হরতালে বিস্ফোরণ ও গাড়ি পোড়ানোর মামলায় মির্জা ফখরুলসহ ১৮ দলীয় জোটের নেতাদের আগাম জামিন আবেদনের ওপর বিভক্ত আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। সোমবার দুপুর ২টার দিকে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের হাইকোর্ট বেঞ্চে এ শুনানি শুরু হয়।
মির্জা ফখরুল ছাড়া অন্য আসামিরা হলেন: বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, স্থায়ী কমিটির আসম হান্নান শাহ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেন। এছাড়া রয়েছেন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অলি আহমেদ, জাগপা সভাপতি শফিউল আলম প্রধান।
সোমবার বিএনপি নেতাদের আইনজীবী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ হাইকোর্টে তাদের জামিনের আবেদন করলে তার বক্তব্য শোনার পর বিএনপি নেতাদের আদালতে আসার ক্ষেত্রে বাধা না দেওয়ার আদেশ দেয় আদালত। পরে ব্যারিস্টার মওদুদ সাংবাদিকদের বলেন, শুনানির আগ পর্যন্ত জামিন নিতে আসা নেতাকর্মীকদের হয়রানি না করতে হাইকোর্ট নির্দেশ দিয়েছে।
এর আগে বুদ্ধ পূর্ণিমার বন্ধের দিন রোববার বিকেলে পুলিশের চোখ এড়িয়ে প্রায় ৪০ জনের মতো নেতাকর্মী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তাদের রাত কাটে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনে। তাদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এমকে আনোয়ার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম-মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন এবং যুবদল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন আলালও ছিলেন।
বিএনপি নেতাদের অবস্থানকে কেন্দ্র করে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণের নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। এর আগে ২ মে হাইকোর্টে মির্জা ফখরুলসহ বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা আগাম জামিনের আবেদন করেন। তবে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চের একজন বিচারপতি শুনানিতে বিব্রতবোধ করেন। এরপর অন্য বেঞ্চে গেলে ‘শোনার এখতিয়ার নেই’ বলে সেখান থেকেও তাদের আইনজীবীদের ফিরিয়ে দেয়া হয়। বিএনপি নেতাদের আইনজীবীদের ওই আবেদন নিয়মিত কার্যতালিকায় আনার পরামর্শ দেওয়া হয়।
প্রসঙ্গত, গত ২৯ এপ্রিল হরতালে সচিবালয়ে হাতবোমা বিস্ফোরণ ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অদূরে গাড়ি পোড়ানোর মামলায় মির্জা ফখরুলসহ ১৮ দলীয় জোটের ৭২ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে ২টি মামলা করে পুলিশ। এরপর বিএনপির যুগ্মমহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে গ্রেপ্তার এবং কয়েকজনের বাড়িতে পুলিশের অভিযান হলে অন্য নেতারা আত্মগোপন করেন।
বিএনপি অভিযোগ করে আসছিলেন, মামলার পর হাই কোর্টে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতির কারণে ফখরুলসহ নেতারা জামিনের আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে যেতে পারছিলেন না।
গত কয়েকদিনে সুপ্রিম কোর্টে কড়া নিরাপত্তা থাকলেও হিলারি ক্লিনটন ও প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মতো ভিভিআইপিদের ঢাকা সফরের সময় তাতে ঢিলেঢালাভাব দেখা যাওয়ায় বিএনপি নেতারা রোববার সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে অবস্থান নেন।
এরপর সোমবার সকালে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও মো. নজরুল ইসলাম তালুকদারের বেঞ্চে উপস্থিত হয়ে বিএনপি নেতাদের পক্ষে জামিনের আবেদন জমা দিলে আদালত জানতে চান, তারা সিনিয়র বেঞ্চে (জামিনের এখতিয়ার সম্পন্ন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিদের বেঞ্চে) কেন যাননি।
মওদুদ বলেন, সিনিয়র বেঞ্চে একজন বিচারক বিব্রত বোধ করেছেন। অপর বেঞ্চের এক বিচারপতি ছুটিতে আছেন।
আবেদনকারী কতজন- আদালত তা জানতে চাইলে মওদুদ বলেন, এক মামলায় আসামি ৪৪ জন, অন্য মামলায় ২৮জন। তারা সবাই জামিন চান। কেউ কেউ এসেছেন। কেউ কেউ আসতে পারছেন না। তারা বিচার পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আদালত অনুমতি দিলে তারা আসবেন।
এ সময় আদালত বলে, প্রত্যেক নাগরিকের আদালতে এসে জামিন চাওয়ার অধিকার রয়েছে। ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. খুরশীদুল আলমকে ডেকে বিএনপি নেতাদের আদালতে আসার ব্যবস্থা করতেও আদেশ দেয় আদালত। পরে ২টায় শুনানি সময় নির্ধারণ করা হয়।