এবার রেকর্ডসংখ্যক প্রায় ৪ লাখ শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে ভর্তি হতে পারবে না। সোমবার প্রকাশিত ফলে আটটি সাধারণ বোর্ডে পাস করেছে ৯ লাখ ৪ হাজার ১৪৪ শিক্ষার্থী। ব্যানবেসের তথ্য অনুযায়ী সারাদেশে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তিযোগ্য কলেজ আছে ২৭৯৪টি। আর এসব কলেজে মোট আসন চার লাখ ৬৩ হাজারের মতো। এ হিসাবে ৪ লাখ ৪১ হাজার ১৪৪ জন শিক্ষার্থীই কলেজে ভর্তি হতে পারবে না। তবে ভর্তি সঙ্কট কমাতে কিছু কলেজে দ্বিতীয় শিফট চালু করা হয়েছে। তাতেও সঙ্কট কমেনি। এবছর পাসের হার গত বছরের চেয়ে বাড়ায় সঙ্কট আরও বাড়বে। সঙ্কট কমাতে সরকারকে নতুন করে চিন্তা করতে হবে। এবার সব বোর্ড মিলিয়ে গড়ে ৮৬ দশমিক ৩৭ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে, যাদের মধ্যে ৮২ হাজার ২১২ জন অর্জন করেছে পূর্ণাঙ্গ জিপিএ। গত বছর মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় ৮২ দশমিক ৩১ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। সেই হিসাবে এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ০৬ শতাংশ বেশি। সাধারণ বোর্ড থেকে পূর্ণ জিপিএ অর্জন করেছে ৬৫ হাজার ২৫২ জন। গত বছর ৬২ হাজার ৭৮৮ জন জিপিএ-৫ পেয়েছিল।
এবার মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে ২ লাখ ৪১ হাজার ৫৭২ জন পাস করেছে; পাসের হার ৮৮ দশমিক ৪৭ শতাংশ। গত বছর এ বোর্ডে ৮৩ দশমিক ২৩ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। এছাড়া, ভাল ফল করেও এবার প্রত্যাশিত কলেজে ভর্তি হতে পারবে না অসংখ্য শিক্ষার্থী। কলেজগুলোতে আসনের তুলনায় বেশি শিক্ষার্থী পাস করায় এ অবস্থার মধ্যে পড়তে হবে শিক্ষার্থীদের। ২০০৯ সালে ৬৭ দশমিক ৪১ শিক্ষার্থী পাস করার পরও বাড়তি শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে দ্বিতীয় শিফট চালু করে সরকার। এতেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় যাদের বয়স বেশি তাদের আগে ভর্তির সুযোগ দেয় সরকার। এনিয়ে নানা তেলেসমাতি কাণ্ড ঘটেছিল তখন। গত কয়েক বছর ধরে নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তি না হওয়া ও রেকর্ড সংখ্যক শিক্ষার্থী পাস করায় এ সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়া, রাজধানী ও বিভাগীয় শহরগুলোতে নামী কলেজগুলোতে ভর্তির স্বপ্ন পূরণ হবে না অনেকের। উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির সুযোগ আছে এমন সরকারি কলেজের সংখ্যা ২৪০টি। এগুলোতে আসন রয়েছে ৯২ হাজার ৩৮৬টি। আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে আসন আছে তিন লাখ ৭০ হাজার ৯১৪টি। বরাবরের মতো এবারও ভাল ফল করা শিক্ষার্থীরা রাজধানীমুখী হবে। ফলে রাজধানীর নামী কলেজগুলোতে এবারও ভর্তি হতে পারবে না ভাল করেও। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজধানীতে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তির সুযোগ আছে ১৩৫টি কলেজে। আর এসব কলেজে মোট ভর্তি করা হবে ৩৯ হাজার ৫১৯ শিক্ষার্থীকে। আর যেসব কলেজে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীরা হুমড়ি খেয়ে পড়বে তারমধ্যে নটরডেম কলেজে আসন রয়েছে ২১৪০টি, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৯৯০টি, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬৫০টি, ঢাকা কলেজে ১১০০টি, হলিক্রস কলেজে ৪৯০টি, ঢাকা কমার্স কলেজে ৯০০টি, গুলশান কমার্স কলেজে ৫৫০টি, সরকারি বিজ্ঞান কলেজে ৪৭৫টি, বদরুন্নেসা কলেজে ৮২০টি, ঢাকা সিটি কলেজে ১১৮০টি, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে ৪৫৫টি আসন রয়েছে। এছাড়া, লালমাটিয়া গার্লস কলেজে ৬১৫টি, মতিঝিল মডেল হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬৫০টি, ঢাকা বিজ্ঞান কলেজে ৩৭০টি, বিএফ শাহীন কলেজে ৬০৬টি, তেজগাঁও কলেজে ৪০২টি, শেখ বোরহান উদ্দিন কলেজে ২৫০টি, রাইফেল পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৫০০, অগ্রণী স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১৯৮টি, সরকারি গার্হস্থ্য অর্থনীতি কলেজে ১৪০টি, নবকুমার ইনস্টিটিউটে ১০০, এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুল অ্যান্ড কলেজে ১০৩টি, সরকারি বাঙলা কলেজে ৯৭২টি, মোহাম্মদপুর কেন্দ্রীয় ইউনিভার্সিটি কলেজে ২০৭টি, মোহাম্মদপুর প্রিপারেটরি গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ২০৯টি, সেন্ট যোসেফ স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৭০টি, নিউ মডেল ডিগ্রি কলেজে ২১৪টি, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৬০টি, সিদ্ধেশ্বরী কলেজে ৬৭১টি, সিদ্ধেশ্বরী গার্লস কলেজে ৬৫১টি, শেরেবাংলা বালিকা স্কুল অ্যান্ড কলেজে ৩০৯টি, সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে ১৪৮৫টি ও ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজে ৫১৪টি আসন রয়েছে।