ঢাকা, ২৪ ডিসেম্বর (বার্তা৭১ডটকম) : খ্রিস্টধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব বড়দিন। যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে প্রতিবছর ২৫ ডিসেম্বর ‘বড়দিন বা ক্রিসমাস’ পালিত হয়। আর এ উপলক্ষে সোমবার রাত থেকেই যিশুর জন্মোৎসব বড়দিনের আনন্দে মেতেছে খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা।
বড়দিনকে ঘিরে সারাদেশে খ্রিস্টান পল্লীতে চলছে ব্যাপক আয়োজন। সাধ আর সাধ্যের মধ্যে বিরাট তফাৎ। তারপরও বড়দিনের উৎসবে যেন এতটুকু কমতি নেই। বাড়িঘর সাজানো, নতুন পোশাক কেনা, পরস্পরের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় আর উপহার আদান-প্রদানের সঙ্গে অতিথি আপ্যায়নের নানা আয়োজনে ব্যস্ত খ্রিস্টান সমপ্রদায়ের মানুষ।
দুই হাজার বছরেরও কিছু আগে পুণ্যময় এই দিনে খ্রিস্টধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট পশ্চিম তীরের বেথলেহেমে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, সৃষ্টিকর্তার মহিমা প্রচার এবং মানব জাতিকে সত্য ও ন্যায়ের পথ দেখিয়ে নাজাতের পথে পরিচালিত করার জন্য যিশুর জন্ম হয়েছিল।
অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের খ্রিস্টধর্মের অনুসারীরাও ২৫ ডিসেম্বর দিনটি আনন্দ-উৎসব ও প্রার্থনার মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে। দিনটি সরকারি ছুটির দিন।
বড়দিন উপলক্ষে সোমবার রাত থেকেই বিভিন্ন গির্জায় বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন করা হলেও, মূল অনুষ্ঠান শুরু হচ্ছে রাত ১২টা থেকে। দিনটি উপলক্ষে প্রায় প্রতিটি খ্রিস্টান পরিবারে ক্রিসমাস কেক তৈরি করা হয়েছে। সঙ্গে থাকছে বিশেষ খাবারের আয়োজনও।
দেশের অনেক অঞ্চলে কীর্তনের পাশাপাশি ধর্মীয় গানের আসর বসেছে। শীতের তীব্রতা ভুলে ছেলে-বুড়ো, যুবক-যুবতীরা যিশুর জন্মদিনের আনন্দে মেতে উঠেছে। আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য অনেকেই বড়দিনকে বেছে নিয়েছে।
সোমবার রাতে রাজধানীর তেজগাঁও ক্যাথলিক গির্জায় (পবিত্র জপমালার গির্জা) গিয়ে দেখা যায়, বড়দিনের বিশেষ প্রার্থনার আয়োজন চলছে। গির্জা ও এর আশপাশে রঙিন বাতি জ্বালানোর প্রস্তুতি সবে শেষ হয়েছে। প্রচুর জরি লাগিয়ে গির্জার ভেতর রঙিন করা হয়েছে।
গির্জার মূল ফটকের বাইরে ছোটখাটো একটি মেলা বসেছে। মেলার দোকানগুলোতে বড়দিন ও ইংরেজি নতুন বছরের কার্ড, নানা রঙের মোমবাতি, জপমালা, ক্রিসমাস ট্রি, যিশু-মরিয়ম-যোসেফের মূর্তিসহ নানা জিনিস বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বড়দিন উপলক্ষে দেয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান দেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীসহ দেশবাসীকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, মানব জাতিকে কল্যাণ ও সত্যের পথে পরিচালিত করতে যুগে যুগে যেসব মহামানব পৃথিবীতে এসেছেন তাঁদের মধ্যে যীশুখ্রিস্ট অন্যতম।
তিনি মানুষকে সত্য, ন্যায় ও সমপ্রীতির পথে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। সৃষ্টিকর্তার সান্নিধ্য লাভের পথ দেখিয়েছেন। আবহমান কাল থেকে এদেশের মানুষ পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সমপ্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ।
এদেশের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা শিক্ষা ও সমাজ উন্নয়নে যে ভূমিকা রাখছে তা প্রশংসনীয়। আসুন, সুখী-সমৃদ্ধ এবং অসামপ্রদায়িক দেশ গঠনে সকলে ঐক্যবদ্ধভাবে অব্যাহত প্রয়াস ও চেষ্টা চালিয়ে যাই। রাষ্ট্রপতি ‘বড়দিন’ উপলক্ষে খ্রিস্টান সমপ্রদায়সহ সবার জন্য আনন্দময় ও উৎসবমুখর জীবন কামনা করেন।
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে খ্রিস্টান সমপ্রদায়ের সকল সদস্যকে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, খ্রিস্টান ধর্মের প্রবর্তক যিশুখ্রিস্ট এ দিনে বেথেলহেমে জন্মগ্রহণ করেন। শোষণমুক্ত সমাজ ব্যবস্থা প্রবর্তনের জন্য পৃথিবীতে ন্যায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করাই ছিল যিশুখ্রিস্টের অন্যতম ব্রত। বিপন্ন ও অনাহারক্লিষ্ট মানুষের জন্য মহামতি যিশু নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। তাঁর জীবনাচারণ ও দৃঢ় চারিত্র্যিক গুণাবলীর জন্য মানব ইতিহাসে তিনি অমর হয়ে আছেন।
বাংলাদেশ সামপ্রদায়িক সমপ্রীতির দেশ। এখানে রয়েছে সকল ধর্ম ও সমপ্রদায়ের মানুষের নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধীনতা। আমি আশা করি, বড়দিন দেশের খ্রিস্টান ও অন্যান্য সমপ্রদায়ের মধ্যকার বিরাজমান সৌহার্দ্য ও সমপ্রীতিকে আরও সুদৃঢ় করবে।
এ পুণ্যদিন উপলক্ষে খ্রিস্টান সমপ্রদায়সহ জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলকে আমি মানবতার মহান ব্রতে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে এগিয়ে আসার উদাত্ত আহ্বান জানাই।
সংসদের বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে বড়দিনের সব কর্মসূচির সাফল্য কামনা করেন।
নিরাপত্তা : খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা যাতে নিরাপদে ও স্বাচ্ছন্দ্যে বড়দিন উদ্যাপন করতে পারে সে জন্য পুলিশ বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে। নগরে ৪০টি গির্জায় পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকধারী মোতায়েন করা হয়েছে।
ধর্ম-বৈষম্য সৃষ্টি এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার জন্য সন্ত্রাসী চক্র বা কোন স্বার্থান্বেষী মহল কর্তৃক বড়দিনের অনুষ্ঠানে নাশকতামূলক কর্মকান্ড সংঘটিত করার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
বড়দিন উপলক্ষে রবিবার থেকে র্যাব দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় নিয়মিত টহল জোরদার করেছে। এছাড়াও দেশব্যাপী র্যাব প্রত্যেক জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা পর্যায়ে ইউএনও এবং বড়দিন উদ্যাপন কমিটি ও বিভিন্ন আয়োজকদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
আসন্ন ‘বড়দিন’কে সামনে রেখে দেশের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি র্যাবও যথাযথভাবে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে। যেসব এলাকায় গির্জা রয়েছে এবং যেসব এলাকায় বড়দিনের অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে সেসব এলাকায় বাড়তি টহলের পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়িয়ে দিয়েছে।