বার্তা৭১ ডটকমঃ মহিলামহল-আলাদা এক দুনিয়া৷ এক পৃথিবীর ভিতরেই, সে জগতের আছে আলাদা ভাষা, আলাদা নিয়ম৷ স্বতন্ত্র আবেগ, অনুভবের সে জগত চিরকালই পুরুষের নাগালের বাইরে৷ স্বভাব কৌতূহলে পুরুষ কতবার সে গোপন দুনিয়ায় উঁকি দিয়েছে৷ জানতে চেয়েছে মেয়েদের
তারপর বল, হাবির সঙ্গে কেমন চলছে? রোজ সেক্স করিস নাকি?’-ক্যাপুচিনোতে চুমুক দিয়ে প্রশ্ন করল তানিয়া৷ মাছি ওড়ানোর ভঙ্গিতে সঞ্চারি সে প্রশ্ন উড়িয়ে দিল৷ বলল, ‘ধুর প্রথম প্রথম বেশ লাগত৷ আমারই একটু বেশি ইচ্ছে করত৷ মুখে অন্য কথা বলতাম৷ ছেলেদের তো জানিসই৷’’ বলে মুচকি হাসিতে ভরিয়ে দিল ক্যাফে৷ ফুট কেটে নীলাদ্রিতা বলল, ‘‘ছেলেদের কথা ও জানবে কী করে৷
ও কি আর তোর মতো খেলুড়ে ছিল নাকি৷ সত্যি মাইরি, কলেজে ছেলেগুলোকে কী খেলানোই না খেলাতিস৷ অথচ মুখে এমন ভাব দেখাতিস যেন, ভাজা মাছ উলটে খেতে জানিস না৷ সঞ্চারি বলল, ‘ছেলেদের অত ভাও দিতে নেই গুরু৷ সুতো ছাড়ো, কিন্তু লাটাই হাতে৷’’ স্নেহা ফ্যাচর ফ্যাচর করে হেসে বলে উঠল, ‘ বুঝলাম, লাটাই আজকাল হাত থেকে ছাড়ছিসই না৷’
চার সখীর খিলখিলিয়ে হাসি৷ ভরা বর্ষায় যেন রোদ হাসা ছুটি খেলে গেল শহরের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ক্যাফে কফি ডে-তে৷ তানিয়া, স্নেহা, সঞ্চারি আর নীলাদ্রিতা৷ কলেজ লাইফে এই চারমূর্তিকে কখনও আলাদা দেখা যায়নি৷ জুনিয়র থেকে সিনিয়র সকলেই জানত, এদের একে অপরের জন্য ‘জান ভি হাজির হ্যায়৷’ তিন বছরের কোর্সে বন্ধুত্বের আয়ু কত লম্বা হবে, তা নিয়ে নানা মহলে নানা মত ঘোরা ফেরা করতেই থাকত৷ তবে কলেজের হ্যাপেনিং চার সুন্দরী যে দিনের পর দিন আলোচনার কেন্দ্রে থেকেছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই৷ সেসব দিন শেষ হয়ে পাঁচবছর কেটে গিয়েছে৷ সেই সঙ্গে অবশ্য বন্ধুত্বটাও অনার্সের পর মাস্টার্স করে এখন ওয়েল সেটেল্ড৷ রোজ দেখা-সাক্ষাৎ সম্ভব না হলেও হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে আড্ডাটা বেশ জমজমাট
বিয়ে করে বেঙ্গালুরুতে কনটেন্ট রাইটারের চাকরি করছে স্নেহা৷ তানিয়া শহরের একটি অ্যাড এজেন্টিতে কাজ করছে৷ নীলাদ্রিতা সরকারী স্কুলের শিক্ষিকা আর সঞ্চারী চুটিয়ে সংসার করছে৷ গ্রুপ চ্যাটেই ঠিক হয়ে গেল৷ সকলেই যখন শহরে তখন একবার দেখা করা যেতেই পারে৷ কথামত আবির্ভাব ঘটল চার বন্ধুর৷ সঞ্চারি আর স্নেহার বিয়ের পর চারজনের এই প্রথম দেখা৷
সুতরাং কথাবার্তা লাগামছাড়া৷ একেবারে আনসেন্সরড৷ আরে বাড়িতে কেউ সুশীলা গৃহবধূ, অফিসে কেউ গুরুগম্ভীর কর্মী, তাই বলে আড্ডাতেও ওসব চলে নাকি! তাও তো সম্ভ্রান্ত ক্যাফে বলে ওই শব্দ বেশি বেরচ্ছে না মুখ থেকে৷ নচেত মিউজিক সিস্টেমে এতক্ষণে গান বন্ধ হয়ে বিপ বিপ আওয়াজ শুরু হয়ে যেত৷
সে কথা মনে পড়তেই নীলাদ্রিতা বলল, ‘এই সেই ক্যাবলাটাকে মনে আছে? কী যেন দেবোপম না দেবোত্তম? জুনিয়র ছিল…’
সঞ্চারি বলল, ‘ আরে হ্যাঁ, হ্যাঁ কাত্তিক ঠাকুরটা তো৷ মালটা তোর মুখে একদিন খিস্তি শুনে লজ্জায় পুরো বিলিতি বেগুন হয়ে গিয়েছিল৷নীলাদ্রিতা বলল, হ্যাঁ হ্যাঁ ওই কথাই বলছিলাম৷ স্নেহা বলল, আচ্ছা ছেলেগুলো কেন ভাবে বলত যে, মেয়েরা গালি দেয় না? তানিয়া বলল, কিচ্ছু না, সব হয় নয় গা৷
সঞ্চারি মুখে আঙুল ছুঁইয়ে বলল, আস্তে রে৷ তারপর নীলাদ্রিতার দিকে ঘুরে বলল, ‘তুই বল তোর লাভ-লাইফের কথা৷’ নীলাদ্রিতা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল, ‘দূর৷ আর ভালো লাগে না৷ সেই একই ঝামেলা৷ এই জানিস তো, অফিসে একটা ছেলেকে বেশ লাগে৷ এই রিসেন্টলি একসঙ্গে একটা মুভিও দেখে এলাম৷ এসব তো আর হাবি আর বয় ফ্রেন্ডের সামনে বলা যাবে না৷ উল্টো সন্দেহ করবে৷ এসব তো পার্ট অফ লাইফ৷ কী বলিস? বয় ফ্রেন্ড তো আছে৷আর একজনকে কী জাস্ট ভালো লাগতে পারে না?’ স্নেহা বলল, ‘হ্যাঁ রে৷ কিছু কিছু জিনিস যেমন ছেলেদের থেকে আমরা লুকিয়ে রাখি, এটাও তার মধ্যে একটা৷ এই যেমন আমাদের ভ্যানিটি ব্যাগটা খুলে দেখার অনুমতি আমাদের হাবিদেরও নেই৷’ তানিয়া বলে উঠল, ‘ব্যাগ খোলার কথায় মনে পড়ল৷ বয়ফ্রেন্ড সঙ্গে থাকলে শপিং করতে গিয়ে তো পার্স খুলতেই ইচ্ছে করে না৷ মুখ ফুটে সবসময় বলতে পারি, ওগো বিলটা তুমিই দিয়ে দাও৷ তবে মনের কথাটা পড়ে ফেলতে পারলে বেশ লাগে৷ ওই কয়েকটা ছেলে একটু বোকা বোকা হয় না? মেয়েদের পিছনে অকারণে টাকা খরচ করে৷ ওদের সঙ্গে রেস্তরাঁয় গিয়ে মজা আছে৷ নো খরচা, ডু ফুর্তি৷’ সংসারী স্নেহা বলল, ‘তা যা বলেছিস৷ চল, একবার চারজন একসঙ্গে কোথাও ঘুরে আসি৷ নো হাসব্যান্ড, নো বয়ফ্রেন্ড৷ বিন্দাস বুজ করা যাবে৷ একটা জিনিস খেয়াল করেছিস? আমরা অতিরিক্ত ড্রিঙ্ক করতে বা বিরাট কোহলিকে দেখে একটু বেশিই উত্তেজনা দেখাতে ভালোবাসি৷ কিন্তু ছেলেরা সেটা নিয়ে বললেই গায়ে লাগে৷’ ‘হট প্যান্ট পরে পারফেক্ট মেক-আপ নিয়ে রাস্তা দিয়ে যাব, আর পাশ থেকে ভালো কমপ্লিমেন্ট শুনতে পাব না, ভালো লাগে বল? সবচেয়ে মাথা গরম হয় কেউ বয়স জিজ্ঞেস করলে৷ বিয়ে হয়ে যাওয়া মানেই কি বয়স হয়ে গিয়েছে অনেক? আশ্চর্য!!’ বিরক্তি প্রকাশ সঞ্চারির৷
গল্পে মশগুল মহিলা ব্রিগেড৷কথায় বলে মেয়েদের চেনা এত সহজ নাকি! মোটেও না৷ আরও কঠিন মহিলামহলের এই গোপন কথা আঁচ করা৷ পুরুষ ভাবে, মেয়েদের তারা বেশ বোঝে৷ মেয়েদের কথা জানে৷ আসলে ছাই জানে–