ঢাকা : হরতালে সচিবালয়ে হাতবোমা বিস্ফোরণ ও গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ের মামলায় বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আগাম জামিন নিতে হাইকোর্টে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ ১৮ দলীয় জোটের কমপক্ষে ১০ জন নেতা তাদের আইনজীবীদের নিয়ে আদালতে হাজির হন।
সূত্র জানায়, আজ রাতে ১৮ দলীয় জোটের নেতারা আদালতে অবস্থান করে আগামীকাল সোমবার সশরীরে জামিন আবেদন করবেন। ইতিপূর্বে জামিন শুনানিতে আদালত বিব্রতবোধ করায় সশরীরে জামিন নেওয়ার জন্যই ছুটির দিনে তারা আদালতে অবস্থান নেন।
আইনজীবী সূত্রে জানা গেছে, আদালতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার, যুগ্ম মহাসচিব আমানউল্লাহ আমান, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন নবী খান সোহেল, সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সফু, ছাত্রদল সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুসহ কমপক্ষে ১০ জন নেতা আদালত ভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের বিভিন্ন কক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
রোববার বৌদ্ধ পূর্ণিমার ছুটি থাকায় আদালতসহ সরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। আর এ সুযোগে বিএনপি নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে কৌশলে জামিনের জন্য আদালতে অবস্থান নিয়েছেন বলে তাদের আইনজীবী ও দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
এদিকে, বিএনপি নেতাদের আদালতে অবস্থান নেওয়ার খবরে হাইকোর্টে সব ফটকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সবক’টি ফটক সর্বসাধারণের যাত্রায়াতের জন্য বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের আদালতে অবস্থান নেয়া প্রসঙ্গে পুলিশের রমনা জোনের উপ-কমিশনার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘এটা বিএনপি নেতাদের একটা কূটকৌশল। ছুটির দিনে এভাবে উনারা আদালতে প্রবেশ করবে, তা আমাদের কাছে অপ্রত্যাশিত। এই ঘটনায় আমরা সত্যিই বিব্রত।’
তিনি বলেন, ‘বিকেল ৩টার দিকে বোরখা পরা কিছু লোক আদালতের ভিতরে অবস্থিত মাজারে অবস্থান নেয়। মহিলা ভেবে দায়িত্বরত পুলিশ তাদের চার্জ করেনি। কিন্তু পরে আমরা জানতে পারি বিএনপি নেতারা গ্রেপ্তার এড়াতে বোরখা পরে আদালতের ভিতরে গেছেন।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম বলেন, ‘আদালত অবমাননা হবে, যার কারণে আদালতের ভিতরে অবস্থানরত বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব নয়। তবে তারা বের হলে তাদের গ্রেপ্তার করা হবে।’
এদিকে, আদালতে আসামিপক্ষে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমিরউদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল অবেদীনসহ বিএনপির জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা বিএনপি নেতাদের সাথে অবস্থান করছেন।
এরআগে গত ২ মে এসব বিএনপি নেতাদের আগাম জামিন আবেদন শুনানি না করে ফেরত দিয়েছিল হাইকোর্টের দুটি বেঞ্চ। এর মধ্যে একটি বেঞ্চের বিচারকরা শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন।
উল্লেখ্য, গত ২৯ এপ্রিল হরতালে সচিবালয়ে হাতবোমা বিস্ফোরণ এবং তেজগাঁও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সামনে গাড়িতে আগুন ও ভাঙচুরের মামলায় রাজধানীর শাহবাগ ও তেজগাঁও থানায় দুটি মামলা দায়ের করে পুলিশ।
এতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের ৪০ জন নেতাকে আসামি করা হয়। ইতিমধ্যে এই মামলায় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির আহমেদ রিজভীকে গ্রেপ্তারের পর কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর আরেক যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন আত্মসমর্পণের পর সাত কার্য দিবসের জামিনে রয়েছেন।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ এপ্রিল মধ্যরাতে বনানী থেকে গাড়ির চালকসহ নিখোঁজ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সিলেট বিএনপির সভাপতি এম ইলিয়াস আলী। এ ঘটনার প্রতিবাদে দুদফায় পাঁচ দিনের হরতাল কর্মসূচি পালনকালে গত রোববার এসব হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।