ঢাকা, ২৬ ডিসেম্বর,(বার্তা৭১ডটকম): সম্প্রতি দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি অনেকটাই অস্থিতিশীল। হরতাল পাল্টা হরতালের তোপে দেশবাসী প্রায় অতিষ্ঠ। ঠিক এ পরিস্থিতিকে সামনে রেখে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে আজ সারাদেশে ‘অহিংস গণসংযোগ’ করবে বিরোধী জোট। এতে নেতৃত্ব দেবেন ১৮ দলীয় জোটের প্রধান ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বিএনপি চেয়ারপারসনের প্রেস উইং জানিয়েছে, গণসংযোগ কর্মসূচির অংশ হিসেবে রাজধানীতে ছয়টি পথসভা হবে। এর মধ্যে পাঁচটি পথসভায় বক্তৃতা দেবেন বিরোধী দলীয় নেতা।
এ উপলক্ষে বুধবার সকাল সাড়ে দশটায় গুলশানের বাসা থেকে রওনা করে বেলা ১১টায় গাবতলী যাবেন তিনি। সেখানে প্রথম পথসভার মধ্য দিয়ে কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন খালেদা জিয়া। দুপুর ১২টায় কাওরান বাজারে দ্বিতীয় পথসভা, একটায় যাত্রবাড়ী দুইটায় সবুজবাগে, বিকেল ৩টায় বাড্ডার পথসভা শেষ করে সাড়ে ৩টায় বাসায় ফিরবেন তিনি। এছাড়া ধোলাইখাল এলাকায় শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
দলের সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম বলেছেন, একেকটি পথসভায় এক ঘন্টার বেশি সময় লাগবে।
এ কর্মসূচির কারণে জনদুর্ভোগের জন্য আগে থেকেই দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
দলের মহানগরীর সদস্য সচিব আব্দুস সালাম বলেছেন, গাবতলীর পথসভা শেষে কল্যাণপুর পর্যন্ত মিছিল হবে। প্রধানমন্ত্রীর গণভবন এবং সচিবালয় এলাকাসহ ভিআইপি রোডে আমরা কোনো মিছিল করব না।
কাওরান বাজার দ্বিতীয় পথসভা শেষ করে এফডিসির পাশ দিয়ে মগবাজার রেলক্রসিং হয়ে রমনা থানা, কাকরাইল মৎসভবন, হাইাকোর্ট হয়ে বামে প্রেসক্লাব ডানে কার্জন হল রেখে সিটি করপোরেশনের পাশ দিয়ে গুলিস্তান নর্থ সাউথ হয়ে সোজা রায়শা বাজার, ধোলাইখাল, দয়াগঞ্জ, যাত্রবাড়ি শহীদ ফারুক রোডে খালেদা জিয়া শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। পরে সায়েদাবাদ হয়ে মুগদা দিয়ে বৌদ্ধ মন্দিরের ডান দিকে সবুজবাগ বালির মাঠে পথসভা হবে। তারপর খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিচ দিয়ে রামপুরা-মালিবাগে শেষ সমাবেশ বাড্ডার ভাটারা মাঠে হবে।
ইন্টারনেটে বিএনপি ওয়েবসাইট www.bnplive.com-র মাধ্যমে এ কর্মসূচি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে।
শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির এই প্রচারে বিরোধী জোট ব্যাপক জনসমর্থন পেয়েছে দাবি করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলাম সরকারের সহযোগিতা চেয়েছেন।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সভাপতি মন্ডলীর সদস্য ও সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বলেছেন, বিরোধী দলের এই কর্মসূচিতে তারা কোনো বাধা সৃষ্টি করবেন না।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান বলেছেন, কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ হলে সহযোগিতা করা হবে। এর ব্যতিক্রম হলে প্রতিহত করা হবে।
প্রধান বিরোধী দল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কারাগারে এবং সংগঠনটির অধিকাংশ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা থাকলেও কর্মসূচি সফল হবে বলে মনে করছে ১৮ দল।
বিরোধী জোটের নেতারা বলেছেন, শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দিলে লাগাতার হরতাল।
এদিকে গণসংযোগ সফল করতে জোটের শরিকদলগুলো ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নগর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদ বলেছেন, জোটের মহাসচিব পর্যায়ে অনুষ্ঠিত যৌথ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তারা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন।
বাংলাদেশ লেবার পার্টির সভাপতি মুস্তাফিজুর রহমান ইরান জানিয়েছেন, তাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করবেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে রাজধানীর সবগুলো পথসভায় অংশ নেবেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুলিশ কৃপণতা না করে ৫টি পথসভার অনুমতি নিশ্চিত করেছে। এই কর্মসূচি সফল করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি সম্পর্কে পুলিশের মহাপরিদর্শক হাসান মাহামুদ খন্দকার তাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছেন।
ঢাকা মহানগর মিডিয়া ও গণসংযোগ শাখার সহকারী কমিশনার গাজী রবিউল ইসলাম জানিয়েছেন, বিএনপির আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০টি শর্তসাপেক্ষে ৫টি পথসভার অনুমতি দেয়া হয়েছে।
ঢাকার বাইরে মহানগরগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, পূণ্যভূমি সিলেটে এম কে আনোয়ার, আমের রাজধানী রাজশাহীতে নজরুল ইসলাম খান, খনিজ সমৃদ্ধ রংপুরে লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, রূপসা পারের খুলনায় ড.আব্দুল মঈন খান এবং শেরে বাংলার বরিশালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় শান্তিপূর্ণ গণসংযোগ কর্মসূচির নেতৃত্ব দেবেন।
এই কর্মসূচি শেষে জোটের বৈঠক করে পরবর্তী কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে।