শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদ হারাতে যাচ্ছেন অধ্যাপক শরীফ এনামুল কবির।
উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অচল এই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি নিয়ে এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পর উপাচার্য শরীফ এনামুল কবিরকেও ডেকে পাঠান তিনি। সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পর অধ্যাপক কবির সাংবাদিকদের বলেন, এ ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান যে সিদ্ধান্ত দেবেন, তাই মেনে নেবেন তিনি। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বেশ বিমর্ষ দেখাচ্ছিল অধ্যাপক কবিরকে, যদিও তিনি বলেন, ‘খুশিমনে’ বাড়ি ফিরছেন তিনি। অন্যদিকে আন্দোলনরত শিক্ষকরা প্রধানমন্ত্রীকে বলেন, তাদের একটিই দাবি, তা হল, উপাচার্য পরিবর্তন। প্রধানমন্ত্রীও তাদের আশ্বস্ত করেন বলে শিক্ষকরা জানান।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে বেরিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষকদের নেতা অধ্যাপক নাসিম আখতার হোসাইন বলেন, “প্রধানমন্ত্রী যে কথা দিয়েছেন, তাতে আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আশা করছি, তিনি দ্রুত একটা সমাধান দেবেন।”
সরকারের ওই সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী যে কোনোভাবে শিক্ষাঙ্গনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বদ্ধপরিকর। তিনি চাইছেন না, শিক্ষকদের বিভাজনের কারণে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হোক। তাই পরিস্থিতি স্থিতিশীলে উপাচার্য পরিবর্তনের পক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন তিনি।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগ দেন চ্যান্সেলর। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান উপাচার্য কবিরের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।
সূত্র জানায়, এই পুরো বিষয়টি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ রাষ্ট্রপতিকে জানাবেন। এরপর রাষ্ট্রপতি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। সেক্ষেত্রে উপাচার্যকে পদত্যাগ করতে বলা হবে। নতুন উপাচার্য নিয়োগ হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর উপাচার্যবিরোধী শিক্ষকরা তাদের দেড় মাস ধরে চলা আন্দোলন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছে। শিক্ষকদের এই পদক্ষেপও সরকারের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে বলে ওই সূত্র জানায়।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় যাওয়ার পর ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাভারে দেশের একমাত্র আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য পদে নিয়োগ পান শরীফ এনামুল কবির। তিনিই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য, যিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্র ছিলেন।
উপাচার্য হিসেবে প্রায় তিন বছরেরও বেশি সময় দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, ছাত্রলীগের ‘একটি অঞ্চলভিত্তিক’ অংশকে মদদ, বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে বাধার অভিযোগ ওঠে অধ্যাপক কবিরের বিরুদ্ধে।
এছাড়া প্রাকৃতিক সম্পদের বাণিজ্যিকীকরণ, ক্যাম্পাসে সৌন্দর্য বাড়ানোর নামে গাছ কাটা নিয়েও সমালোচনায় পড়েন তিনি।
তবে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক আন্দোলন গড়ে ওঠে এই বছরের শুরুতে, তার মদদপুষ্ট ছাত্রলীগ নেতাদের হামলায় সংগঠনটির অন্য অংশের কর্মী ও ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের আহমেদ নিহত হলে।
গত ৯ জানুয়ারি জুবায়ের খুন হওয়ার পর থেকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একপ্রকার অচল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
ওই ঘটনায় প্রশাসনের ভূমিকা এবং প্রায় ২০০ শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলন চালাতে থাকে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
ধাপে ধাপে আন্দোলন চালানোর পর আন্দোলনরত শিক্ষকদের ফোরাম ‘শিক্ষক সমাজ’ গত ১৮ এপ্রিল উপাচার্যের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে কর্মসূচি শুরু করে।
শিক্ষকদের আন্দোলনের এক পর্যায়ে গত সপ্তাহে সাংস্কৃতিক জোট নেতাদের ওপর ‘উপাচার্যপন্থী ছাত্রলীগ’ হামলা চালালে শিক্ষার্থীরাও শরীফ এনামুল কবিরের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনে নামে।
শিক্ষকদের পাশাপাশি তারাও উপাচার্য ভবন এবং তার বাড়ি অবরুদ্ধ করায় অংশ নেয়। এরপর মঙ্গলবার শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশন শুরু করে। পরদিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনশনে যোগ দেন শিক্ষকরাও।
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের অনশনের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ নেন।