এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর ২০ জন মন্ত্রী এখন ঢাকায়। রাজধানীতে অনুষ্ঠেয় তিন দিনের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে অংশ নিতে এসেছেন তারা। সরকারের সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও ইউনেস্কো যৌথভাবে সম্মেলনটির আয়োজন করেছে। আজ বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠানটির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকছেন- জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা- ইউনেস্কো’র ইরিনা বোকোভা। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ওই সম্মেলনে ৩৩ দেশের প্রতিনিধি দল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে ২০টি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন মন্ত্রী বা মন্ত্রী পদমর্যাদার কর্মকর্তা। সূত্র জানায়, আফগানিস্তানের তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী ড. সাইয়্যেদ মাখদুম রাহিনের নেতৃত্বে দেশটির প্রতিনিধি দলে রয়েছেন মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা এবং গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব। ভুটানের স্বরাষ্ট্র ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী লিয়োনপো মিনজুর দোরজি ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। ব্রুনাই দারাস সালামের সংস্কৃতি, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক মন্ত্রী হাজাইর আবদুল্লাহ নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলে। ইরানের সংস্কৃতি মন্ত্রী ড. সাইয়্যেদ মোহাম্মদ হোসাইনি নেতৃত্ব দিচ্ছেন দু’ সদস্যের প্রতিনিধি দলে। কাজাখস্তানের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির সংস্কৃতি ও তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বুরিবায়েভ। কিরিবাতি’র ভাইস প্রেসিডেন্ট কেইমা ওনোরিও এসেছেন দেশটির তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে। মালদ্বীপের পর্যটন, শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবদুল গফুর আহমেদ আদিব রয়েছেন তার দেশের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে। তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছেন মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উইলবার হাইনে। নেপালের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সাতায় মোহন যোশী এসেছেন। এসেছেন পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সামিনা খালিদ গোর্কি। পালাউ’র প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফস্টিনা কে রেহুহার মারুগ। পাপুয়া নিউগিনি’র তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে এসেছেন দেশটির শিল্প, সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী বেনজামিন পোহিলিপ এমপি। সামোয়া’র শিক্ষা, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিমন্ত্রী মাগেলে মাউইলিউ মাগেলে এসেছেন প্রতিনিধি দলের নেতা হিসেবে। সলোমন দ্বীপপুঞ্জের সংস্কৃতি ও পর্যটনমন্ত্রী সামুয়েল মানেতোয়ালি তিন সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে রয়েছেন। শ্রীলঙ্কার জাতীয় ঐতিহ্য বিষয়ক মন্ত্রী জগৎ বালসুরিয়া এবং থাই সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা সাবিত্রী সুয়ানসাথিট এসেছেন নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধি দল নিয়ে। পূর্ব তিমুরের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা নুনো ভাসকো দা সিলভা মিরান্ডা ডেওলিভেইরা ৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। টুভালু’র স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পেলোনিকে তেকিনেনে ইসাইয়া এবং ভিয়েতনামের সংস্কৃতি, ক্রীড়া ও পর্যটনমন্ত্রী লি খান হাই এসেছেন নিজ নিজ প্রতিনিধি দল নিয়ে। মন্ত্রীরা অংশ নিতে না পারলেও উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল পাঠিয়েছে ভারত, জাপান, কম্বোডিয়া, চীন, কুক দ্বীপপুঞ্জ, ফিজি, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মঙ্গোলিয়া, টোঙ্গা, ভানুয়াতু, মিয়ানমার ও ফিলিপাইন। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব সুরাইয়া বেগম এনডিসি মানবজমিনকে জানিয়েছেন, প্রতিবেশী দেশ ভারত ছাড়া সব দেশের আমন্ত্রিত অতিথিরা ইতিমধ্যে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। গতকাল বিকালে এসেছেন ইউনেস্কো’র মহাপরিচালক। আজ অনুষ্ঠানের আগেই জেট এয়ারওয়েজের ফ্লাইটে ভারতের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকা পৌঁছবে। তথ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আবুল কালাম আজাদ গণমাধ্যমের সঙ্গে এক সভায় অনুষ্ঠানের সাফল্য কামনা করে বলেন, এর মাধ্যমে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোর সাংস্কৃতিক বন্ধন জোরদার করার ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উন্নয়নে নব দিগন্ত উন্মোচন হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে এ সম্মেলন ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও বিকাশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ইউনেস্কো কর্তৃক গৃহীত ‘কনভেনশন অন দ্য প্রোটেকশন অ্যান্ড প্রমোশন অব দ্য ডাইভারসিটি অব কালচারাল এক্সপ্রেশনস’, ২০০৫ অনুস্বাক্ষরের হার বৃদ্ধিতে ঢাকায় অনুষ্ঠেয় সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য সম্মেলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশা করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী। ইউনেস্কো’র এ কনভেনশনে এ পর্যন্ত বাংলাদেশসহ ১২৩টি দেশ অনুস্বাক্ষর করে। এর মধ্যে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৪৪ দেশের মধ্যে মাত্র ১২ দেশ অনুস্বাক্ষর করেছে। মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের তরফে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ৪৩টি দেশকে এ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যার মধ্যে ৩৩টি দেশ প্রতিনিধি পাঠিয়েছে। তিনদিনের আন্তর্জাতিক এ সম্মেলনে বিদেশী অতিথিদের পাশাপাশি দেশের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য বিষয়ে বিশেষজ্ঞ ও বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বরা অংশ নেবেন। উদ্বোধনী পর্ব এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে দেশের বরেণ্য শিল্পীদের অংশগ্রহণে বৈচিত্র্যপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে। উদ্বোধনী ছাড়া সব অনুষ্ঠান হবে হোটেল রূপসী বাংলায়।