বার্তা৭১ ডটকমঃ টেস্ট ক্রিকেটে আরো একটি উজ্বল ইনিংস কাটালো বাংলাদেশ। বিশ্ব র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দলের বিপক্ষে ৭৮ রানের লিড নিয়ে শেষ হয়েছে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস। প্রোটিয়াদের ২৪৮ পেরিয়ে যেতে আগের দিন ভূমিকা রেখেছে তামিম ইকবাল ও মাহমুদ উল্লাহর ৮৯ রানের জুটি। আজ চট্টগ্রামে তৃতীয় দিনে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ার পরও সাকিব আল হাসান ও লিটন দাসের ষষ্ঠ উইকেটের ৮২ রানের জুটি রাখলো বড় ভূমিকা। সেই সাথে টেল এন্ডারদের দেওয়া কিছু রানও যোগ হলো। তাতে সব বিপদ কাটিয়ে টাইগাররা করেছে ৩২৬ রান।
শেষ বিকালে আলোর স্বল্পতা আর বৃষ্টিতে তৃতীয় দিনের খেলা পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। প্রথম দুই দিনের মতো তৃতীয় দিনেও এগিয়ে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে এখনও ১৭ রানের লিড টাইগারদের। দ্বিতীয় ইনিংসে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬১ রান করেছে প্রোটিয়ারা। ডিন এলগার ২৮ ও ফন জিল ৩৩ রানে অপরাজিত।
সাকিব আউট। ব্যাটসম্যান আর নেই। কিন্তু একপ্রান্ত আগলে রেখেছিলেন লিটন। এটা তার দ্বিতীয় টেস্ট। প্রথম টেস্টে ভারতের বিপক্ষে একমাত্র ইনিংসে করেছিলেন ৪৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রতিকূল পরিবেশেই ক্যারিয়ারের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিটা তুলে নিয়েছেন লিটন। তবে ১০২ বলে ৭ বাউন্ডারিতে সাজানো ইনিংসটা ওই ৫০ রানেই শেষ হয়েছে। হার্মারের শিকার হয়েছেন তিনি।
সাকিব খুব দায়িত্ব নিয়ে খেলছিলেন। জুটি গড়ার চেষ্টা চলছিলো। ১৯৫ রানে ৫ উইকেট হারানোর পরও বাংলাদেশ এগুচ্ছিল ভালোভাবে। লিটনকে সাকিব ভালোভাবেই গাইড করছিলেন। লাঞ্চের আগেই দক্ষিণ আফ্রিকার ২৪৮ পেরিয়ে লিড নিয়ে নেয় বাংলাদেশ। যাদের বিপক্ষে আগের ৮ ম্যাচের ৭টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হারতে হয়েছে তাদের বিপক্ষে এটা তো অন্যরকম অর্জনই। লিটনের সাথে সাকিবের জুটিটা আরো বড় হবে। ৫ উইকেটে ২৫২ রান নিয়ে স্বস্তিতেই মধ্যাহ্ন ভোজনটা করতে পেরেছে টাইগাররা। কিন্তু চা বিরতির পর কি হলো! সাকিব বাউন্ডারি মারার দিকে মন দিলেন। হার্মারকে একবার উড়িয়ে মারতে গিয়ে বেঁচে গেলেন একটুর জন্য। পরের বলে একই স্টাইলে খেলতে গিয়ে ডুমিনির হাতে ধরা পড়লেন। ৪৭ রানে শেষ হলো ১১৪ বলে ৪ বাউন্ডারিতে খেলা সাকিবের ইনিংস। উইকেট এভাবে ছুড়ে দিয়ে আসায় অপমৃত্যু হলো লিটন ও সাকিবের জুটির। যদিও ষষ্ঠ উইকেটে ৮২ রানের অমূল্য জুটি গড়েছেন। দলের রান তখন ২৭৭।
সাকিবের বিদায়ের পর এলেন মোহাম্মদ শহীদ। লিটন ছাড়া আর কোনো ব্যাটসম্যান নেই। কিন্তু ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটে একটি সেঞ্চুরির মালিক শহীদ এসেই আক্রমণে গেলেন। হার্মারের এক ওভার থেকে তুলে নিলেন ১৮ রান। তিনটি বাউন্ডারি মারলেন। সেই সাথে বোলারের মাথার ওপর দিয়ে দর্শনীয় এক ছক্কা। কিন্তু তাকে বেশিদূর এগুতো দেননি ফিল্যান্ডার। ১৯ বলে ২৫ রান করে ফিল্যান্ডারের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন। দল তখন তিনশো রানের কোঠা পার হয়ে গেছে।
এর আগে তৃতীয় দিনের খেলা শুরু করার সময়টাতে ডেইল স্টেইনকে এক ওভারে পরপর দুটি বাউন্ডারি মেরে মুশফিকুর রহিম বুঝিয়ে দিলেন, ভয়ের কিছু নেই। গতকালের মতো পেসারদের বিপক্ষে ভীতিহীন ক্রিকেট খেলারই চেষ্টা চলছিল। ৪ উইকেটে ১৭৯ রান নিয়ে চট্টগ্রামে এই দিনের শুরু টাইগারদের। মুশফিক ছিলেন ১৬ তে, সাকিব ১ এ। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস থেকে ৬৯ রানে পিছিয়ে ছিল টাইগাররা।
এরপর অবশেষে উইকেটের দেখা পেলেন ডেইল স্টেইন। সেই সাথে বড় একটা সর্বনাশও করলেন টাইগার দলের। বিপজ্জনক হয়ে ওঠা মুশফিকুর রহিমকে ২৮ রানে বিদায় করে দিয়েছেন তিনি। আম্পায়ারের কাছে আপিল ছিল। তিনি আউট দেননি। প্রোটিয়ারা নেয় রিভিউ। তাতে আউট মুশফিক।
প্রথম ইনিংসে বিশ্ব র্যাংকিংয়ের এক নম্বর দলকে ২৪৮ রানে গুঁড়িয়ে দেয় বাংলাদেশ। এরপর বৃষ্টির কারণে একটু আগেভাগে শেষ হয় দ্বিতীয় দিনের খেলা। তখনো টাইগাররা প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ৬৯ রানে পিছিয়ে ছিল স্বাগতিকরা। ইনিংস শেষে লিড। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।