বার্তা৭১ ডটকমঃ কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে দেশের বৃহত্তম ঈদ জামাতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ও দেশের জনগণের মঙ্গলসহ সমগ্র মুসলিম উম্মাহর শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনায় মোনাজাত করেছেন প্রায় তিন লাখ মানুষ।
একইসঙ্গে ‘দেশদরদী রাজনীতিকদের’ জন্য আল্লাহর রহমত এবং যে সকল রাজনীতিক মানুষকে পুড়িয়ে মারাসহ বিভিন্নভাবে দেশের মানুষকে কষ্ট দেয় তাদের জন্য আল্লাহর হেদায়েত কামনা করেন।
ঈদগাহ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক জিএসএম জাফরউল্লাহ জানান, শনিবার সকাল ১০টায় মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদের পরিচালনায় ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
নামাজ শেষে মোনাজাতে অংশ নেন সরকারি কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধি, পেশাজীবী নেতৃবৃন্দসহ সকল স্তরের সাধারণ মানুষ।
জামাত শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকেই জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে নামাজিদের ঢল নামে। এক পর্যায়ে আশপাশের সব সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তিন দফায় শটগানের গুলি ছুড়ে ঈদের জামাত শুরু হয়। প্রায় সাত একর আয়তনের এই ময়দানে ঠাঁই না পেয়ে অনেকেই মাঠের বাইরের বিস্তৃত এলাকায় ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদ জামাতে অংশ নিতে দর-দূরান্ত থেকে আসা জনতার সুবিধার জন্য প্রতিবারের মতো এবারো ‘শোলাকিয়া ষ্পেশাল’ নামে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়।
শোলাকিয়ার ১৮৭তম ঈদ জামাতে আগতদের নিরাপত্তার স্বার্থে এবারও স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ঈদগাহ মাঠ ও আশপাশের এলাকায় সহস্রাধিক পুলিশসহ র্যাব, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন ও অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেন।
মাঠের ২৮টি প্রবেশপথে মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে আগতদের তল্লাশী করা হয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ওয়াচ টাওয়ার ও ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার সাহায্যে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেন। এ ছাড়া বিপুল সংখ্যক স্কাউট সদস্য মাঠে শৃঙ্খলা রক্ষায় দায়িত্ব পালন করেন। ঈশা খাঁর ষষ্ঠ বংশধর দেওয়ান হয়বত খান বাহাদুর কিশোরগঞ্জে জমিদারি প্রতিষ্ঠার পর ১৮২৮ সালে কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে এই ঈদগাহ প্রতিষ্ঠা করেন।
স্থানীয় গবেষকদের ভাষ্য অনুযায়ী, ১৮২৮ সালে প্রথম জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন বলে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখি মাঠ’। পরে উচ্চারণের বিবর্তনে ‘শোলাকিয়া’ নামেই তা পরিচিত হয়।
বিশাল এই মাঠে কাতার রয়েছে ২৬৫টি। প্রতি কাতারে পাঁচ শতাধিক মুসল্লি নামাজে অংশ নিতে পারেন। তবে মাঠের বাইরে আশপাশের এলাকাজুড়ে জামাতে অংশ নেওয়া মুসল্লিদের মিলিয়ে এই সংখ্যা আড়াই থেকে তিন লাখ ছাড়িয়ে যায়।
শোলাকিয়া মাঠ জামে মসজিদের ইমাম লুৎফর রহমান গোলাপ বলেন, লাখ লাখ মুসল্লির অংশগ্রহণে বিশাল জামাতে দোয়া কবুল হয়, এ বিশ্বাসের কারণেই মুসল্লিরা দূর-দূরান্ত থেকে এই মাঠে ছুটে আসেন।