বার্তা৭১ ডটকমঃ কেন এমন হোক? গল্প ছাড়া, যুক্তিহীন অবাস্তব দৃশ্য আর শরীরের ছোঁকছোঁকানি দিয়ে বাংলা ছবির মরক শুরু হোক? স্বস্তিকা, জয়, সমদর্শী- প্রশ্ন রাখছি আপনাদের কাছেই। কারণ আপনাদের অভিনয় দক্ষতা যতবার ছবির দৃশ্যে দেখতে পাচ্ছি, ততবার-ই মনে হচ্ছে এই চালচুলোহীন ছবি করার চেয়ে ছবি না করাই তো ভাল ছিল!জানেন কি? সিনেমা হলেও এই ছবির বিভিন্ন দৃশ্যে দর্শকদের ফাটকা হাততালি, অশালীন মন্তব্য বার বার মনে করিয়ে দিচ্ছিল এটা কি কোনও বাংলা ছবি? নাকি কেবলমাত্র সেক্স স্টার্ভিং তিন চরিত্রের শরীরী সুড়সুড়িকে জোর করে সেলুলয়েডে আনার ব্যর্থ প্রয়াস? একজন দক্ষ অভিনেত্রী হিসেবে স্বস্তিকা লিপলক সিনে কতটা অনায়াস? কোন ছবিতে কতবার তা দেখা গেছে? সে নিয়ে মিডিয়ার মাথাব্যথা থাকবেই, তাতে কিছু না। তবে শুধুই চুম্বন আর ‘আগুন’ ‘শরীর’, রবীন্দ্রনাথ থেকে ধার করা ‘সর্বনাশের আশায়’- এমন নানান যৌন ইশারার শব্দভরা একঘেয়ে দৃশ্য দিয়ে আর যাই হোক- ছবি হয় না।
ছবিতে স্বস্তিকা আর সমদর্শীর পাগলপারা প্রেম। সমদর্শী আর্টিস্ট, তার পছন্দের ক্যানভাস মেয়েদের খোলা পিঠ। স্বস্তিকার পিঠে রঙ ভরানোর জন্যে ছটফটায় তার মন। মনকেমনের অসুখ নিয়ে চলা স্বস্তিকা যদিও তার পিঠকে সমদর্শীর ক্যানভাস হিসেবে ছেড়ে দিতে নারাজ। তাতে নাকি তার নিজস্বতা হারাবে। বোধ নষ্ট হবে।
কী ধরনের নিজস্বতার কথা বলতে চায় এই ছবি? একলা থাকার অভ্যাস স্বস্তিকার। তিনি বুদ্ধিমতী, তাঁর ড্রয়িংরুমে বইয়ের সেল্ফ, ঝোলানো দোলনা। তাঁর সারা সকাল কাটে আলস্যে। এমন কেতের বিলাসিতা কেমন করে সম্ভব? তিনি কিছু তো করেন না! চলে কেমন করে তাঁর? বাংলা ছবি বুঝি আর বাস্তবকে আনবে না? শুধু রঙিন ক্যানভাস, মন খেপামি, কবিতার লাইন আর শরীর? এই দিয়েই পেট ভরবে আজকের বাঙালির? বেশ। তাই না হয় হল। বাংলা ছবি এখন আধুনিক, লিরিক্যাল। কিন্তু এতই যদি শরীরী আলোড়ন, তো স্বস্তিকা তাঁর প্রেমিকের (?) কাছে মেলে ধরেন না কেন নিজেকে? সমস্যাটা কী? বলে না এ ছবি। দুজনের নাকি ওয়াইল্ড প্রেম, তো বিয়ে হল কেন মন চিকিৎসক ডাক্তার জয় সেনগুপ্তর সঙ্গে? এ অধম তা বুঝতে পারেনি। আসলে ছবির লক্ষ্য তো শুধুই কাম ছড়ানো! বিবাহিত নারী আর পুরনো প্রেমিকের হট বন্ডিংটা যদি টেনেটুনে ক্লিভেজ আর চুমু খাওয়ার পাগলামি দিয়ে ভরিয়ে তোলা যায়… ব্যস তাতেই ছবি হিট।
এভাবেই এক ধরনের গল্পে ঘেরা বাংলা ছবির বাজারে এই ছবি তাই বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই দেয় না। এই ছবি আমাদের-ই প্রশ্ন করতে শেখায়, আজকের বাঙালি কি যৌনতা, পরকীয়ার টানাপোড়েন ছাড়া অন্য কিছুই দেখতে চায় না?
তবে ছবি থেকে সরে এসে যা ভাল লাগবে, তা হল ছবির অভিনয়। সমদর্শী আর জয় সেনগুপ্ত-র অভিনয় সুন্দর, যথাযথ। স্বস্তিকাকেও ভাল লাগে রুচিশীল পোশাকে। অভিনয়টাও বেশ ভাল করেছেন তিনি। ভাল স্ক্রিপ্ট আর পরিচালকের হাতে তিনি কেমন নিজেকে মেলে ধরতে পারেন, তাঁর পরিচয় কদলীবালা বেশ কিছুদিন আগেই দিয়েছেন। দেবেশ রায়চৌধুরীর অভিনয় এ ছবির বড় পাওনা। ছবির মনকেমনের আলো, রাতের ধূসর মেজাজ, রাজবাড়ির শূন্যতার আলো চমৎকারভাবে ধরা পড়েছে নানান দৃশ্যে। অণ্বেষা আর রূপঙ্করের ‘মনে পড়ছে’ গানটি বেশ মনে ধরে।
মনে এত কিছু ভাল লাগে, তবু ছবির রঙ-এ কোনও ক্যানভাস তৈরি হয় না। কোনও কিছুকেই কোনও কিছুর সঙ্গে মেলানো যায় না! আবারও এক মন খারাপের দিন। বাংলা ছবি এমন নাই বা হোক!