বার্তা৭১ ডটকমঃ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময়ে পটুয়াখালীর রাজাকার সহযোগী ফোরকান মল্লিকের মৃত্যুদণ্ডের রায় হয়েছে তিন বেসামরিক নাগরিককে হত্যা, এক নারীকে ধর্ষণের পর খুন এবং অন্য এক নারীকে দল বেঁধে ধর্ষণে জড়িত থাকার দায়ে। রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, যুদ্ধকালীন সময়ে হোক, অথবা শান্তিপূর্ণ সময়ে; ধর্ষণ বা যৌন হয়রানি এমন এক ‘লুণ্ঠন’, যা একবার নিয়ে নিলে আর ফেরত দেওয়া যায় না। গণধর্ষণ খুনের চেয়েও ‘গুরুতর অপরাধ’।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বৃহস্পতিবার এই রায় ঘোষণা করেন।
একাত্তরে ফোরকান ছিলেন মুসলিম লীগের একজন সক্রিয় কর্মী। রাজাকার বাহিনীর সঙ্গে মিলে তিনি মির্জাগঞ্জ থানার কাকড়াবুনিয়া, দেউলী, সুবিদখালী, কলাগাছিয়াসহ বিভিন্ন গ্রামে যুদ্ধাপরাধ ঘটান বলে এ মামলার বিচারে উঠে আসে।
রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “অরক্ষিত হিন্দু নারীদের গণধর্ষণের কী উদ্দেশ্য হতে পারে? এর উদ্দেশ্য নারীর মহামূল্যবান সম্পদ ছিনিয়ে নেওয়া বা তাকে হত্যা করা নয়। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে আর্থ-সামাজিক বিন্যাস ও সাংস্কৃতিক বিন্যাসকে পঙ্গু করে দেওয়া।”
আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের আনা পাঁচটি অভিযোগের মধ্যে তৃতীয় থেকে পঞ্চম অভিযোগ আদালতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় ও পঞ্চম অভিযোগে হত্যা ও ধর্ষণের ঘটনায় ফাঁসিতে ঝুলিয়ে ফোরকানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে।
অভিযোগ ৩: একাত্তরের ১৭ অগাস্ট ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদবাহক কাকড়াবুনিয়া গ্রামে যায় এবং রামকৃষ্ণ সাহার বাড়িতে হামলা চালায়। তারা রাম কৃষ্ণ সাহার অবিবাহিত মেয়েকে তুলে নিয়ে তাকে জুগিবাড়ি এলাকায় নিয়ে দলবেঁধে ধর্ষণ করে। ঘটনার পর সেই নারী সংজ্ঞা হারান। ওই অবস্থায় তাকে তার বাড়ির কাছে ফেলে রেখে যাওয়া হয়। পরদিন ১৮ অগাস্ট রাতে তার মৃত্যু হয়।
অভিযোগ ৫: ২২ ও ২৫ অগাস্টের মাঝামাঝি সময়ে একদিন ভোরে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের নিয়ে মির্জাগঞ্জ থানাধীন কাকড়াবুনিয়া বাজারে হামলা চালায়। এ সময় তাদের গুলিতে সনদ কুমার হালদার নিহত হন। পরে তারা হাতেম আলী ও ইমিমুদ্দিন নামে আরও দুজনকে হত্যা করে এবং হাতেম আলীর মেয়েকে তুলে নিয়ে যায়। হাতেম আলীর মেয়েকে পটুয়াখালী সার্কিট হাউজে আটকে রেখে দলবেঁধে ধর্ষণ করে ফোরকান ও তার সঙ্গীরা। পরে তারা ওই নারীকে তার বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়।
চতুর্থ অভিযোগে ধর্ষণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার দায়ে যুদ্ধাপরাধী ফোরকান মল্লিককে দেওয়া হয়েছে আমৃত্যু কারাদণ্ড।
অভিযোগ ৪: একাত্তরের ২০ অগাস্ট ফোরকান ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা মির্জাগঞ্জ উপজেলার সুবিদখালী বাজারে ললিত কর্মকারের বাড়িতে হামলা চালিয়ে তার অবিবাহিত মেয়ে ও পুত্রবধূকে তুলে নিয়ে যায়। তাদের স্থানীয় হাসপাতালে বসানো রাজাকার ক্যাম্পে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়। এ ঘটনার পর ওই পরিবারের সদস্যরা ২১ অগাস্ট এলাকা ছাড়েন এবং ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন।
এছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের ‘সোর্স’ হাফিজ খলিফা, আব্দুল কাদের জমাদার, দেবেন্দ্রনাথ সরকার, দেবের স্ত্রী বিভা রানী সরকারকে হত্যা সম্পর্কিত প্রথম অভিযোগ এবং রমনী কুণ্ডু, শ্যাম সুন্দর কুণ্ডু, সুনীল কুণ্ডু নামে তিন ভাইকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার ঘটনায় দ্বিতীয় অভিযোগে ফোরকানের সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে না পারায় তাকে খালাস দিয়েছে আদালত।