বার্তা৭১ ডটকমঃ দপ্তরছাড়া করার সাত দিনের মধ্যে সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে নতুন অফিস দিয়েছেন শেখ হাসিনা।
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে বাদ দেওয়ার পর এখন তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে আশরাফের নতুন দপ্তরের প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে।
গত ৯ জুলাই দলের সাধারণ সম্পাদককে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে সৈয়দ আশরাফকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে তা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছিল।
এরপর নানা গুঞ্জনের মধ্যে গত ১৩ জুলাই শেখ হাসিনার সঙ্গে একান্তে কথা বলার পর লন্ডন যাত্রা বাতিল করে দেশেই থেকে যান আশরাফ।
তার দুদিনের মধ্যে নতুন দপ্তর পেলেন তিনি।
সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন করে জনপ্রশাসন করার পর আশরাফই এই দপ্তরের প্রথম পূর্ণ মন্ত্রী।
দেড় বছর ধরে এই মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত এ এইচ এস কে সাদেকের স্ত্রী ইসমত আরা সাদেক। মন্ত্রণালয়টি নিজের হাতেই রেখেছিলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা।
বিএনপি কিংবা আওয়ামী লীগ যেই সরকার গঠন করুক না কেন, দলের সাধারণ সম্পাদককেই এত দিন ধরে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে দেখে আসছিল বাংলাদেশ।
তারই ধারাবাহিকতায় ২০০৯ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর ওই মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছিল আশরাফকে, যদিও এতে তার ইচ্ছা ছিল না বলে গণমাধ্যমের খবর।
এরপর সাত বছর আশরাফের গুরুত্বপূর্ণ ওই মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকার মধ্যে তার নিয়মিত সময় না দেওয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় ওঠে।
তবে ২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের পরও দলে নিজের সবচেয়ে বিশ্বস্ত হিসেবে পরিচিত আশরাফকে সরকারের একই দায়িত্ব দিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
কিন্তু গত ৭ জুলাই একনেক সভায় আশরাফকে না দেখে শেখ হাসিনা অসন্তোষ প্রকাশ করেন বলে বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।
তখন সরানোর গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়লেও তা গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছিলেন আশরাফ। কিন্তু দুদিন বাদে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের প্রজ্ঞাপন সেই গুঞ্জনকে সত্যি রূপ দেয়।
২০০৭ সালে জরুরি অবস্থা জারির পর শেখ হাসিনার বন্দি হওয়া এবং প্রভাবশালী কয়েকজন নেতার উল্টোযাত্রার মধ্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে বিরূপ পরিস্থিতি সামাল দিয়ে দলীয় সভানেত্রীর পূর্ণ আস্থা অর্জন করেন আশরাফ।
এরপর বিডিআর বিদ্রোহ, হেফাজতের উত্থান সামাল দেওয়া এবং বিএনপিকে বাদ দিয়েই নির্বাচন করে ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার ক্ষেত্রে আশরাফের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা আওয়ামী লীগে আলোচিত।
সেই আশরাফকে আকস্মিকভাবে শেখ হাসিনা দপ্তর ছাড়া করার পর আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যে মুখ না খুললেও সমর্থকদের অনেকেই মেনে নিতে পারছিলেন না সৈয়দ নজরুলের ছেলের এভাবে বিদায়।
এসব আলোচনার মধ্যেই দলীয় সাধারণ সম্পাদক আশরাফকে নতুন দপ্তর দিয়ে দৃশ্যত শেখ হাসিনা তার আগের সিদ্ধান্ত পুনর্মূল্যায়ন করলেন।
কিশোরগঞ্জের সংসদ সদস্য আশরাফ ছাত্রজীবনে ময়মনসিংহ জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর জেলখানায় সৈয়দ নজরুলসহ জাতীয় চার নেতাকে হত্যার পর লন্ডনে চলে যান আশরাফ। সেখানে আওয়ামী লীগে সক্রিয় ছিলেন তিনি।
১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর শেখ হাসিনার ওই সরকারে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হন আশরাফ। এরপর প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই সংসদ সদস্য হয়ে আসছেন তিনি।