ঢাকা, ২৩ জানুয়ারি, বার্তা৭১ ডটকমঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, চলতি জানুয়ারি মাসের মধ্যে পদ্মা সেতু নির্মাণে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন নিশ্চিত না করলে বিকল্প ব্যবস্থায় সরকার পদ্মা সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করবে।
বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাম্প্রতিক রাশিয়া সফরের অভিজ্ঞতা দেশবাসীকে জানাতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেছেন, আমাদের অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংককে অর্থায়ন নিয়ে জানুয়ারির মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বলেছে। যদি তারা তা না করেন তবে আমরা নিজেরাই কাজ শুরু করবো।
তিনি আবারও বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে দুর্নীতি হয়নি, বিশ্বব্যাংকের মতে ষড়যন্ত্রের চেষ্টা হয়েছে। ষড়যন্ত্রের চুলচেরা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে বাংলাদেশে কোন কিছুই করা যাবে না।
তাছাড়া বিশ্বব্যাংক প্যানেলের একটি কপি আমরা পাওয়ার আগে কিভাবে একটি পত্রিকা তা হুবহু প্রকাশ করে। আমার মনে হয় এখানেও দুরভিসন্ধি রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী জাতীয় নির্বাচন সংক্রান্ত অপর এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, আগামী জানুয়ারির মধ্যেই দেশের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। গত নির্বাচনে আমরা জনগণের কাছে যে ওয়াদা করেছিলাম অনেক ক্ষেত্রে আমরা তার চেয়ে বেশি বাস্তবায়ন করেছি।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী রাশিয়া সফরকে সফল উল্লেখ করে বলেন, রাশিয়ায় বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির উজ্জ্বল সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হয়েছে। এ ছাড়াও দেশটি আমাদের তথ্য ও যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে আমরা শুল্কমুক্ত পণ্য রপ্তানির আহ্বান জানিয়েছি। তাদের সঙ্গে কয়েকটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হওয়ায় আমাদের ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সুযোগ সৃষ্টি হবে।
চলতি বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই রূপপুরে ১ হাজার মেগাওয়াট ক্ষমতার পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলতি মাসে প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরের সময় এ প্রকল্পের অর্থায়নের বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি হয়।
এছাড়া রাশিয়া থেকে ১০০ কোটি ডলারের সমর সরঞ্জাম কেনার বিষয়েও একটি চুক্তি হয় প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরে। শেখ হাসিনা আশা প্রকাশ করেন, চুক্তির আওতায় আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবরেই রূপপুর প্রকল্পের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে। রাশিয়ার সঙ্গে চুক্তির ফলে এই কাজ অনেক সহজ হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
রাশিয়ার আণবিক শক্তি করপোরেশনের (রোসাটম) মহাপরিচালক সের্গেই কিরেনকো গত ১৬ জানুয়ারি মস্কোয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং চলতি বছরই রূপপুর প্রকল্পের নির্মাণ শুরুর আগ্রহ প্রকাশ করেন। চুক্তির খসড়া অনুযায়ী, পাবনার রূপপুরে দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কারিগরি গবেষণার জন্য রাশিয়ার কাছ থেকে ৫০ কোটি ডলার ঋণ পাবে বাংলাদেশ।
বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে কত খরচ হবে, তা নির্ধারণে কারিগরি গবেষণার জন্য আগামী দুই বছর এই অর্থ ব্যয় করা হবে। রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে গত নভেম্বরে রাশিয়ার পারমাণবিক জ্বালানি সংস্থা রোসাটমের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি করে বাংলাদেশ।
বহির্বিশ্বে আমাদের অর্জন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সেনা প্রেরণকারী দেশ বাংলাদেশ। আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় ১ লাখ ১১ হাজার বর্গ কিলোমিটার সমুদ্র জয় করেছি। ভারতের সঙ্গেও এই নিয়ে মামলা চলছে। ভবিষ্যতে এখানেও রায় আমাদের পক্ষে আসতে পারে।
তিনি বলেন, পুতিনসহ রাশিয়ার সর্বস্তরের মানুষ বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন। এ শ্রদ্ধাবোধ আমাকে গর্বিত করেছে। দেশটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। তাই তাদের সাথে আমাদের বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক এবং তা অক্ষুণ্ন থাকবে।
উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ দিনের সফরে ১৪ জানুয়ারি রাশিয়া যান। সেখানে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। দুই নেতার উপস্থিতিতে উভয় দেশের মধ্যে ৩টি চুক্তি ও ৭টি সমঝোতা স্মারক সই হয়। সফরকালে বাংলাদেশ ও রাশিয়ার মধ্যে ৩টি চুক্তি ও ৭টি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। এরমধ্যে পাবনার রূপপুরে বাংলাদেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন এবং সমরাস্ত্র কেনার চুক্তি রয়েছে।