বার্তা৭১ ডটকমঃ দেশে এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন (ব্যবস্থাপত্র) ছাড়া এ জাতীয় ওষুধ বিক্রি বন্ধে শীঘ্রই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
তিনি বলেন, ‘দিন দিন মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। এ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের কারণে এর কার্য ক্ষমতাও কমে যাচ্ছে। বিশ্বব্যপী এ সমস্যা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করছে। এ জন্য সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বসে আলোচনা করে শীঘ্রই এ ব্যপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডা. মিলন হলে বুধবার দুপুরে ‘ন্যাশনাল সিম্পোজিয়াম অন এ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিস্ট্যান্স কনটেইনমেন্ট’ অনুষ্ঠানের উদ্ধোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা (সিপিডি) দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।
সম্মেলনে উপস্থিত ৪৮০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা অংশ নেন। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘আপনাদের চলাফেরার সুবিধার জন্য শীঘ্রই গাড়ি দেওয়া হবে। আমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী কয়েক ধাপে সবাইকে গাড়ি দিব। তবে প্রথমে দুই মাসের মধ্যেই বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় ৫০টি গাড়ি দেওয়া হবে।’
এর মধ্যে প্রথমে ২৮ জন নারী কর্মকর্তা এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় পর্যায়ক্রমে গাড়িগুলো দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
গাড়িগুলোর সঠিক ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি অনেক এ্যাম্বুলেন্স দিয়েছি। কিন্তু সেগুলোর ঠিকমতো ব্যবহার হয় না। এ্যাম্বুলেন্স রোগী পরিবহনের কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজে ব্যবহার হতে দিবেন না। এ্যাম্বুলেন্সকে অন্য কাজে ব্যবহার করতে কেউ কোনো রাজনৈতিক চাপ দিলে আমাকে জানাবেন, আমি তাদেরকে শায়েস্তা করে দেব।’
নবনিযুক্ত ছয় হাজার চিকিৎসক ঠিকমতো কাজ করছে কিনা এ বিষয়ে সব অফিসারকে খেয়াল রাখার অনুরোধ করে মন্ত্রী বলেন, ‘তারা ঠিকমতো কাজ করছে কিনা, নিজের দায়িত্ব পালন করছে কিনা এসব বিষয়ে খেয়াল রাখবেন। ইউনিয়ন পর্যায়ে যেসব কমিউনিটি হেলথ ক্লিনিকে ডাক্তার নেই সেগুলোতে সপ্তাহের নির্দিষ্ট সময় যেন উপজেলার ডাক্তাররা যান এ বিষয়ে আপনারা দায়িত্ব ভাগ করে দিবেন।’
‘আপনারা আপনাদের দায়িত্ব পালন করেন আপনাদের সকল সমস্যা আমি সমাধান করবো’, বলেন তিনি।
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘যে কেউ অন্যায় করলে বা দায়িত্বে অবহেলা করলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো, কোনো সম্মেলনে উপস্থিত ৪৮০ জন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার দাবির প্রেক্ষিতে তদবির শুনবো না।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বদরবারে বাংলাদেশের প্রশংসাই প্রমাণ করে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে স্বাস্থ্যখাতে বাংলাদেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে।’
এসময় মন্ত্রী দূর্নীতি ও সকল অপশক্তির বিরুদ্ধে যার যার অবস্থান থেকে শক্তিশালী এ্যান্টিবায়োটিকের মতো কাজ করার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ শামছুজ্জামান।
তিনি বলেন, ‘দিন দিন রোগ জীবাণু ওষুধ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এর অন্যতম কারণ নিজে নিজে এন্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ সেবন, সঠিক সংক্রমনে সঠিক এন্টিবায়োটিকের ব্যবহার না করা, সঠিক মাত্রা ও সঠিক সময়কাল অনুসরণ না করা, দামী ও বাজারে নতুন আসা এন্টিবায়োটিক ব্যবস্থাপত্রে লিখার প্রবণতা।’
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক দ্বীন মোহাম্মদ নুরুল হক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ইসমাইল খান, পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মিজানুর রহমান প্রমুখ।