২৯ ডিসেম্বর ,বার্তা৭১ ডটকমঃ আজ শনিবার আওয়ামী লীগের ১৯তম ত্রি-বার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল। ‘শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির লক্ষ্যে দিনবদলের প্রত্যয়ে এগিয়ে চলছে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশ’ এই স্লোগানকে সামনে রেখেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী এই রাজনৈতিক দলের এবারের কাউন্সিল। সকাল ১১টায় শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।১৯তম কাউন্সিল উপলক্ষে ওড়ানো হবে ১৯টি পায়রা। এছাড়া জাতীয় সঙ্গীতের তালে তালে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। অনেকটা নিয়ম রক্ষার এই কাউন্সিলে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্যে আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে দিক নির্দেশনা মূলক বক্তব্য দেবেন দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
প্রথম অধিবেশনে উদ্বোধন, শুভেচ্ছা বক্তব্য ও বিভিন্ন প্রস্তাবনা উপস্থাপন। এ অধিবেশনেই দলের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলের সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ করবেন কাউন্সিলরদের সামনে। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর শুরু হবে দ্বিতীয় পর্বের কাউন্সিল অধিবেশন।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ২৪ জুলাই সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। ওই কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সভাপতি ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ক্ষমতাসীন দলটির ১৯তম কাউন্সিলে ৭ হাজার কাউন্সিলর, প্রায় ২১ হাজার ডেলিগেট, বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদেশি সব দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত, দেশীয় রাজনৈতিক দলের মধ্যে মহাজোট ও মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সব রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারা অংশ নেবেন বলে জাস্ট নিউজকে জানিয়েছেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নূহুল আলম লেনিন।
তিনি আরো জানান, দলের এবারের কাউন্সিলে বিদেশি কোনো রাজনৈতিক দলের অতিথি পর্যবেক্ষক থাকছেন না। কারণ স্বল্প সময়ের মধ্যে কাউন্সিল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে এত আয়োজনের সংকুলান করতে পারেনি দলটি।
দলের এই কাউন্সিলের বিষয়ে জানতে চেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার কাছে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা দলীয় প্রধানের আহ্বানে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে জরুরি বৈঠকে রয়েছেন বলে জানান।
এ বৈঠকে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটির রদবদল, সংযোজন ও গঠনতন্ত্র সংশোধন এবং সভাপতিমন্ডলীর সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধিসহ বেশকিছু বিষয়ে দলীয়প্রধানের সঙ্গে মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন।
একই সঙ্গে বর্তমান কমিটি বহাল রাখলে বা আংশিক পরিবর্তনের মাধ্যমে বিতর্কিত কিছু নেতাকে মাইনাস করা হলে সাংগঠনিকভাবে আওয়ামী লীগ কতটা উপকৃত বা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে সে বিষয়েও আলোচনা করেন।
তবে বেশিরভাগ নেতা এবং দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমিটির আকার বড় করার বিপক্ষে মত দিয়েছেন। সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে বর্তমান কমিটির শূন্য পদগুলো পূরণের মাধ্যমেই ১৯তম জাতীয় কাউন্সিল সম্পন্ন করার কথাই চূড়ান্ত হয়েছে এ বৈঠকে।
এদিকে উত্তাপহীন এ কাউন্সিল সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ১৫ দিন ধরে নিরলস কাজ করে চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে ১০ উপকমিটি। চলতি মাসের ৩ তারিখে নির্মিত রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অস্থায়ী বিজয় মঞ্চের ১২০ ফুট নৌকার উপর ৪৭ ফুট বিস্তৃত জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও সুপ্রশস্থ জাতীয় সংসদ সংবলিত সভামঞ্চটি বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে।
নৌকাসদৃশ্য এ মঞ্চেই সকাল ১১টায় দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে উদ্বোধন করবেন কাউন্সিল। এজন্য গত দুদিন আগে থেকে এই এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো জোরদার করা হয়েছে। সর্বত্র বসানো হয়েছে সিসি ক্যামেরা। র্যাব, পুলিশ ও বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের টহলও বাড়ানো হয়েছে।
প্রায় ২ হাজার ৫০০ স্বেচ্ছাসেবক সম্মেলনে সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে। তাদের গায়ে থাকবে একই ধরনের অ্যাপ্রোন, হাতে বাঁশি ও লাঠি। সম্মেলন অনুষ্ঠান চলাকালে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন গেট সংরক্ষিত থাকবে বিশিষ্টজনদের জন্য। গাড়ি নিয়ে আসার প্রবেশপথ থাকবে তিন নেতার মাজার সংলগ্ন গেটের সামনে। হেঁটে সম্মেলনস্থলে প্রবেশের প্রধান পথ হবে টিএসসির গেট। এছাড়া রমনা কালীমন্দির গেট, চারুকলা ইনস্টিটিউট গেট এবং শিশুপার্ক সংলগ্ন গেট দিয়েও প্রবেশের সুযোগ থাকবে।
এদিকে কাউন্সিলকে ঘিরে রাজধানী ঢাকাও সেজেছে বর্ণিল সাজে। সুবিশাল মঞ্চই শুধু নয়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পথগুলোতে দিনের আলোয় এলইডি স্ক্রিনে প্রদর্শিত হবে কাউন্সিল অনুষ্ঠান। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোকেও সাজানো হয়েছে রং-বেরঙে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুবিশাল প্রতিকৃতি, স্বাধীনতা ও দলীয় পতাকা সংবলিত বিলবোর্ডগুলো বানানো হয়েছে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক উক্তিগুলো দিয়ে।
এছাড়া সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের নিরাপত্তা বেষ্টনীর পাশাপাশি স্থাপন করা হয়েছে অস্থায়ী স্বাস্থ্য ক্যাম্প।
শুক্রবার দিনভর প্রস্তুতির কাজে ব্যস্ত ছিলেন দলটির বিপুলসংখ্যক নেতাকর্মী। দুপুরে দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলামসহ দিনের বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা মঞ্চসহ আনুষাঙ্গিক কর্মকান্ড পরিদর্শন করেন।
এবারই প্রথমবারের মতো দলীয়প্রধানের সঙ্গে ৭৩টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের দলীয় পতাকা উত্তোলনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ত্রিমুখী এ সভামঞ্চের সামনে থাকছে ৫০ হাজার চেয়ার। পাশে ১২টি টাওয়ারের উপর থাকবে ১৪/১২ ফুট বিশিষ্ট মঞ্চ ছাউনি।
এসব বিষয় তুলে ধরে দেশীয় রাজনৈতিক বোদ্ধাদের কাছে আওয়ামী লীগের অনুষ্ঠিতব্য এ কাউন্সিল দলের জন্য রাজনৈতিক ও সাংগঠনিকভাবে কতটা সুফল বয়ে আনবে জানতে চাইলে তারা জানান, সরকারের শেষভাগে এসে দলকে সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা করার পাশাপাশি প্রবীণ-নবীন সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনী বৈতরণী পাড়ি দেয়ার প্রচেষ্টা হিসেবেই ১৯তম এ কাউন্সিল অনুষ্ঠান করছে ক্ষমতাসীন এই রাজনৈতিক দলটি। নেতৃত্বে পরিবর্তন না আসলে দলের জন্য এটি অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।
দলটির অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, এই কাউন্সিলে কাউন্সিলরদের ভোটের কোনো সুযোগ রাখা হচ্ছে না। শুধু উদ্বোধন, সাংগঠনিক রিপোর্ট পেশ এবং নেতাদের বক্তৃতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। পরে দলীয়প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুবিধামতো সময়ে কমিটি ঘোষণা করবেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৪ জুলাই আওয়ামী লীগের বর্তমান কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হয়। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৬ মাস বাড়িয়ে এ সময়ের মধ্যে ১৯তম এই কাউন্সিল আহ্বান করা হয়েছে।