ঢাকা, ২৩ ডিসেম্বর (বার্তা৭১ডটকম) : সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচার, সাংবাদিকদের পেশাগত নিরাপত্তা, ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার আদায়, সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি বন্ধ ও ওয়েজবোর্ড অনুযায়ী বেতনের দাবিতে আগামী ১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করবে সাংবাদিকরা।
রোববার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবে সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যাকান্ডের বিচারের দাবিতে গণঅনশন শেষে এ কর্মসূচির ঘোষণা করা হয়।
কর্মসূচির ঘোষণা করতে গিয়ে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত সাংবাদিকরা রাজপথ ছাড়বে না, কলম চালিয়ে যাবে। চলমান আন্দোলনকে সফল করতে আগামী ১ জানুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে। এছাড়াও ২০ জানুয়ারি সারাদেশের সাংবাদিকরা ঢাকায় মহাসমাবেশ করবে।
এছাড়াও মহাসমাবেশ চলাকালে সকাল১১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত সব গণমাধ্যমের কর্মবিরতির ঘোষণাও দেন তিনি।
সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি জানিয়ে ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেছেন, তারপরও যদি আমাদের দাবি আদায় না হয় তাহলে ২০ তারিখ আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে বাধ্য হবো।
এ সময় সাগর-রুনির আত্মার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়নের মাঝে ২ যুগ ধরে যে বিভেদ ছিল সাগর-রুনির কারণে আজ তার অবসান ঘটেছে। রাজনৈতিক মতাদর্শ পৃথক হতে পারে কিন্তু সাংবাদিকদের অধিকার ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বজায় রাখতে আজ আমরা ঐক্যবদ্ধ। আর ঐক্যবদ্ধভাবেই আন্দোলন করে সাগর-রুনি হত্যাকান্ডের বিচার করতে বাধ্য করা হবে সরকারকে।
তিনি বলেন, এর আগে বিগত সরকারের আমলেও অনেক সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে কিন্তু এর বিচার হয়নি। বর্তমান সরকারের সময়ও একই ঘটনা ঘটছে। কি অন্যায় করেছি আমরা যে একটি হত্যার বিচার এখনো পাচ্ছি না। আমরা কি করেছি যার কারণে সত্য সংবাদ প্রকাশ করতে গিয়ে আমাদের হামলার শিকার হতে হয়। আমরাও দেখতে চাই এ খুনিচক্র কারা। কে এতো শক্তিশালী যাকে আড়াল করে রাখা হচ্ছে।
গণঅনশন কর্মসূচিতে বিএফইউজে অপর অংশের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তিনি সাগর-রুনির খুনিদের বিচার করবেন। আর এখন আপনিও এ হত্যাকান্ড নিয়ে নাটক করছেন। আপনিতো মোবাইল ট্রাকিংয়ের মাধ্যমে বহু আসামি গ্রেফতার করেছেন তাহলে এখন আপনার ট্রাকিং সিস্টেম কোথায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও তথ্যমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা হয়তো নতুন দায়িত্বপ্রাপ্ত কিন্তু আমরা সাংবাদিকতায় নতুন না। আপনাদের মতো অনেক মন্ত্রী আমাদের দেখা হয়ে গেছে। যদি ভাবেন সাংবাদিক সমাজে বিভক্তি আছে তাহলে ভুল করবেন।
অবিলম্বে খুনিদের চিহ্নিত করে বিচারের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, অতীতেও কেউ হত্যা করে পত্রিকার কণ্ঠ রোধ করতে পারেনি এখনো পারবে না। প্রয়োজনে আমরা সাংবাদিকদের মহাসমাবেশ, সকল গণমাধ্যমে কর্মবিরতিসহ আরো অনেক কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।
গণঅনশনে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব শওকত মাহমুদ বলেছেন, আগামী কর্মসূচিই হবে আমাদের শেষ কর্মসূচি। এরপরও যদি হত্যার প্রকৃত খুনি গ্রেফতার না হয় তাহলে এ সরকারের ব্যর্থতার বিরুদ্ধে নতুন আন্দোলন শুরু হবে।
রোববার বিকেলে প্রেসক্লাব চত্বরে সাগর-রুনিসহ সব সাংবাদিক হত্যার বিচারের দাবিতে সাংবাদিকদের গণঅনশন কর্মসূচিতে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, যদি আমাদের মনে হয় যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সাগর-রুনি হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে পারবে না তাহলে সরকার পতনের আন্দোলনের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এনেই এ হত্যার বিচার করা হবে।
বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব আবদুল জলিল ভূঁইয়া বলেন, এর আগেও অনেক সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে কিন্তু কোনো হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু বিচার হয়নি। কিন্তু সাগর-রুনি তাদের মৃত্যুর মাধ্যমে গোটা সাংবাদিক সমাজকে আজ ঐক্যবদ্ধ করে গেছেন। আমরা আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে সহকর্মীদের রক্তের শোধ নেবই।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওমর ফারুক গণঅনশনে বলেছেন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর যেমন জজমিয়া নাটক সাজিয়েছিলেন বর্তমান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও সে ধরনের নাটক সাজানোর চেষ্টা করছেন।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস শহীদ বলেছেন, অচিরেই সাগর-রুনি হত্যাকারীদের বিচার না করা হলে আমরা আরো কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচির মাধ্যমে আমাদের সহকর্মীর হত্যার বিচার আদায় করে নেব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্দেশে হুঁশিয়ারি জানিয়ে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শাবান মাহমুদ বলেছেন, আপনার যদি সাংবাদিকদের শক্তি সম্পর্কে ধারণা না থাকে তাহলে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জিজ্ঞেস করুন আমরা কি করতে পারি।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, একটা গণতান্ত্রিক সরকার যখন গণমাধ্যম আতঙ্কে ভোগে তখনই তারা সাংবাদিকদের ওপর নির্যাতন চালায়।
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী মেঘকে কোলে নিয়ে সান্ত্বনা জানিয়েছেন অথচ দুঃখজনক হলেও সত্যি যে সাগর-রুনি হত্যাকান্ড রহস্যের কোনো উদঘাটন হয়নি। অবিলম্বে প্রকৃত হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে শাস্তির ব্যবস্থা করুন। তা না হলে সাংবাদিকরা আরো কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করতে জানে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নবনির্বাচিত সভাপতি শাহেদ চৌধুরী সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, সাগর-রুনি হত্যাকান্ড নিয়ে যদি আর কোনো নাটকীয় ঘটনার জন্ম দেয়া হয় তাহলে সাংবাদিক সমাজ তা রুখে দেবে।
সকল সাংবাদিকদের আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, এটা কোনো ব্যক্তিগত আন্দোলন নয়। এ আন্দোলন আমাদের সাংবাদিক সমাজের অধিকার বাস্তবায়নের আন্দোলন। তাই সব সাংবাদিকের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এ আন্দোলনকে সফল করতে হবে।
অনশন কর্মসূচিতে সাংবাদিক নেতাদের মধ্যে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন (ডিইউজে) সাধারণ সম্পাদক মুহাম্মদ বাকের হোসাইন, জাতীয় প্রেসক্লাব সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আবদাল আহমেদ, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খানসহ অন্য সাংবাদিক নেতারা।