ঢাকা, ০৪ ডিসেম্বর,বার্তা৭১ ডটকমঃ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দল আগামী রোববার সারাদেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল আহ্বানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে । আগেই বিরোধী দল হুমকি দিয়ে আসছিল, জ্বালানি তেল, গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলে হরতাল দেওয়া হবে।
বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে বর্ধিত এ দাম কার্যকর হয়েছে। রাতে এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সরকার এ সিদ্ধান্ত জানায়। তবে বিদ্যুতকেন্দ্র এবং শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত জ্বালানি ফার্নেস অয়েলের দাম এবার বাড়ানো হয়নি। বিদ্যুত উতপাদন খরচের ওপর যাতে প্রভাব না পড়ে, সেজন্য এ জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়নি বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে এবার নিয়ে পাঁচ দফা তেলের দাম বাড়ল। এদিকে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেলচালিত যানবাহনের ভাড়াও শিগগিরই বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে যানবাহনের ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টিরও আশঙ্কা রয়েছে। কৃষি উতপাদন ব্যয়ও বাড়বে। সার্বিকভাবে জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে বলে অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, বর্তমানে মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের নিচে। দফায় দফায় জ্বালানি তেল ও বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ফলে দ্রব্যমূল্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। এতে মানুষের কষ্টও বেড়ে যাবে। এছাড়া ডিজেলের দাম বৃদ্ধিতে এ জ্বালানিনির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্রের উতপাদন খরচ বাড়বে। এ কারণে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য অধিক হারে বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বৃদ্ধি পাওয়ায় এর সমালোচনা করে অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, সরকার জনস্বার্থের বাইরে গিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আইএমএফের শর্ত মেনে দাম বাড়াতে সরকার বাধ্য হয়েছে।
এবার নিয়ে পাঁচ দফা :বর্তমান সরকার যখন দায়িত্ব গ্রহণ করে তখন ডিজেল ও কেরোসিন ৪৬, পেট্রোল ৭৪ এবং অকটেনের দাম ছিল প্রতি লিটার ৭৭ টাকা করে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম মাসেই (১২ জানুয়ারি, ২০০৯) ডিজেল ও কেরোসিনের দাম দুই টাকা কমানো হয়। ২০০৯ এবং ২০১০ সালে তেলের দাম না বাড়লেও ২০১১ সালে চার দফা দাম বাড়ে। ওই বছরে ৬ মে লিটারপ্রতি ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রোল, অকটেন ও ফার্নেস অয়েলের দাম দুই টাকা করে বাড়ানো হয়। একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর প্রধান চার জ্বালানি তেল লিটারে পাঁচ টাকা এবং ফার্নেস অয়েল আট টাকা বৃদ্ধি পায়। ১০ নভেম্বর প্রধান পাঁচ ধরনের জ্বালানি তেলের দাম পাঁচ টাকা করে বাড়ানো হয়। সর্বশেষ ২০১১ সালের ৩০ ডিসেম্বর এসব তেলের দাম একই হারে বাড়ানো হয়।
আইএমএফের শর্ত : সরকারকে ১০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার শর্ত হিসেবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বিদ্যুত ও জ্বালানি তেলে ভর্তুকি কমানোর শর্ত দেয়। বিশেষ করে তেলে লিটারপ্রতি ভর্তুকি ১০ টাকার নিচে নামাতে বলা হয়। ইতিমধ্যে আইএমএফ প্রথম কিস্তির অর্থ দিয়েছে। দ্বিতীয় কিস্তির টাকা চলতি মাসেই ছাড় করার কথা রয়েছে। আইএমএফের ওই দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ পেতে সরকার প্রধান বিরোধী দল বিএনপি এবং বাম দলগুলোর হরতালের হুমকি উপেক্ষা করেই তেলের দাম বাড়াল।
রেন্টাল বিদ্যুতের কারণেই বার বার দাম বাড়ছে : রেন্টাল (ভাড়াভিত্তিক) এবং কুইক রেন্টালসহ জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্রে গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছয় মাসে মোট আট লাখ ৮৯ হাজার টন ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল লেগেছে। ভর্তুকি মূল্যে এ তেল সরবরাহ করতে গিয়ে বিপিসির লোকসানের বোঝা বেড়ে গেছে। এ লোকসান সামলাতেই বার বার তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। সূত্র মতে, দু’বছর আগে তেল আমদানিতে সরকারকে পৌনে ৩ বিলিয়ন ডলার বছরে খরচ করতে হতো । সেখানে গত অর্থবছরে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার লেগেছে । এ অর্থের জোগান দিতে গিয়ে সরকারকে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। বর্তমানে তেলভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের বেশিরভাগেই ফার্নেস অয়েল ব্যবহার হয়। তাই সরকার ফার্নেস অয়েলের দাম বাড়ায়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।
হরতাল কর্মসূচি : জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর প্রতিবাদে আগামী রোববার সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করবে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোট। বৃহস্পতিবার দলের সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে গভীর রাতে এক বৈঠকে হরতালের দিন চূড়ান্ত করেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। আগেই সিদ্ধান্ত ছিল জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর পরদিনই হরতাল দেবে বিরোধী জোট। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় রোববার হরতালের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে বৈঠকে উপস্থিত নেতারা জানান।
শুক্রবার সকাল ১১টায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে ১৮ দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক শেষে হরতালের এ কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে।
রাত সাড়ে ১১টার পর গুলশান কার্যালয়ে সিনিয়র নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন খালেদা জিয়া। রাত ১০টায় জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হওয়ার পর খালেদা জিয়া সিনিয়র নেতাদের জরুরি তলব করেন। বৈঠকে স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জে. (অব.) মাহবুবুর রহমান, এম কে আনোয়ার, ব্যারিস্টার জমিরউদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, আবদুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।