২৬ ডিসেম্বর (বার্তা৭১ডটকম):১৮ দলীয় জোট নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুর্নবহাল না করলে আন্দোলন চলছে চলবে। জেল জুলুম আর নির্যাতন করে আন্দোলন বন্ধ করা যাবে না।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে গণসংযোগ কর্মসূচীর অংশ হিসেবে বুধবার রাজধানীর পথসভা গুলোতে তিনি এই কথা বলেন। এই ছাড়া তিনি সরকারের নানা ব্যর্থতা ও দু:শাসনের চিত্র তুলে ধরেন।
১৮ দলীয় জোট এই গণ সংযোগ কর্মসূচীর আয়োজন করে। সকাল দশটায় বিরোধী দলীয় নেতা গুলশান থেকে যাত্রা করে গাবতলীতে প্রথম পথসভা করেন এবং বাড্ডায় সর্বশেষ পঞ্চম পথসভা শেষে গণ সংযোগ কর্মসূচী শেষ করেন।
সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বাড্ডায় বেগম জিয়া বলেন, দেশের গার্মেন্টস গুলো একের পর এক অগ্নি কান্ডের শিকার হচ্ছে। এটা গার্মেন্টস শিল্পকে ধ্বংস করা পল্পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র।
সরকারের দলীয় করণের উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রশাসনে সরকার দলীয় করন করে স্থবির করে রেখেছে। ভাল অফিসারদের হয় বিদায় করে দিয়েছে না হয় ওএসডি করে রেখেছে। পুলিশ প্রশাসনে একটা নির্দিষ্ট এলাকার লোক ছাড়া অন্যরা পদন্নতি পায় না। নিয়োগ দিচ্ছে সরকার দলীয় ক্যাডারদের।
বেগম জিয়া বলেন, শিল্প কল-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া নেই। দেশের ভবিষৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
অর্থনীতির দুরাবস্থা তুলে ধরে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, অর্থনীতির অবস্থা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। সরকারের দুর্নীতির কারণে বিদেশে লোক নেওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। মধ্যপ্রাচ্যের শ্রম বাজার বন্ধ এখন আমাদের হাত ছাড়া। যারা আছে তাদের দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সরকার বলেছে, ঘরে ঘরে চাকুরী দিবে এখন তারা চাকুরী খেয়ে ঘরে ঘরে বেকারত্ব তৈরী করছে।
আইন শৃংখলার চরম অবনতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সন্ত্রাস, চাদাঁবাজি ও নৈরাজ্য বেড়ে আইন শৃংখলার চরম অবনতি করেছে। সরকারের দুর্নীতি লাগাম ছাড়া হয়ে হলমার্ক, শেয়ার বাজার ও পদ্মাসেতুর মত পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। ডেসটিনির কথা বলা হলেও এর সাথে সরকার জড়িত।
বেগম জিয়া বলেন, জনগণের কথা বলত তাই মির্জা আলমগীরকে জেলে পুরে রাখা হয়েছে। এই জেল জুলুম দিয়ে আন্দোলন ঠেকানো যাবে না। আন্দোলন চলছে, দাবি আদায় হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
এর আগে সবুজবাগের পথসভায় বেগম জিয়া বলেন, সরকার যুদ্ধাপরাধের বিচারের নামে জামায়াতকে ১৮ দলীয় জোট থেকে আলাদা করে নিজেদের দলে নেওয়ার চেষ্টা করছে।
তিনি আরও আওয়ামীলীগ জামায়াতের সাথে জোট করে রাজপথে আন্দোলন করেছে। তখন তারা যুদ্ধাপরাধী ছিল না। এখন তারা আমাদের সাথে জোটে আছে তাই তারা যুদ্ধাপরাধী।
বেগম জিয়া বলেন, দেশ এই সরকারের হাতে নিরাপদ নয়। এই সরকার যতদিন থাকবে ততদিন জনগন নির্যাতিত হতে থাকবে। তাই সকলের উচিত এই আন্দোলনে শরিক হওয়া।
এর আগে বিরোধী দলীয় নেতা যাত্রাবাড়ীর শহীদ ফারুক রোডের পথসভায় বলেন, সরকার যদি গ্যাস, বিদ্যুত ও জ্বালানী তেলসহ দ্রব্যমূলের দাম আবার বৃদ্ধি পেলে কঠোর কর্মসূচী দেওয়া হবে। প্রয়োজনে লাগাতার হরতাল দেওয়া হবে।
খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জন জীবন দুবিসহ হয়ে গেছে। সাধারণ মানুষ দুই বেলা খেতে পারে না। সর্বত্র লুটপাট আর দুর্নীতি মানুষকে অসহায় করে তুলেছে।
বেগম জিয়া আরও বলেন, আজকে ঢাকা শহরের করুন অবস্থা তৈরী হয়েছে। কোথাও উন্নয়নের চোঁয়া নেই।
বিশ্বজিতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই সরকারের দু:শাসনের উদাহরণ হচ্ছে বিশ্বজিতের হত্যা কান্ড। তারা প্রকাশ্যে ঘোষনা দিয়ে বিশ্বজিতকে হত্যা করে নিজেদের নেতা কর্মীদের বাচাঁনোর চেষ্ঠা করছে।
এর আগে কারওয়ান বাজারে খালেদা জিয়া বলেন, বর্তমান সরকারের দু:শাসন, অপশাসন ও নির্যাতনের প্রতিবাদ করার জন্য। আমরা মনেকরি শুধু বিএনপি ও ১৮ দল নয়, সকল রাজনৈতিক দলের উচিত প্রতিবাদ করা। সরকার এই পর্যন্ত কোন উন্নয় বা ভাল কাজ করতে পারনি। সরকারে এইসব ব্যর্থার জন্য প্রয়োজন রাজপথে প্রতিবাদ।
সরকার দলীয় লোকদের দুর্নীতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন না হলেও উন্নয়ন হয়েছে আওয়ামীলীগের নেতাদের। তারা চাদাঁবাজি, দুর্নীতি ও টেন্ডারবাজির মাধ্যমে তারা কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেছে।
তাদের মন্ত্রী রেলওয়ে থেকে বস্তাবর্তী টাকা নিতে গিয়ে ধরা খেয়েছ। এই কাল বিড়াল টাকার বস্তা নিয়ে ধরা খেয়েছ আর বড় বড় কথা বলছে। তারা বলে চোরের মায়ের বড় গলা, এখন বুঝা যাচ্ছে যে আসলে চোরের মায়ের বড়গলা কার।
পদ্মাসেতুর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, পদ্মাসেতু আবুল খেয়ে ফেলেছে অথচ সরকার তাকে দেশপ্রেমের সার্টিফিকেট দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা উল্লেখ করে বলেন, রাজাকারকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বানিয়ে আবার বলছে রাজাকারের বিচার করা হবে। এরশাদ আজকে মুক্তিযুদ্ধা হয়েছে, কারণ সে আওয়ামীলীগের সাথে আসে তাই।
আজকে সংবাদিকদের কোন নিরাপত্তা নেই। সাগর রুনি হত্যার কোন বিচার হয়নি। কারণ তারা সরকারের অনেক অপকর্মের প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। মাহমুদুর রহমান আমার দেশ পত্রিকায় সত্য প্রকাশ করে বন্দী অবস্থায় আছে। তার নামে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা দেয়া হয়েছে। তিনি একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে বের হবেন।
গাড়ী পোড়ান আপনারা মামলা দেন মির্জা ফখরুলের নামে। আমাদের নেতাদের নামে মামলা দিচ্ছেন আর ফাঁসির আসামীদের মুক্তি দিচ্ছেন। মির্জা আলমগীর হুকুমের আসামী হলে আপিন লগি বৈঠা দিয়ে মানুষ মারার হুকুমের আসামী।
পিলখানা হত্যাকান্ড কেন হল তার জবাব জনগণের কাছে দিতে হবে। কেন প্রধানমন্ত্রী বিদ্রোহীদের সাধারণ ক্ষমা ঘোষনা করলেন। আসল আসামী কারা তারা কোথায়?
গণসংযোগের প্রথম পথসভায় বেগম খালেদা জিয়া বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বচান হবে। একজন বিচারপতি বিচারক থাকা অবস্থায় এক রায় দিয়েছেন, অবসর নিয়ে আরেক রায় দিয়েছেন। এটা হতে পারে না, এটা অন্যায়। তাই আপনাদের জানিয়ে দিতে এসেছি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামীলীগের অধীনে নির্বাচন হতে পারে না। তারা আওয়ামীলীগ ছাড়া আর কিছু বুঝে না।
দেশে হত্যা গুমের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে আজ মানুষ হত্যা করা হচ্ছে নির্বিচারে। আইনজীবী এম ইউ আহমেদ ও সাগর রুনিকে হত্যা করল। চৌধুরী আলম, এম ইলিয়াছ আলী সহ কয়েকশ নেতা কর্মীকে গুম করে ফেলল। আমরা তাদের ফেরত দাবি করছি। না হয় এর বিচার একদিন হবে।
সংসদে তত্ত্বাবধায় সরকার বিল আনতে হবে এবং সংবিধানে তা পুর্ণবহাল করতে হবে।
সম্প্রতি নেতা কর্মীদের নামে মামলার কথা উল্লেখ করে বলেন, আমাদের ২৫ হাজার নেতা কর্মীর নামে মামলা দেয়া হয়েছে। ঢাকা শহরে কেউ বাকী নেই। নেতা কর্মীদের জেলে নিলে আন্দোলন বন্ধ হবে এটা ভাবলে ভুল হবে, জনগণ আন্দোলনে কর্মীর ভূমিকা রাখবে।
যুবকদের চাকরী দেয়া তো দূরের কথা তাদের নেশা খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে সরকার লুটপাট করছে। তাই আজ যুব সমাজকে জাগতে হবে।
দ্রব্যমূল্য আজ লাগাম ছাড়া, ডিমের দাম দশ টাকা। দেশে একটি ধনী শ্রেণীর বিপরীতে অনেক বড় গরীব শ্রেণী রয়েছে।
সরকারের বক্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, বিজয়ের মাসে আমরা হরতাল করছি। আপনার ভুলে গেছেন যে, এই বিজয়ের মাসে ৭২ ঘন্টা হরতাল করেছেন। কিছু হলে তারা বলে আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বাচাঁনোর জন্য আন্দোলন করছি। আমরা আন্দোলন করছি গণতন্ত্র ও দেশকে বাচাঁনোর জন্য। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার আপনার করছেন না। আসল অপরাধীদের বাদ দিয়ে রাজনৈতিক নেতাদের গ্রেফতার করে রেখেছেন।প্রকৃত অপরাধীদের ধরেন, আপনাদের দলের ও আত্নীয়দের ধরে বিচার করুন তাহলে জনগণ বুঝবে আপনার সত্যিকারের বিচার করছেন। সুষ্ঠ বিচার করুন আমরা আপনাদের সাথে আছি।