বার্তা৭১ ডটকমঃ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করার যে পরিকল্পনা, তা সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারাগারে নিঃসঙ্গ দিনগুলোতেই তৈরি করেছিলেন বলে জানিয়েছেন শেখ হাসিনা। সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গত ছয় বছরে অনেকটাই এগিয়েছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার। বাকি সময়ের আগেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোয় আশাবাদী আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।
রোববার রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কারাগারের দিনগুলোর কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।
২০০৭ সালে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গ্রেপ্তার হন শেখ হাসিনা। সংসদ ভবন এলাকার একটি বাড়িতে বিশেষ কারাগারে বছরকাল বন্দি থাকতে হয়েছিল তাকে।
“আমাকে সলিটারি কনফাইনমেন্টে রাখা হয়েছিল, একদম একা। আমি সেই সময় বসে বসে…; আমি জানি আমার বিরুদ্ধে অনেক মামলা, আমি যাতে নির্বাচন করতে না পারি, আরও অনেক রকম পরিকল্পনা ছিল বা আমি যেন আর রাজনীতিতে থাকতে না পারি সেই ধরনের অনেক ষড়যন্ত্র।”
“সেই সময় বসে বসে আমি লিখে রেখেছিলাম, ২০০৮-এর মধ্যে নির্বাচন হলে যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যায় তাহলে দেশের জন্য কী করব?”
“২০১১ সালে আমরা কী করব, ২০১২ সালের মধ্যে কী করব, ২০১৩ সালের মধ্যে কী করব, ২০১৪ সালে মধ্যে, ২০১৫ সালের মধ্যে কী করব, এভাবে আমি প্রত্যেকটা বিষয় লিখে রেখেছিলাম।”
জরুরি অবস্থার অবসানের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করেন শেখ হাসিনা। রাজনীতির জটিল পথেও দ্বিতীয় মেয়াদের সরকার নিয়ে চলছেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, “অর্থাৎ আমাদের শিক্ষার হার, স্বাস্থ্য সেবা জণগণের দৌড়গোড়ায় পৌঁছে দেওয়া, পরিবেশ উন্নত করা, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা-অর্থাৎ মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলি পূরণ করার কাজগুলি কী হবে, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার জন্য কী কী করণীয় তখনই এগুলি আমি নিজে হাতে লিখে রেখেছিলাম একটা খাতায়।”
কারাগারে যাওয়ার সময় একটি খাতা সঙ্গেই নিয়েছিলেন তিনি। পরে আরও কিছু খাতা কিনিয়ে নেন। সেসব খাতাতেই সব কিছু লিখে রাখেন বলে জানান তিনি।
জেলখানার সেই খাতাগুলোতে লেখা পরিকল্পনাই ঘষেমেজে ‘ভিশন-২০২১’ রূপকল্প তৈরি করা হয়েছিল বলে জানান শেখ হাসিনা।
“পরবর্তীতে ২০০৮ এর নির্বাচনী ইশতেহার যখন প্রস্তুত করি তখন আমি সেখান (জেলাখানার খাতা) থেকে সব পয়েন্টগুলি বের করি। এবং সেখানে আপনারা দেখবেন যে, ভিশন ২০২১ ওই ভাবে সাল ধরে ধরে সেটাকে আরেকটু সময় উপযোগী করে ঘোষণাটা আমরা দিয়েছি।”
গত ছয় বছরে আর্থ-সামাজিক ও মানব উন্নয়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতি আন্তর্জাতিক মহলেও প্রশংসিত।
বিশ্ব মন্দার কারণে উন্নত দেশগুলোর অর্থনীতিতে মন্থর গতি দেখা দেওয়ায় গত ছয় বছরে বিশ্ব অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি যেখানে গড়ে চার শতাংশের কম, সেখানে বাংলাদেশ এই সময়ে গড়ে ছয় শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছে।
গত ছয় বছরের দারিদ্র্যের হার অর্ধেকের মত কমে নেমে এসেছে প্রায় ২৪ শতাংশে।
গত ২ জুলাই বাংলাদেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশের কাতারে এনেছে বিশ্ব ব্যাংক। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এখন ১ হাজার ৩১৪ ডলার। মাথাপিছু আয়ের এই হিসাবে (নমিনাল) বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বে ৫৮তম। ক্রয় ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের ৩৬তম।
শেখ হাসিনা বলেন, “কাজেই আজকে এটুকু বলব, এই দেশ আমাদের। আমরা সরকার চালাই নিজেদের স্বার্থে না, দেশের স্বার্থে, মানুষের স্বার্থে, জনগণের কল্যাণে। জনগণের কল্যাণে কাজ করলে যে দেশকে উন্নত করা যেতে পারে, সেটা আমরা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করেছি।”
২০১৩ সালে সম্ভাব্য দুর্নীতির অভিযোগ তুলে দেশের সবচেয়ে বড় নির্মাণ প্রকল্প পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে বিশ্ব ব্যাংক নিজেদের সরিয়ে নিলে তাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে ওই সেতু নির্মাণের ঘোষণা দেন শেখ হাসিনা।
সেতুর কাজ ইতোমধ্যে বেশ কিছুটা এগিয়ে গেছে এবং ২০১৯ সালেই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।
বিশ্ব ব্যাংকের প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, “হ্যাঁ, আজকে বিশ্ব ব্যাংক..এক সময় যে বিশ্ব ব্যাংক আমাদের পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। আজ কিন্তু.. যখন ঘোষণা দিয়েছিলাম যে, কারও উপর নির্ভরশীল হয়ে নয়, কারও কাছে হাত পেতে নয়। আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াব। নিজেরা নিজেদেরকে উন্নত করব।
“আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি, বিজয় অর্জন করেছি, আমরা বিজয়ী জাতি। দেশের প্রতিটি নাগরিককে সব সময় একথা মাথায় রেখে চলতে হবে যে, আমরা বিজয়ী জাতি। বাংলাদেশ কারও কাছে মাথা নত করে না। আমরা মাথা নত করিনি। বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল, আমরা সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেছি।”
নিম্ন মধ্য আয়ের থেকে উচ্চ আয়ের দেশে বাংলাদেশকে তুলতে সবার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন প্রধানমন্ত্রী।
আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতির পিতাই বলে দিয়েছিলেন যে, বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না- একথা আমি বিশ্বাস করি।”