বার্তা৭১ ডটকমঃ: টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে শুক্রবার ফযরের নামাযের পর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিশ্ব মুসলিম উম্মার দ্বিতীয় বৃহত্তম জমায়েত বিশ্ব ইজতেমা। এ উপলক্ষে শুক্রবার এই ময়দানে অনুষ্ঠিত হবে দেশের বৃহত্তম জুম্মার নামাজের জামায়াত। দেশি বিদেশী হাজার হাজার মুসল্লি এ জামায়াতে যোগ দেবেন । এবারও দুই পর্বে ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে। তাবলীগ জামায়াত আয়োজিত এ বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব রোববার আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
এরইমধ্যে ইজতেমার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র্যাব ও পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থায় রয়েছে ইজতেমা ময়দান ও আশপাশের এলাকায়।
পরকালে চিরশান্তি আর আল্লাহকে খুশি করতে কনকনে শীত উপেক্ষা করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দলে দলে মুসল্লিরা সমবেত হয়েছেন ইজতেমা মাঠে। বিশাল চটের সামিয়ানার নীচে তারা অবস্থান নিয়েছেন। বিদেশি মুসল্লিরা অবস্থান করছেন বয়ান মঞ্চের উত্তর পশ্চিম পাশে নির্মিত টিনসেডের অস্থায়ী নিবাসে।
সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে ইজতেমা সম্পন্ন করার লক্ষ্যে আয়োজক ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে বাস্তবায়ন হয়েছে।
বিশ্ব ইজতেমার মুরুব্বী আব্দুল কুদ্দুস জানান, আল্লাহর অশেষ রহমতে বিশ্ব ইজতেমার এতো বড় আয়োজন অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন হয়। এজন্য আমাদের কিছু পদক্ষেপ নিতে হয়। পুরো ইজতেমা ময়দানকে মুরুব্বীদের পরামর্শে সাজানো হয়। ময়দানে জেলাওয়ারি মুসল্লিদের অবস্থান, রান্না-বান্না করার স্থান, টয়লেট, অজুখানা, গোসল খানা সবই সুনিদির্ষ্ট করা থাকে।
এবারে প্রথম পর্বে বিভিন্ন জেলার মুসল্লিদের জন্য পুরো ময়দানকে ৪০টি খিত্তায় ভাগ করা হয়েছে। এসবের মধ্যে ১-২নং খিত্তায়-গাজীপুর, ৩-১২ নং খিত্তায় – ঢাকা, ১৩নং খিত্তায়- সিরাজগঞ্জ, ১৪নং খিত্তায়-নরসিংদী, ১৫ নং খিত্তায়-ফরিদপুর, ১৬নং খিত্তায়- রাজবাড়ি, ১৭নং খিত্তায়- শরিয়তপুর, ১৮নং খিত্তায়-কিশোরগঞ্জ, ১৯নং খিত্তায়-রংপুর, ২০নং খিত্তায়-নাটোর, ২১নং খিত্তায়-শেরপুর, ২২নং খিত্তায়-রাজশাহী, ২৩নং খিত্তায়-গাইবান্ধা, ২৪নং খিত্তায়- জয়পুরহাট, ২৫নং খিত্তায়-লালমনিরহাট, ২৬নং খিত্তায়- হবিগঞ্জ, ২৭নং খিত্তায়- দিনাজপুর, ২৮নং খিত্তায়- সিলেট, ২৯নং খিত্তায়- চাঁদপুর, ৩০নং খিত্তায়- ফেনী, ৩১নং খিত্তায়- চট্টগ্রাম, ৩২নং খিত্তায়-বান্দরবন, খাড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি, ৩৩নং খিত্তায়- বাগেরহাট, ৩৪নং খিত্তায়- কুষ্টিয়া, ৩৫নং খিত্তায় নড়াইল, ৩৬নং খিত্তায়-চুয়াডাঙ্গা, ৩৭নং খিত্তায়- যশোর, ৩৮নং খিত্তায়- ভোলা, ৩৯নং খিত্তায়-বরগুনা এবং ৪০নং খিত্তায়-ঝালকাঠি জেলার মুসল্লিরা অবস্থান নেবেন।
তিনি জানান, এরই মধ্যে মুসল্লিরা এসব খিত্তায় এসে অবস্থান নিয়েছেন। ১শ’টি দেশের প্রায় ২৫ হাজারের মতো বিদেশি মুসল্লি বাংলাদেশে পৌঁছেছেন। এবারও বিদেশি নিবাসের পূর্বপাশে আখেরি দোয়ামঞ্চ ও ময়দানের পশ্চিমে দোয়ামঞ্চ থেকে দক্ষিণে তুরাগ তীরে বয়ান ও নামাজের মঞ্চ স্থাপন করা হয়েছে। মাইক ছাড়া নামাজ আদায় করার জন্য প্রতিবারের মতো ছাউনির ভেতরে প্রায় ২শ’ মুকাব্বের মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
এবার মুসল্লির সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখে আয়োজকরা মাঠের পরিসর বাড়াতে গিয়ে এ বছর চট সঙ্কটে পড়েছেন। তাই এ বছর ত্রিপল ও পলিথিন ব্যবহার করা হয়েছে।
মাঠের উত্তর পাশে ৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত পাকা টয়লেটের সংস্কার ও সম্প্রসারণের কাজ শেষ হয়েছে। মাঠে বালু ভরাট এবং সড়ক সংস্কার কাজ করা হয়েছে। মাঠের গর্ত ও উঁচু-নিচু জমি মাটি দিয়ে সমতল করা হয়েছে। মুসল্লিদের জন্য ১২টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে দৈনিক সাড়ে ৩ কোটি লিটার পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। স্যানিটেশন, মশক নিধনের জন্য টঙ্গী পৌরসভা ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ কাজ করছে।
বিদেশি মেহমান: ইজতেমার বিশাল প্যান্ডেলের উত্তর-পশ্চিম কোনায় তাবলীগে বিদেশি মেহমানদের জন্য টিনশেডে নিবাস তৈরি করা হয়েছে। এ নিবাসটিতে প্রায় ২৫ হাজার মেহমান অবস্থান করতে পারবেন।
ইতিমধ্যে ভারত, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে তাবলীগ জামায়াতের অনুসারীরা বাংলাদেশে এসে পৌঁছেছেন। আগত মেহমানদের সর্বোচ্চ ৩০ দিন পর্যন্ত ভিসা দেয়া হয়। বিমানবন্দরে আগত মেহমানদের জন্য অভ্যর্থনা কাম ভিসা সেল গঠন করা হয়েছে।
অতিথিদের জন্য বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। বিদেশি নিবাসে তাদের রান্নার জন্য গ্যাসসংযোগ দেয়া হয়েছে। বিদেশি নিবাসের পাশেই টিন, লোহার পাইপ ও কাঠ দিয়ে মূলবয়ানমঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। বয়ানমঞ্চ থেকে মুরব্বিদের সরাসরি ছাউনিতে যাতায়াতের জন্য একটি সেতু তৈরি করা হয়েছে।
চার স্তরে নিরাপত্তা: বিশ্ব ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবার চার স্তরের নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। তাবলীগ জামাতের নিজস্ব স্বেচ্ছাসবকদের সঙ্গে ১ম পর্বে নিরাপত্তায় র্যাব, পুলিশ ও সাদা পোশাকের গোয়েন্দার ১০ হাজার সদস্য থাকবে।
র্যাব ও পুলিশের বেশ কয়েকটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণ করা হয়েছে। তারা সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে পুরো মাঠ পর্যবেক্ষণ করবেন। ইজতেমামাঠ ও আশপাশে সিসি টিভি এবং পর্যাপ্ত ভিডিও ক্যামেরাতে সার্বিক কার্যক্রমের চিত্র ধারণ করা হবে। ইজতেমা মাঠ ও আশপাশের এলাকায় হেলিকপ্টার টহল এবং তুরাগ নদীতে র্যাবের নৌ টহল থাকবে। মাঠের বিভিন্ন পয়েন্টের অবজারভেশন টাওয়ার থেকে সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণও করা হবে।
এছাড়া মাঠের ভেতরে খিত্তায় খিত্তায় সাদা পোশাকে বিশেষ টুপি পরে মুসল্লিদের সঙ্গে নিরাপত্তাকর্মীরা অবস্থান করবেন। আলাদা বসানো হচ্ছে র্যাবের কন্ট্রোল রুম। স্থাপন করা হয়েছে র্যাবের অবজারভেশন টাওয়ার। মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে মেটাল ডিটেকটর দিয়ে তল্লাশি করা হবে। ইজতেমা ময়দানে প্রবেশের জন্য ১৮টি গেট নির্মাণ করা হয়েছে। তুরাগ নদীতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ার কোরের অধীনে ৮টি ভাসমান পন্টুন সেতু তৈরি করেছে সেনাবাহিনী।
ইজতেমা চলাকালে মোবাইল কোর্ট সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবে। র্যাবের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলও থাকবে মাঠে। পকেটমার ও ছিনতাইকারী পাকড়াও করতে সার্বক্ষণিকভাবে থাকছে সিআইডি/গোয়েন্দা টিম। ভিআইপিদের জন্য বাটা কারখানার ভেতর এবং তুরাগ নদীর তীরে ২টি হেলিপ্যাড নির্মাণ করা হয়েছে।
সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থা: ইজতেমা চলাকালীন সার্বক্ষণিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগ, ডেসকো ও পিডিবির পরিকল্পনা রয়েছে।মাঠে স্থায়ীভাবে সিকিউরিটি লাইটিংয়ের ব্যবস্থা করছে টঙ্গী পৌরসভা। টঙ্গী ও উত্তরার ডেসকো ইজতেমাস্থলে ১৩২ কেভি বিদ্যুৎ ৩টি (১১ কেভি) ফিডারের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।
এছাড়া সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ সরবরাহে ৫টি ট্রলি ট্রান্সফরমার ও ৪টি স্ট্যান্ডবাই জেনারেটর থাকছে। বিটিসিএল মাঠের বিভিন্ন স্থানে ৪০টি টেলিফোন লাইনসংযোগের ব্যবস্থা করেছে বলে জানা গেছে।