিট করতে। এ সময় ওই নারী বাসস্ট্যান্ডের ওয়েটিং রুমে অবস্থান করছিলেন সঙ্গে ব্যাগ ও জিনিসপত্র দেখাশোনার জন্য। এ পরিস্থিতির সুযোগ নেয় ওই তিন প্রতিবেশী। তারা মিলে ওই নারীর মুখে কাপড় গুঁজে দিয়ে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এক পর্যায়ে ধর্ষিতা অচেতন হয়ে পড়লে তারা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। ওই নারীর স্বজনরা সেখানে ফিরে এসে এ পরিস্থিতি দেখে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ধর্ষিতাকে ও তার স্বজনদের থানায় নিয়ে যায়। কিন্তু তারা গণধর্ষণের মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। সাংবাদিকরা থানায় হাজির হলে পুলিশ একটি যৌন নির্যাতনের অভিযোগ নেয়। এ সময় তারা দাবি করে, ওই নারী গণধর্ষণের কোন অভিযোগ দেয়নি। ওদিকে দিল্লির গণধর্ষণের প্রতিবাদে ও নারীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন রাজ্যে অপরাধ বৃদ্ধির প্রতিবাদে বিক্ষোভ হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। লক্ষ্নৌতে অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক ওমেন্স এসোসিয়েশন বিক্ষোভ করেছে। তারা ধর্ষণের ঘটনায় দ্রুত বিচার দাবি করেছেন। নারী নেত্রীরা আশিয়ানা ধর্ষণ ঘটনাও তুলে ধরেন। আশিয়ানা ধর্ষণের ঘটনার ৭ বছর পরও এর মূল আসামির বিরুদ্ধে এখনও বিচার শুরু হয় নি। ওদিকে আরও বিক্ষোভ হয়েছে কানপুর, বারানসি, মিরাট ও গাজিয়াবাদে। বুধবার ২৪ ঘণ্টায় গণধর্ষণের ঘটনা রেকর্ড করা হয়েছে রায়বেরেলি, রামপুর, ছোনভাদ্রা ও ফারুকাবাদে।