বার্তা৭১ ডটকমঃ প্রতি বছর পর্যটকের ঢল নামে কঙবাজারে। দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভাবে মুখরিত হয়ে ওঠে সমুদ্রপাড় ছাড়া আশ-পাশের পর্যটন স্পটসমূহ। আর পর্যটকদের বরণ করতে প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে জেলা প্রশাসন ও পর্যটন ব্যবসায়ীরা। ভ্রমণে আসা লোকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে জেলা পুলিশ। এতেকরে এবার পাঁচ লক্ষাধিক পর্যটক আসবে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান।
পাশাপাশি সমুদ্র সৈকত, হিমছড়ি, ইনানী, দরিয়া নগরসহ ১৫টি পর্যটন স্পটে ফোর্স মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্যুরিষ্ট পুলিশ। পর্যটন এলাকাসমূহে ২ জন ইন্সপেক্টর ও ৭ জন সাব ইন্সপেক্টরের অধীনে ১৩৮ সদস্যের ফোর্স মোতায়েন থাকছে বলে জানান কঙবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার জহিরুল ইসলাম।
তিনি বলেন, পর্যটকদের নিরাপত্তায় আমরা সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছি। জেলা পুলিশের সাথে সমন্বয় করে সম্ভাব্য সকল স্পটে পুলিশ মোতায়েন থাকবে। পর্যটন স্পটগুলোতে ট্রাফিক পুলিশের সাথে ২ জন ট্যুরিষ্ট পুলিশ থাকবে। সাথে ভ্রাম্যমান টিমও মাঠে থাকবে বলে জানান ট্যুরিস্ট পুলিশের এ কর্মকর্তা।
কক্সবাজারে রয়েছে ছোট-বড় ৩ শতাধিক হোটেল-মোটেল ও দুই শতাধিক গেস্ট হাউস ও কটেজ। প্রতিদিন দেড় লক্ষাধিক মানুষের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। পর্যটকদের নজর কাড়তে সংস্কার, চুনকামসহ সাজগোছ করা হয়েছে হোটেল-মোটেলসহ পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
দেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সড়ক ও আকাশ পথ দু’টোও আগের চেয়ে অনেক উন্নত। সব মিলিয়ে কক্সবাজারের পরিস্থিতি খুবই অনকূল। ইতোমধ্যে সাগরপাড়ের হোটেলগুলোর অধিকাংশ কক্ষ আগাম বুকিং হয়ে গেছে। আবহাওয়া ভাল থাকলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জলপথেও চলবে পর্যটকবাহী জাহাজ। কেবল স্থানীয় পর্যটক নয়; দেশী-বিদেশী পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠেবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পর্যটন নগরী কঙবাজার সমুদ্র সৈকত। এমনটি মনে করছেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।
হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাসেম সিকদার জানিয়েছেন, এবার শঙ্কামুক্ত পরিবেশে পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা পর্যটক বরণে প্রস্তুতি নিয়েছেন। বিগত সময়ে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ভয় তাড়িত করলেও এবার সেই পরিবেশ নেই। নির্বিঘ্নেই কক্সবাজার ভ্রমন করতে পারবেন পর্যটকরা। ভ্রমন পিপাসু লোকজন দীর্ঘদিন কক্সবাজার আসতে পারেনি। তাই এবার ঈদের পরে রেকর্ড পরিমান পর্যটক আসবে।
তিনি আরো বলেন, কক্সবাজার হোটেল-মোটেল জোনে পর্যটকদের চাহিদামত সবকিছুই থাকবে। খাবার হোটেলগুলোকে পুরোদমে সচল করা হয়েছে। বন্ধ হয়ে যাওয়া রেস্টুরেন্টও এখন চালু হচ্ছে। দীর্ঘদিন ছুটিতে থাকা কর্মচারীদের অধিকাংশ ইতোমধ্যে কাজে যোগদান করেছেন।
সাগরপাড়ের তারকা হোটেল সী-গালের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল ইসলাম ছিদ্দিকী রুমি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের হোটেলের প্রায় ৮০ ভাগ কক্ষ আগাম বুকিং হয়েছে। পর্যটকদের জন্য সকল সুবিধা আমরা নিশ্চিত করেছি।
ট্যুর অপারেটর এসোসিয়েশন অব কক্সবাজার (টুয়াক) এর যুগ্ম-আহবায়ক এম.এম সাদেক লাবু জানান, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে বিগত কয়েক বছর দেশের পর্যটন ব্যবসায় চরম মন্দাভাব বিরাজ করলেও ঈদকে সামনে রেখে এ খাতে সম্ভাবনা দেখছেন পর্যটন শিল্প সংশ্লিষ্টরা। আমাদের পক্ষ থেকে পর্যটকদের আকৃষ্ট করার অনেক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। পর্যটন স্পটসমূহে যথাযথ নিরাপত্ত্বা নিশ্চিত করতে প্রশসনের কাছে সহায়তা চাওয়া হয়েছে। প্রশাসনও সব ধরণের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কক্সবাজারস্থ কেয়ারি সিন্দবাদ ট্যুরস এন্ড ট্রাভেল্স এর সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক হুমায়ূন কবীর জানান, প্রতিবছর অক্টোবর থেকে মার্চ পর্যন্ত ৬ মাস পর্যটকের ভরমৌসুম এবং বছরের বাকী সময় মন্দা মৌসুম ধরা হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে শীতকালীন ভরমৌসুমে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পর্যটক আসেনি। এবার কয়েক লাখ পর্যটক আসবেন বলে আশা করা হচ্ছে।তিনি বলেন, আবহাওয়া ভাল থাকলে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন জলপথেও চলবে পর্যটকবাহী জাহাজ। তবে অফ সিজনের কারণে এ সময়ে বিদেশি পর্যটক তেমন আসছেন না বলে জানান তিনি।
কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা না থাকায় অন্যান্য বারের তুলনায় এবার পর্যটকরা অনেকটাই নিরাপদে ঈদ আনন্দ ভোগ করবে। পর্যটক নিরাপত্তার দিকে লক্ষ্য রেখে প্রশাসন প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা পুলিশ ও ট্যুরিস্ট পুলিশও ব্যাপক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।